দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশের মোট ৩৭টি কেন্দ্রের ব্যালট বাক্স ছিল শূন্য। রবিবার বিকেল ৪টায় ভোটগ্রহণ শেষ হলে জেলা প্রতিনিধিদের দেওয়া সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী লালমনিরহাট জেলায় মোট ৮৯টি কেন্দ্রের মধ্যে ২৬টি কেন্দ্রের ব্যালট বক্স ছিল শূন্য। ঝিনাইদহ জেলার ৫টি কেন্দ্রও ভোটার শূন্য ছিল। আর সাতক্ষীরা জেলার চারটি কেন্দ্রে কোনো ভোটার ভোট দিতে আসেনি। একই জেলার দুটি কেন্দ্রে পৃথকভাবে এক ভোট ও দুই ভোট পড়ারও ঘটনা ঘটেছে। সিলেট ও রাজশাহীতে একটি করে কেন্দ্রে কোনো ভোটার ভোট দেয়নি।

অন্যদিকে সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলায় বিএনপির নেতা ইলিয়াস আলীর গ্রামের বাড়ি রামদানা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে কোনো ভোট পড়েনি। ওই কেন্দ্রে মোট ভোটারের সংখ্যা এক হাজার ৯১০ জন।

প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী দ্য রিপোর্টের লালমনিহাট প্রতিনিধি জানান, জেলার ২৬টি কেন্দ্রে কোনো ভোট পড়েনি। ভোটশূন্য ২৬টি কেন্দ্র হলো- চর বাসুরিয়া, ছিরা মল্লিক, সোনাতলা, বলিরাম মাদ্রাসা, আইর খামার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আমবাড়ী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যায়ল, বড়বাড়ী আবুল কাশেম উচ্চ বিদ্যালয়, বানিয়া দিঘি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হরি ঠাকুর দয়েজ উদ্দীন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রাম দাস সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বুড়ির দিঘি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পঞ্চগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কাজীর চওড়া উচ্চ বিদ্যালয়, মহেন্দ্র নগর উচ্চ বিদ্যালয়, ভোলার চওড়া উচ্চ বিদ্যালয়, কাশিপুর উচ্চ বিদ্যালয়, ছিলাখানা উচ্চ বিদ্যালয়, শিবের কুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দক্ষিণ শিবের কুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নয়ার হাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হরিদেব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ফুলাঘাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নওদাবাস সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হিরা মানিক উচ্চ বিদ্যালয়, সিন্দুর মতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ধাইর খাতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

ঝিনাইদহ-৩ আসনের খালিশপুর, পুরন্দপুর ও বাজড়াপুর ভোট কেন্দ্রে কোনো ভোট না পড়ার ঘটনা ঘটেছে।

সাতক্ষীরা সদর আগরদাড়ী আমিনিয়া কামিল মাদ্রাসা ভোটকেন্দ্রে কোনো ভোট পড়েনি। এ কেন্দ্রে মোট ভোটার সংখ্যা ১ হাজার ৮৭৬। প্রিসাইডিং অফিসার আজিজুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

জেলার গোদাঘাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ শেষে ব্যালট বক্স শূন্য ছিল। এ কেন্দ্রে মোট ভোটার সংখ্যা ১ হাজার ৮৮৫।

আগরদাড়ী মহিলা দাখিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে মোট ভোট সংখ্যা দুই হাজার ৩৫৯, এই কেন্দ্রে কোনো ভোট পড়েনি। ধলবাড়িয়া কেন্দ্রের ব্যালট বাক্সও শূন্য ছিলো ভোটগ্রহণ শেষে। এই কেন্দ্রে মোট ভোটার ছিলো এক হাজার ৯৪৫ জন।

এ ছাড়া একই জেলার শিয়ালডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে মোট সংখ্যা ২ হাজার ৩৬৭ ভোটের বিপরীতে গৃহিত হয়েছে মাত্র একটি ভোট এবং চুপড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মাত্র দুজন ভোট প্রদান করেছেন। এই কেন্দ্রে মোট ভোটের সংখ্যা ২ হাজার ৪৯৪।

রাজশাহী-৬ চারঘাট উপজেলার মারিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রও ছিলো ভোট শূন্য। এই কেন্দ্রে মোট ভোটার ছিলো দুই হাজার ৭৯৭ জন।

দেশের জাতীয় নির্বাচনের ইতিহাসে আগে কখনো কোনো কেন্দ্র ভোট শূন্য ছিলো না বলে জানিয়েছেন বিশিষ্টজনেরা। বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম কোনো কেন্দ্র ভোট শূন্য থাকার ঘটনা ঘটছে।

এ ব্যাপারে কথা বলা হলে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) নির্বাহী পরিচালক ড. বদিউল আলম মজুমদার দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘গণমাধ্যমে দেখলাম এই নির্বাচনে ৩১টি কেন্দ্রে কোনো ভোটার ভোট প্রদান করেনি। এটা বাংলাদেশের জন্য যেমন একটি ইতিহাস, তেমনি জাতি হিসেবে আমাদের জন্য লজ্জাজনক। আমার মনে পড়ে না আগে কখনো কোনো কেন্দ্র ভোট শূন্য ছিলো। ভোট শূন্য থাকার এই চিত্রই বলে দেয়, একতরফা এই নির্বাচন কারো কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘আজকের (রবিবার) নির্বাচনে বহু সংখ্যক কেন্দ্র ভোটার শূন্য থাকার মাধ্যমে প্রমাণিত হলো এটি কোনো ভোট হয়নি। এই নির্বাচনের মাধ্যমে একটি দল ক্ষমতায় টিকে থাকতে নির্লজ্জ, নিঃশংষ ও নির্মম চেষ্টা । শুধুমাত্র ভোট শূন্যই নয়, সহিংসতায় সর্বাধিক সংখ্যক নিহতের ঘটনাও ঘটেছে এই নির্বাচনে। মুলত এই নির্বাচনে কেউ জয় লাভ করেনি। দেশ, জনগণ, গণতন্ত্র সব আজ পরাজিত।’

(দ্য রিপোর্ট/এইচআর/এমডি/জেএম/এনআই/জানুয়ারি ০৫, ২০১৩)