মিরাজ মোহাইমেন
আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের উপন্যাস ভাবনা
একটি তথ্য হাজির করে এ লেখা বিনির্মিত হচ্ছে, ১৯৯৪ সালে কলকাতায় বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশন আয়োজিত সাহিত্য সভায় বাংলা সাহিত্যের ভাষা নিয়ে একটা বিতর্কের সূত্রপাত হয়। সেখানকার বাঙালি সাহিত্যিক সম্প্রদায়, বাংলাদেশের কিছু লেখক-কবি বাংলাদেশ ও পশ্চিম বাংলার ভাষারীতির মধ্যে কোনো পার্থক্য থাকা উচিত নয় বলে মত প্রকাশ করেন। আখতারুজ্জামান ইলিয়াস ও হুমায়ূন আহমেদ-এর বিপক্ষে মত দেন। আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের বক্তব্য নিয়ে তুমুল বিতর্কের সূত্রপাত ঘটে। সেখানাকার প্রভাবশালী একটি পত্রিকা সেই রাতে সাহিত্য সভার ঘটনাকে কেন্দ্র করে আখতারুজ্জামান ইলিয়াসকে ‘বর্জন’ করে সবাইকে গ্র্যান্ড হোটেলে ডিনারে নিমন্ত্রণ করে। ঘটনার আকস্মিকতায় আখতারুজ্জামান ইলিয়াস তাঁর বিখ্যাত উপন্যাস "খোয়াবনামা" লেখার সিদ্ধান্ত নেন।
—এই হল আমাদের আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, যিনি প্রখর ব্যক্তিত্বের কারণে কখনও মাথা নোয়াননি। তার উপন্যাস ভাবনা বিভিন্নজন বিভিন্ন রকমভাবে মূল্যায়ন, পাল্টা মূল্যায়ন করেছেন। বতর্মান লেখায় কয়েকজন লেখকের মূল্যায়ন থেকে দেখাবার চেষ্টা করব তিনি উপন্যাস নিয়ে কী ধরনের চিন্তা-ভাবনা করতেন।
সাধারণত উপন্যাসে ধরে নেওয়া হয় যে, দু’ ধরনের জিনিস থাকবে বা থাকা জরুরি একটা হচ্ছে ন্যাচারালিজম যেটা খুবই রোমান্টিক। আরেকটা হচ্ছে রিয়েলিজম বা বাস্তববাদ। এই বাস্তববাদের কাজ হচ্ছে নিষ্পৃহ দৃষ্টিতে বাস্তবতাকে ব্যাখ্যা করা, যা লেখক দেখছেন কেবলই তা-ই আনা। আর ন্যাচারারিজমের কাজ হচ্ছে, বাস্তবতার অতীত কোনো ভাবের প্রকাশ ঘটানো। অর্থাৎ যা নেই বাস্তবতার মধ্যে সেটা কল্পনা করা, সেটা ভীষণভাবে রোমান্টিক। এই দু’য়ের মধ্যে তুলনা করে লুকাস গিয়র্স বলছেন, উপন্যাসকে বস্তবাদী হতে হবে। হতে হবে ইতিহাসবাদী আর উপন্যাস যেহেতু বুর্জোয়া সমাজের ফসল অর্থাৎ ব্যক্তির বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে উপন্যাসেরও বিকাশ হয়; সে ক্ষেত্রে ব্যক্তির পতনের অর্থাৎ বুর্জোয়া সমাজের পতনের পর উপন্যাসেরও পতন হতে পারে। এমনই চেতনার ধারক ছিলেন ইলিয়াস।
লেখক আনিসুল হক তার সম্পর্কে মূল্যায়ন করতে গিয়ে লিখছেন, কথা সাহিত্য নিয়ে তিনজন বাঙালি লেখকের ভাষ্য, আমাদের কালে, আমার কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হয়। হাসান আজিজুল হক, দেবেশ রায় আর আখতারুজ্জামান ইলিয়াস। (উপন্যাস চিন্তা, সময় ও সমকাল)
দেবেশ রায়ের উপন্যাস-ভাবনা থেকে যা বোঝা যায়, উপন্যাসের মূলে থাকবে ব্যক্তিমানুষ, কিন্তু সেই ব্যক্তিমানুষের জীবন কীভাবে রাষ্ট্র কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে, সেটা হবে উপন্যাসের একটা অপরিহার্য উপাদান। এবং এ জায়গাটায় দেবেশ রায় মনে করেন, আমাদের উপন্যাসে একটা দীনতা আছে : আমাদের উপন্যাসে সমাজ আছে, কিন্তু রাষ্ট্র অনুপস্থিত।
আখতারুজ্জামান ইলিয়াস একটা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ কথা বলেছেন, কথাসাহিত্যের সূত্রপাত মানুষ যখন ব্যক্তি হয়ে উঠছে, তখন থেকে।
আখতারুজ্জামান ইলিয়াস আর দেবেশ রায় দু’জনেরই আফসোস, বাংলা কথাসাহিত্যের শুরুতে আলালের ঘরের দুলাল বা হুতোম প্যাঁচার নকশা জাতীয় লেখাগুলো যে ধারার প্রবর্তন করেছিল, তা মরুপথে হারিয়ে গেছে। তারা দু’জনেই ডন কুইকসোট ও গালিভার’স ট্রাভেলের উদাহরণ স্মরণ করেন সপ্রশংস ভাষায়।
আখতারুজ্জামান ইলিয়াস বলেন, ‘আলালের ঘরের দুলাল, হুতোম প্যাঁচার নক্শা, সধবার একাদশী কী বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রো- হাঁটি পা পা করার পর উপন্যাস জোর কদমে চলতে শুরু করতে না করতেই ওই পা দিয়ে সমাজকে সে প্রায় ঠেলে ফেলতে উদ্যত হয়েছে-’ (উপন্যাস ও সমাজ বাস্তবতা, সংস্কৃতির ভাঙা সেতু)।
দেবেশ রায় বলেন, ‘বাংলা সাহিত্যের ছোট সীমায় নববাবু, নববিবি, আলাল-দুলাল, নিমচাঁদ, বুড়ো শালিখ ইত্যাদি অনেক দূর এসেছিল- প্রায় যেমন ইউরোপীয় পিকারস্কেরই নায়ক। কিন্তু এরা টিকতে পারল না। কমলাকান্তে এরা সবাই এক হয়ে গিয়ে বাংলা কাহিনী থেকে চলে গেল।’
লেখক মাসুদুজ্জামানের দ্বারস্থ হয়ে আমরা খানিকটা এগিয়ে গিয়ে দেখতে পারছি আরও কিছু প্রয়োজনীয় পর্যবেক্ষণ। তিনি বলছেন, নিঃসন্দেহে জীবনের ছবি নয়, জীবনাভিজ্ঞানই যে উপন্যাসের মর্মকথা, সে কথা আমাদের শুনিয়েছেন আধুনিক নন্দনতাত্ত্বিক ইতালির উমবার্তো একো। কীভাবে এই অভিজ্ঞানকে ছুঁয়ে দেওয়া যাবে?
আমাদের আরেক প্রধান কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক বলেছেন, ‘একমাত্র সজ্ঞান ও সচল প্রয়াস ছাড়া’ অর্জন করা যাবে না সেই শিল্পসিদ্ধি। ইলিয়াসের ছিল এই সচেতন অভিপ্রায়— বিস্ময় এইখানেই। দু’টি উপন্যাসেই তার প্রতিভার অবিস্মরণীয় বিচ্ছুরণ ঘটল কী বিষয়বস্তুতে, কী শৈলীসম্পাতে। চলমান রাজনীতির ধারাপ্রবাহের পটভূমিতে ব্যক্তির অস্তিত্ব-মোথিত এমন গাঁথা তিনি রচনা করলেন, যা শুধু বাংলা সাহিত্যেই অনন্য হয়ে ওঠেনি, বিশ্বসাহিত্যেরও হয়ে উঠেছে প্রতিস্পর্ধী।
প্রথমেই ইলিয়াসের এই উপন্যাস প্রসঙ্গ।
তিনি তার নিবন্ধে আরও বলছেন, কী রকম হওয়া উচিত সমকালীন উপন্যাস? অন্যান্য শিল্পের মতো একক কোনো ব্যাখ্যা দিয়ে এর প্রকৃত চিহ্নায়ন সম্ভব নয়। তবু মিলান কুন্ডেরা একবার বলেছিলেন, উপন্যাসে “ব্যক্তির আত্মসত্তার অন্তর্গত জীবনের উন্মোচন’ ঘটিয়ে থাকেন ঔপন্যাসিক। ইলিয়াসও এটা জানতেন, ‘কথাসাহিত্য চর্চার সূত্রপাত মানুষ যখন ব্যক্তি হয়ে উঠছে ও আর দশজনের মধ্যে বসবাস করেও ব্যক্তি যখন নিজেকে ‘একজন’ বলে চিনতে পারছে তখন থেকে।”
ইলিয়াসও খুঁজছিলেন এই ব্যক্তিকে। আখ্যানের মধ্য দিয়ে গেঁথে তুলতে চাইছিলেন ‘ব্যক্তির অস্তিত্বের বোধ আর প্রাতিস্বিকতা’কে। কিন্তু ফ্রেডেরিক জেমিসন যেমন বলেছেন, পুঁজিবাদী বিশ্বরাষ্ট্র পুঁজিবাদের অন্তিমপর্বে ‘ব্যক্তিকে আমুণ্ডু গিলে খেয়ে ফেলেছে,’ তখন সেই ব্যক্তির ওপর ভর করে উপন্যাস লেখা হবে কী করে? ইলিয়াসের উপন্যাস আলোচনা প্রসঙ্গে হাসান আজিজুল হক জানাচ্ছেন, এই শূন্যতার মাঝে উপন্যাস রচনায় সাহিত্যতত্ত্ব যেমন আখতারুজ্জামান ইলিয়াসকে সাহায্য করেনি, তেমনি ‘উপন্যাসের বুর্জোয়া মডেল’ও নয়। বাংলা ঔপন্যাসিকদের কাছ থেকেও কোনো সাহায্য পাননি তিনি। উপন্যাস রচনার বিকল্প পথের ধারণাটা তাঁর এসেছিল লাতিন আমেরিকা আর আফ্রিকার কথাসাহিত্য থেকে ‘চিলেকোঠার সেপাই’ রচনার সময়ে যেমন, তেমনি খোয়াবনামার সময়েও।
এই আখ্যানদ্বয়ে পশ্চিমী ঘরানার ব্যক্তি নয়, ইতিহাস নয়, জনপদই হয়ে উঠল উপন্যাসের নায়ক। হাসান আজিজুল হকের ভাষায়, “ব্যক্তি নয়, উপন্যাস থেকে ধাক্কা দিয়ে ব্যক্তিকে সরিয়ে দিয়ে ইতিহাস সামনে চলে আসছে, ইতিহাসই ব্যক্তি। একটা গোটা জনপদ তার ক্ষয় ধস নামহীনতা ইতিহাসহীনতা নিয়ে উপন্যাসের নায়ক উপন্যাসের চেনা সত্তাটাকে ছোবড়ার মতো ছুড়ে ফেলে দিয়ে নতুন একটা পথ বের করতে পেরেছে।”
ইউরো-মার্কিন উপন্যাসের পুরোনো ধারাকে এভাবেই অস্বীকার করেছিলেন ইলিয়াস, বিশেষ করে খোয়াবনামায় : “সে কি বাংলার এই প্রাচীন ভূমি, তার ইতিহাস, তার স্মৃতি-বিস্মৃতি নয়? তার ভাঙাগড়ার অবিরল প্রক্রিয়ার ভেতর জনপদগুলো সেই সব জীবন্ত জনপদ, সেই সব নিশ্চল জনপদ, সেই সব ইতিহাসহীন বা ইতিহাসবিচ্যুত জনপদ, মানুষের টাটকা রক্ত, বাসি রক্ত। এই বাস্তব আর ইতিহাস মিলে লিখিত হল খোয়াবনামা। কোনো মডেল অনুসৃত হয়েছে দেখতে যাওয়া বিড়ম্বনা। আর কে না জানে এই কালের শ্রেষ্ঠ উপন্যাসগুলো ‘খোয়াবনামা’ মানের। নোবেল পুরস্কার-টুরস্কার কোনো ব্যাপারই নয়।” (হাসান আজিজুল হক)
খোয়াবনামা আর চিলেকোঠার সেপাই এই প্রেক্ষাপটেই হয়ে ওঠেছে এপিক। আখ্যানের বুনন আর ভাষারীতিই যে কথাশিল্পের মূলকথা নয়, সে তো অনেক আগেই জেনে গেছি আমরা জেমস জয়েসের সূত্রে। সমকাল কীভাবে জীবন্ত হয়ে উঠতে পারে, দেখিয়ে গেছেন জয়েস।
এ কারণেই চিলেকোঠার সেপাইয়ের বয়ানভঙ্গি ও চরিত্রচিত্রণের সঙ্গে জয়েসের ইউলিসিসের মিল খুঁজে পাওয়া যায় এর ডিটেল্স ও মনোজাগতিক জৈবরসায়নে। এরপর মার্কেজের মধ্য দিয়ে কিংবদন্তী আর ইতিহাস কীভাবে আঁশটে নোনাধরা অতীত থেকে ওঠে এসে সমকালকে স্পর্শ করতে পারে, সেও তো জানা হয়ে গিয়েছিল।
খোয়াবনামায় তো ঘটল এই বয়ানভঙ্গি ও আখ্যানগঠনের মৌলিক দ্যুতিময় বিচ্ছুরণ। এ কারণেই আমরা অবাক হই না যখন শওকত আলীর স্মৃতিচারণায় শুনি, জয়েস ছিলেন ইলিয়াসের একজন প্রিয় লেখক, তেমনি ছিলেন মার্কেজও। অতীত তাই মৃত কিছু নয়, অতীত ‘সমকালীন সমাজের অবস্থান ও বিকাশকে’ যেমন বুঝতে সাহায্য করে’, তেমনি ‘ভষ্যিতের সঙ্গে যোগাযোগ’ ঘটাতে সক্ষম হয়। এ রকমটাই ভাবতেন ইলিয়াস।
ইলিয়াস এভাবেই ইতিহাস-মোথিত সময়, মানুষ আর সমাজকে উপজীব্য করেছেন তাঁর উপন্যাসে। তিনি যথার্থই জানতেন ঔপন্যাসিকের এটাই মূল কাজ, “সমাজের বাস্তব চেহারা তাঁকে তুলে ধরতে হয় এবং শুধু স্থিরচিত্র নয়, তার ভেতরকার স্পন্দটিই বুঝতে পারা কথাসাহিত্যিকের প্রধান লক্ষ্য।” কিন্তু কীসের টানে এই কাজটি করবেন তিনি? লক্ষ্য সেই ‘ব্যক্তির স্বরূপসন্ধান’ আর সমকালকে এই সময়ের পাঠকের কাছে মূর্ত করে তোলা। তবে ব্যক্তির যে বিকাশ ও পরিণতি তাঁর অন্বিষ্ট ছিল, তার সবই ঘটেছে ‘ব্যক্তিপ্রেক্ষিত, সমাজ, রাষ্ট্র ও রাজনীতি’র প্রেক্ষাপটে।
ইলিয়াস মনে করেছেন, যে-সমাজ অনড়, অচল, স্থবির, গতি নেই, সেই ধরনের স্পন্দনহীন সমাজের রূপকার নন ঔপন্যাসিক। সমাজ উপন্যাসে ‘রক্তমাংস নিয়ে হাজির হয়’ কিনা, আর ব্যক্তি সেই সমাজের মধ্যে ‘উপযুক্ত প্রেক্ষিত পায়’ কিনা, সেই দিকগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সমাজপ্রেক্ষিত নির্ভর ব্যক্তির এই গতিময় ডিটেলসমৃদ্ধ জীবনযাপনের কথা না থাকলে কোনো উপন্যাস সম্পূর্ণতা পায় না, এ রকমই ভাবতেন ইলিয়াস। আর এই ভাবনার প্রেক্ষাপটেই তিনি মনে করেছিলেন মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ই ছিলেন ‘আন্তর্জাতিক’ মাপের কথাসাহিত্যিক।
লক্ষণীয়, ইলিয়াসের চিলেকোঠার সেপাই ও খোয়াবনামায় বিভিন্ন চরিত্রের সামাজিক জীবন এবং ব্যক্তির জীবনযাপনের যে অনুসূক্ষ্ম ডিটেলসমৃদ্ধ গতিশীল বর্ণনা পাই, তার পূর্বসূত্র শুধু খুঁজে পাওয়া যায় মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মধ্যে। এরই সঙ্গে তাঁর উপন্যাসে এসে মিশেছিল মার্কেজের মহাকাব্যিক মেজাজ। কিংবদন্তী, লোককথা, লোকগান, প্রবাদ-প্রবচন, পুরাণ আর সমাজের অনুপুঙ্খ বর্ণনার সঙ্গে অবিমিশ্র হয়ে গিয়েছে ইতিহাস ও রাজনীতি।
এই প্রেক্ষাপটে ইলিয়াস মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে যে কথা বলেছিলেন, তা তার উপন্যাস সম্পর্কেও বলতে পারি আমরা : “নিজস্ব প্রকরণ তিনি অর্জন করেছিলেন, ভাষার বুনট, চরিত্রসৃষ্টি, মনোবিশ্লেষণ, মানুষের মধ্যে বিভিন্ন সম্পর্ক যাচাই করা, সমাজের সঙ্গে ব্যক্তি ও ব্যক্তির সঙ্গে ব্যক্তির সম্পর্ক সূক্ষ্মভাবে পর্যবেক্ষণ করা প্রভৃতি বিষয়ে তাঁর উৎকর্ষ যে-স্তরে পৌঁছেছিল, তার সাহায্যে একজন শিল্পী আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠা পেতে পারেন।”
এই সূত্রেই মনে পড়ছে হাসান আজিজুল হকের সেই কথাটিও, ইলিয়াসের উপন্যাস প্রকৃতপক্ষেই বিশ্বমানের, নোবেল পুরস্কার পেয়ে থাকেন যে সব কথাসাহিত্যিক, তিনি ছিলেন সেই মাপেরই লেখক।
মানুষকে তিনি গভীরভাবে ভালোবাসতেন, তাঁর রচনায় এই বিষয়টি সুস্পষ্ট। ব্যক্তির জীবনপরিসরকে কিংবদন্তী, ইতিহাস আর সমকালের এমন অভাবনীয় পটে মেলে ধরেছেন যে তার প্রতিটি রচনাই হয়ে উঠেছে আমাদের জীবনের অস্তিত্বগাথা, একই সঙ্গে বর্তমান ও ভবিষ্যতের মহাকাব্যিক ডিসকোর্স। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের স্থান যে শীর্ষে অধিষ্ঠিত থাকবে, আমার অন্তত তাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই।
আখতারুজ্জামান ইলিয়াস নিঃসন্দেহে আমাদের সেই ঔপন্যাসিকদের একজন, যিনি তার লেখনির মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে গেছেন। আর এটি সংখ্যার বিচারেই নয়, তার লিখনশৈলী স্বাতন্ত্র্য বৈশিষ্ট্যের ও বিশ্বসাহিত্য সভায় যা আসন গেড়ে নিতে পারে আপন মহিমায়। তরুণ সভায় তার সম্পর্কে নিবেদন করা যায়, আমাদের কর্তব্য হবে তাকে যথার্থ মূল্যায়ন করা। তাঁর সাহিত্যচিন্তাকে মানুষের মাঝে সঞ্চারিত করা।
লেখক : প্রাবন্ধিক