জাতীয় পার্টিকে (জাপা) নির্বাচনে রাখতে প্রার্থীদের দেওয়া হয়েছে লাখ থেকে কোটি টাকা। ১০ লাখ থেকে কোটি টাকা পর্যন্ত সরকারি একটি সংস্থার মাধ্যমে প্রার্থী ভেদে বিলি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। জাপার একাধিক নেতা দ্য রিপোর্টকে এ তথ্য জানিয়েছেন ।

জামালপুর-৪ আসনের প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার মামুনুর রশিদ জোয়ার্দার শনিবার সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে টেলিফোনে দ্য রিপোর্টের কাছে টাকার পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘ভাই আমি ২০ লাখ পাইছি। এখন নির্বাচনী কাজে ব্যস্ত। আপনি আমার জন্য দোয়া করবেন।’

প্রার্থীদের মধ্যে টাকা বিলির বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ থেকে বিনাপ্রতিন্দ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত জাপার যুগ্ম-মহাসচিব লিয়াকত হোসেন খোকা শনিবার দুপুরে রওশন এরশাদের বাসভবনের নিচে বলেন, ‘নির্বাচন হলে তো প্রার্থীদের দল থেকে টাকা দেওয়া হয়। এটা নির্বাচনী খরচ।’

একই সময় লিয়াকত হোসেন খোকার সঙ্গে থাকা জাপার যুগ্ম-দফতর সম্পাদক আবুল আহসান জুয়েল দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘আমি শুনেছি প্রথমে ১০ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। পরে আরও ১৫ লাখ করে টাকা দেওয়ার কথা ছিল। তবে এই টাকা অনেকেই পাননি।’

তিনি দাবি করেন, ‘নোয়াখালী ও গোপালগঞ্জ এলাকার জাপার প্রার্থীরা কোনো টাকাই পাননি।’

এর সত্যতা নিশ্চিত করে ফেনী-১ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এরশাদের উপদেষ্টা রিন্টু আনোয়ার। তিনি শনিবার সন্ধ্যা ছয়টার দিকে দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘প্রথমে রওশন এরশাদের টাকা দেওয়ার কথা ছিল। উনি টাকা দেননি। পরে শুনলাম অন্য মাধ্যম থেকে আসবে। সে মাধ্যমের টাকাও আমি পাইনি। অন্য কেউ পেলে পেতে পারে।’

জাপা সূত্রে জানা গেছে, কুমিল্লা-১ আসনের আবু জায়েদ আল মাহমুদ মাখন, জামালপুর-৪ আসনের ইঞ্জিনিয়ার মামুনুর রশিদ জোয়ার্দার, কুমিল্লা-৪ আসনের অধ্যাপক ইকবাল হোসেন রাজু, গাজীপুর-৪ আসনের ড. মিয়া মো. আনোয়ার হোসেন, ব্রাহ্মণবাড়ীয়া-১ আসনের রেজোয়ান আহমেদ, ব্রাহ্মণবাড়ীয়া-২ আসনের জিয়াউল হক মৃধা, ব্রাহ্মণবাড়ীয়া- ৪ আসনের কাজী মামুনসহ জাপার ৬৫ প্রার্থী যারা প্রতিন্দ্বন্দ্বিতা করছেন তাদের মধ্যে ৩০ থেকে ৩৫ জন প্রার্থীকে সরকারের একটি সংস্থা অর্থ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন জাপা নেতা আবুল আহসান জুয়েল। তবে টাকা রওশন এরশাদের সম্মতিতেই বিলি হয়েছেও বলে দাবি করেন এ নেতা।

জাপার ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল হামিদ ভাসানী বলেন, ‘টাকা সরকারের পক্ষ থেকেই দেওয়া হয়েছে। একটি সংস্থা সরাসরি প্রার্থীদের হাতে ও অ্যাকাউন্ট পে চেকে টাকা দিয়েছেন।’

এ দিকে প্রার্থীরা টাকা পেলেও সেই টাকা কর্মীরা না পাওয়ায় অনেক আসনে অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটছে। জাপা সূত্রে জানা গেছে, কুমিল্লা-১ (দাউদকান্দি) আসনে জাপার প্রার্থী আবু জায়েদ আল মাহমুদ মাখন নিজে প্রথম দফায় ১০ লাখ ও পরে আরও ১৫ লাখ টাকা পেয়েছেন। তিনি প্রাপ্ত টাকা কর্মীদের না দেওয়ায় দাউদকান্দি উপজেলা জাপা, যুব সংহতি ও ছাত্র সমাজ তাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে।

এ বিষয়ে আবু জায়েদ আল মাহমুদ মাখন শনিবার সন্ধ্যা ছয়টা ২৭ মিনিটে দ্য রিপোর্টকে টেলিফোনে বলেন, ‘আমার সামনে শত শত নেতাকর্মী। আপনি শুধু জেনে রাখেন আমি যা পেয়েছি তা ভেরি পুওর। এটা সবার সামনে বলতে পারছি না।’

তবে জাতীয় ছাত্র সমাজ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সচিব ও কুমিল্লা-১ আসনের বাসিন্দা ইফতেখার হাসান দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘একটি সংস্থা মাখন ভাইকে দুই দফায় টাকা দিয়েছে। কিন্তু উনি একটি টাকাও কর্মীদের পেছনে খরচ করেন না। উনি সারাদিন বসে থাকেন সুবিদ আলী ভূঁইয়ার বাসায়।’

জামালপুর-৪ আসনের প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার মামুনুর রশিদ জোয়ার্দারের বিরুদ্ধেও টাকা পেয়ে কর্মীদের জন্য খরচ না করার কথা উঠেছে। জামালপুর-৪ আসনে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য ও ছাত্র সমাজের যুগ্ম-আহ্বায়ক মোখলেসুর রহমান বস্তু দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘টাকা তো উনি পেয়েছেন। আমাদের অন্যান্য প্রার্থীরা টাকা খরচ করছেন আর আমরা খরচ করতে পারছি না। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে টাকার জন্য রাজনীতি করি না।’

অভিযোগের বিষয়ে ইঞ্জিনিয়ার মামুনুর রশিদ জোয়ার্দার বলেন, ‘আমার পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। আমি গরিব মানুষ টাকা পাব কই। যা দিছে তাই দিয়েই চলছি।’

গাজীপুর-৪ আসনের প্রার্থী ড. মিয়া মো. আনোয়ার হোসেন দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘রাজনীতি হল হাক্কুল ইবাদ। আমি মানুষের সেবা করার জন্য রাজনীতি করি। আমার টাকা যাকাত দেওয়া হালাল। হালাল টাকা ও যাকাতের টাকা আমি খরচ করছি। আমার কোনো কালো টাকা নেই। জনগণ ভোট দিলে সেবা করব, না দিলেও জনতার পাশেই থাকব।’

ব্রাহ্মণবাড়ীয়া-২ আসনের প্রার্থী জিয়াউল হক মৃধা শনিবার সন্ধ্যা ছয়টা ৩৫ মিনিটে দ্য রিপোর্টকে বলেন,‘ মানুষ কোটি কোটি টাকা খরচ করছে। এ সব বিষয় নিয়ে কথা না বলাই ভালো।’

নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ বলেন, ‘নির্বাচনের সময় টাকা ছড়ানো আচরণবিধির লঙ্ঘন। আমাদের কাছে লিখিত অভিযোগ এলে আমরা ব্যবস্থা নেব।’

(দ্য রিপোর্ট/সাআ/এইচএসএম/এসএ/জানুয়ারি ০৪, ২০১৪)