দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : বাংলাদেশে ভোট মানেই উৎসব কিন্তু এবার দশম জাতীয় নির্বাচনে নেই কোনো উৎসবের আমেজ। রাজধানীজুড়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে। ঘর থেকে বের হচ্ছে না রাজধানীবাসী। উল্টো রাজধানীর ভোটকেন্দ্রের সামনে সকাল থেকেই ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। ঢাকার বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকা ঘুরে এমনই চিত্র দেখা গেছে।

অন্যসব দিনের সঙ্গে রবিবার সকালের চিত্রের কোনো মিল নেই। রাজপথে নেই কোনো যানবাহন। দেখা নেই পথচারীদের। সকাল ৯টায় মগবাজার এলাকায় দেখা গেছে ১-২টি চা দোকান ছাড়া আর কোনো দোকান খোলা নেই। মগবাজার মোড়ে নির্বাচন ও রাজধানীবাসীর আতঙ্কের বিষয় নিয়ে কথা হয় জামাল নামের এক যুবককের সঙ্গে। জামাল বলেন, ‘ভোর থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত লোকজনের কোনো আনাগোনা নেই। ২-১টি রিকশা চললেও যাত্রীর অভাবে তারাও হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘আজ ভোট। এমন ভোট এর আগে কখনো দেখিনি। তফসিল ঘোষণার পর থেকেই সহিংসতার কারণে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বাড়ছেই। তাই কেউ আর ঘর থেকে বের হচ্ছে না। আর যারা বের হচ্ছেন নিতান্তই বাধ্য হয়ে বের হচ্ছেন।’

মগবাজারেই কথা হয় রিকশাচালক জুবায়ের আহম্মেদের সঙ্গে। জুবায়েরের গ্রামের বাড়ি ফরিদপুর। তিনি মগবাজার আমতলা এলাকায় একটি গ্যারেজের রিকশা চালান। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট দিতে বাড়ি গিয়েছিলেন। কিন্তু এবার আর যাননি।

৪৫ বছরের জুবায়ের জানান, এর আগে এমন ভোট কখনো দেখেননি। ভোট মানেই একটা ভিন্ন আমেজ, উৎসব হয়। বাড়ি বাড়ি প্রার্থীরা ভোট চান। পাড়ায় মহল্লায় থাকে নির্বাচনী ক্যাম্প। চা-সিগারেট, বিড়ি থাকে উন্মুক্ত। এবার নির্বাচনের দিন মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছেন না।

তিনি আরো বলেন, ‘স্ত্রী ও মায়ের সঙ্গে সকালে কথা হয়েছে। পরিবারের সবাই খুব আতঙ্কে আছে। তারা রবিবার রিকশা চালাতে বারণ করেছে। কিন্তু রিকশা না চালাতে পারলে তো পেট চলবে না।’

এদিকে সকাল সাড়ে ৯টায় যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা মোড়ে শহীদ জিয়া স্কুলে গিয়ে দেখা যায় পুরুষ ভোটারদের লাইনে ২-১ জন ভোটার থাকলেও নারী লাইন একবারেই ফাঁকা। এ ছাড়া আশপাশের আরও কয়েকটি কেন্দ্র ঘুরে দেখা যায়, ভোটারবিহীন কেন্দ্রে প্রিসাইডিং অফিসার, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বসে আছেন। তবে কয়েকটি কেন্দ্রে ১৮ বছরের নিচে কয়েকজন ছেলেকে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।

এদিকে রাজধানীতে পুলিশের সামনেই ককটেল বিস্ফোরণ ঘটছে। রাজধানীর পুরান ঢাকা, মিরপুর ও খিলগাঁও এলাকায় সকাল থেকেই বিভিন্ন স্থানে ভোটকেন্দ্রের সামনে পুলিশের উপস্থিতিতেই ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। ভোটকেন্দ্রে ভোটাররা আসতে ভয় পাচ্ছে। তাদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এ কারণেই ভোটার উপস্থিতি কম বলে দ্য রিপোর্টের একাধিক প্রতিবেদক জানিয়েছেন। সর্বশেষ রাজধানীর আব্দুল্লাপুরে মালেকা বানু উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে সাড়ে ১১টার দিকে ৫-৬টি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এ সময় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ৩০ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়ে।

বংশাল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল কুদ্দুস ফকির বলেন, ‘পৌনে ৯টার দিকে কয়েক দুর্বৃত্ত চানখারপুল এলাকায় দুটি ককটেল নিক্ষেপ করে পালিয়ে যায়।

লালবাগ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নুরুল মোত্তাকিন দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘ভোটকেন্দ্রের আশপাশে বিভিন্ন স্থানে বিচ্ছিন্নভাবে কিছু ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। তবে ভোটকেন্দ্রে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’

প্রসঙ্গত উৎকণ্ঠা আর আতঙ্কের মধ্যেই দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। সারাদেশে রবিবার সকাল ৮টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। টানা ভোটগ্রহণ চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। তবে এ ভোটগ্রহণ ঠেকাতে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে ১৮ দলীয় জোট।

(দ্য রিপোর্ট/কেজেএন-এএইচএ/এমসি/শাহ/জানুয়ারি ৫, ২০১৪)