ঢাকা-৭ আসনে ভোট জালিয়াতির পাল্টাপাল্টি অভিযোগ
আমান উল্লাহ আমান, দ্য রিপোর্ট : ঢাকা-৭ আসনের নির্বাচনী এলাকায় ভোটগ্রহণকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন ও বিদ্রোহী প্রার্থী হাজী সেলিম পরস্পরের বিরুদ্ধে ভোট জালিয়াতির অভিযোগ তুলেছেন। পারস্পরিক এ অভিযোগের কারণে এ নির্বাচনী এলাকার কয়েকটি কেন্দ্রে অস্থিরতা বিরাজ করছে।
হাজী সেলিম দাবি করছেন, তার সমর্থকদের ভোট দিতে দেওয়া হচ্ছে না।
অন্যদিকে ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিনের অভিযোগ হাজী সেলিমের সমর্থকরা প্রভাব খাটিয়ে জোরপূর্বক তার পক্ষে ভোট দেওয়াচ্ছেন।
এদিকে এ আসনের বেশকিছু কেন্দ্র ঘুরে দেখা যায়, বেশিরভাগ ভোটকেন্দ্র ভোটারশূন্য। চকবাজার ইসলামিয়া শিশু হাসপাতাল, লালবাগ রহমতউল্লাহ হাইস্কুল, আজিমপুর গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ভিকারুননিসা নূন স্কুলসহ বেশকিছু কেন্দ্রে ভোটারশূন্য। আতঙ্কে ঘর থেকে বের হচ্ছে না মানুষ। এমন কী এ সব এলাকার দোকানপাটও বন্ধ।
এর মধ্যে ইসলামিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে অন্যগুলোর তুলনায় কিছুটা ভোটার সমাগম রয়েছে সকাল থেকেই। এ কেন্দ্রকে ঘিরেই পারস্পরিক মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছেন দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর কর্মী ও সমর্থকরা।
ইসলামীয়া বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র পরিদর্শনে এসে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন, এ কেন্দ্রটি হাজী সেলিমের লোকজন নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছে। তারা আমার ভোটারদের ভেতরে ঢুকতে দিচ্ছে না।’
তিনি বলেন, ভোটকেন্দ্রের বাইরে হাজী সেলিমের লোকজন অবস্থান করে আছে, এখানে ভোটগ্রহণ ঠিকমতো হচ্ছে না। আপনারা ভেতরে গিয়ে পর্যবেক্ষণ করলে সার্বিক পরিস্থিতি উপলব্ধি করতে পারবেন।’
এদিকে বিদ্রোহী প্রার্থী হাজী সেলিম নিজ কেন্দ্র ইসলামীয়া বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে ভোট দিতে এসে ডা. মোস্তফা জালালের অভিযোগ অস্বীকার করেন।
সেলিম বলেন, মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন আমার সিনিয়র নেতা, তিনি আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করলেও আমি তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে পারি না। তিনি গত চার দিন ধরেই বিভিন্ন জায়গায় আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করছেন- যেগুলো সঠিক নয়। ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে এসে ভোট দিতে পারলে ও সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তিনি জিতবেন’ বলেও আশা প্রকাশ করেন আওয়ামী লীগের এই বিদ্রোহী নেতা।
এদিকে সকাল ৮টা ১০ মিনিটে চকবাজার শিশু হাসপাতালস্থ নিজ কেন্দ্রে ভোট দিয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন। এ সময় নিজে জয়ী হওয়ার ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
আর সকাল ১০টার দিকে বিদ্রোহী প্রার্থী হাজী সেলিম তার কেন্দ্র ইসলামীয়া বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে ভোট দেন। এ সময় বেশকিছু মহিলা ভোটার তার কাছে অভিযোগ করেন, তাদের ভোট দিতে দেওয়া হচ্ছে না। কারণ তাদের আইডি কার্ডের নম্বরের সাথে ভোটার তালিকার নম্বরের মিল পাওয়া যাচ্ছে না।
বিষয়টি হাজী সেলিম প্রিসাইডিং অফিসারের কাছে জানালে তিনি এটা দেখবেন বলে তাকে আশ্বস্ত করেন।
এ প্রসঙ্গে কানিজ ফাতেমা নামের একজন ভোটার অভিযোগ করেন, এ কেন্দ্রে নৌকা প্রতীক ছাড়া অন্য প্রতীকে ভোট দিতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। আমিসহ প্রায় ১০ নারী ভোট দিতে এলেও ঠুনকো অভিযোগে আমাদের ভোট দিতে দেওয়া হযনি। আমার ভোটার আইডি কার্ড আছে। ভোটার আইডি কার্ডের সাথে আমার ছবিও মিলেছে। কিন্তু নম্বর মিলছে না বলে প্রিসাইডিং অফিসার আমাকে ভোট দিতে দেয়নি।’
নারী ভোটারদের এ ধরনের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রিসাইডিং অফিসার শাহ্ মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, এ অভিযোগ সত্য নয়। জাতীয় পরিচয়পত্রের সাথে ভোটার তালিকার কোন সম্পর্ক নেই। ভোটার তালিকার সাথে ভোটার স্লিপের অনেকের নম্বর না মেলার কারণে এ সমস্যা হচ্ছে। তবে এ বিষয়টি আমি দেখছি। কোন অসামঞ্জস্য থাকলে সেটা আমি খতিয়ে দেখব।’
উল্লেখ্য, ইসলামীয়া বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে তিনটি কেন্দ্রে মোট ভোটারের সংখ্যা ৬ হাজার ৪০৪ জন। এ এলাকাটি হাজী সেলিমের নিজের এলাকা হওয়ায় এখানে ভোটগ্রহণ অন্য কেন্দ্রের তুলনায় একটু বেশিই পরিলক্ষিত হয়। এখানে ভোটারের উপস্থিতিও তুলনামূলক বেশি। সকাল থেকে এই তিন কেন্দ্রে ৫০০ থেকে ৫৫০টি ভোট পড়েছে বলে জানা যায়। অন্যদিকে চকবাজার শিশু হাসপাতালে মোট দুটি কেন্দ্রে ভোটার সংখ্যা ৬ হাজার ৪৭ জন।
দ্য রিপোর্ট/এই এইচ/এসআর/এমডি/শাহ/জানুয়ারি ৫, ২০১৪