আল হেলাল শুভ ও শামীম রিজভী, দ্য রিপোর্ট : ১৮ দলীয় জোটবিহীন দশম জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে ঢাকা-৬ আসনের বাসিন্দাদের মধ্যে তেমন উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা যায়নি। ভোটের আগের দিন শনিবার দুপুরে নির্বাচন প্রসঙ্গে ওই এলাকার ভোটাদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। ভোট নিয়ে কোনো আগ্রহ দেখাননি বেশিরভাগ ভোটার। আবার ভোট দিতে যাবেন বলেও জানিয়েছেন কোনো কোনো ভোটার।

রাজধানীর সুত্রাপুর, গেন্ডারিয়া, লালকুঠি, কোতোয়ালী, মালিটোলা ও বংশাল এলাকায় সরেজমিনে ভোটারদের সঙ্গে কথা বললে তারা দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদকের কাছে এ প্রতিক্রিয়া জানান।

বিএনপি জাতীয় নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায় এবং আওয়ামী লীগ থেকে মনোনীত প্রার্থী মিজানুর রহমান খান দিপু মারা যাওয়ায় ওই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন মাত্র ২ জন প্রার্থী। আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন সহিদুর রহমান সহিদ। অপর প্রার্থী হলেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশিদ।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ভোট নিয়ে জনগনের মধ্যে তেমন কোনো উৎসাহ নেই। ওই এলাকার কয়েকটি চায়ের দোকানে ভোটারদের কাছে নির্বাচন নিয়ে কথা বলতে চাইলে ভিন্ন ভিন্ন প্রতিক্রিয়া জানান। কয়েকজন ভোটার নির্বাচন নিয়ে মুখ খুলতে চাননি। অনেকেই নির্বাচন নিয়ে আতঙ্ক প্রকাশ করেছেন।

বংশাল এলাকার বাসিন্দা মাসুদুর রহমান দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘আপনার কি মনে হয় নির্বাচন হচ্ছে? কোথায় নির্বাচন হচ্ছে? নির্বাচনের আমেজ কই? এর থেকে ঠেলাগাড়ি ইউনিয়নের নির্বাচনেও বেশি আমেজ থাকে। যেখানে ভোটারদের স্বাধীনতাই নেই সেটা কিসের জাতীয় নির্বাচন।’

মালিটোলা এলাকার বাসিন্দা সেন্টু মিয়া দ্য রিপোর্টকে বলেন, দেশে এখন গণতন্ত্র নেই বললেই চলে। গণতন্ত্র পুরোপুরি প্রতিষ্ঠিত হতে আরো পাঁচ বছর লাগবে বলে অভিমত তার। যেদিন প্রশাসন নিরপেক্ষভাবে ও জনগণের জন্য কাজ করবে সেদিন গণতন্ত্র সুপ্রতিষ্ঠিত হবে বলেও মন্তব্য করেন এই ভোটার।

সেন্টু মিয়া আরো বলেন, ‘এ সব এলাকায় বেশিরভাগ মানুষ বিএনপি ও আওয়ামী লীগের সমর্থক। তবে বিএনপির সমর্থকই বেশি। এ আসন থেকে যদি বিএনপির কোনো প্রার্থী আসত তাহলে জিতে যেত। কিন্তু যে দুইজন প্রার্থী নির্বাচন করছেন তাদের মধ্যেই মনে হচ্ছে হতাশা বিরাজ করছে। নির্বাচনী প্রচারণার জন্য তাদের দেখা যায়নি। দেখা যাবে অর্ধেকেরও বেশি বিএনপি সমর্থিত ভোটাররা আগামীকাল ভোট দিতেই যাবে না।’

বংশাল থানার আওতাধীন ভোট কেন্দ্রগুলোর নিরাপত্তা সম্পর্কে জানতে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল কুদ্দুস ফকিরকে ফোন করলে তাকে পাওয়া যায় নি।

গেন্ডারিয়া এলাকার কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা এই প্রতিবেদককে জানান, নিজেদের এলাকার প্রার্থীকেই (সহিদুর রহমান সহিদ) ভোট দিতে আগ্রাহী তারা। বাইরের কোনো প্রার্থীকে তারা ভোট দিবেন না।

গেন্ডারিয়া হাইস্কুলের সামনে এক চায়ের দোকানে বসে ছিলেন আবুল খায়ের ও মোহাম্মদ শাহজালাল। এলাকার মানুষ ভোট দিবেন কি-না জানতে চাইলে তারা জানান, এই এলাকার মানুষের মধ্যে আওয়ামী-বিএনপি নিয়ে কোনো দ্বন্দ্ব নেই। বেশিরভাগ মানুষই ভোট দিতে যাবে।

ভোট দিতে যাবেন কি-না জানতে চাইলে আবুল খায়ের বলেন, ‘ভোট দিতে যাবো। আগে এই এলাকার সংসদ সদস্য ছিলেন মিজানুর রহমান দিপু। তিনি স্থানীয় হলেও বেশিরভাগ সময় এলাকার বাইরে থাকতেন। তাই এবার এলাকায় সুখে-দুঃখে পাশে পাব এমন একজনকে ভোট দিতে চাই।’

জাতীয় পার্টির প্রার্থীর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘শুনেছি ইনি ধানমন্ডিতে থাকেন। তাই আমাদের কোনো সমস্যায় আমরা তাকে পাশে পাব না।

গেন্ডারিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মেহেদী হাসান দ্য রিপোর্টকে বলেন, ভোট কেন্দ্রগুলোতে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। প্রতিটি কেন্দ্রে ৩২ জন পুলিশ ও আনসারকে এ দায়িত্বে রাখা হয়েছে।

কাঠেঁরপুল মোড়ে কথা হল প্রথমবারে মত ভোটার হওয়া কয়েকজনের সঙ্গে। নির্বাচন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তারা হতাশার কথা জানালেন। ওই এলাকার কলেজ ছাত্র মৃদুল বলেন, এখন তো জনগণের কোনো স্বাধীনতা নেই। নিরাপত্তার নামে পুলিশ যেভাবে মানুষকে হয়রানি করছে তাতে নির্বাচনের স্বাভাবিক পরিস্থিতি ব্যহত হচ্ছে। নির্বাচনকে ঘিরে জনগণের মধ্যে আতঙ্কও রয়েছে।

সুত্রাপুর এলাকার চা দোকানদার মনিরুল ইসলাম দ্য রিপোর্টকে বলেন, ভোট দিতে যাব না কেন, অবশ্যই যাব। তবে কাকে ভোট দেব তা নিয়ে এখনও সিদ্ধান্ত নেইনি।

সুত্রাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খলিলুর রহমান পাটোয়ারি দ্য রিপোর্টকে বলেন, ব্যালট বাক্স, পেপারসহ নির্বাচনী সকল সরঞ্জাম সকাল থেকে বিকেলের মধ্যে কেন্দ্রগুলোতে পৌছে দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রে নিরাপত্তার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ পুলিশ ও আনসার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। নিরাপত্তার এ বলয় ভোট গণনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।

(দ্য রিপোর্ট/এএইচএস-এসআর/এআইএম/জেএম/জানুয়ারি ০৫, ২০১৪)