সোহেল রানা ও আহমদুল হাসান আসিক, দ্য রিপোর্ট : প্রথম সন্তান এসেছে রেশমা বেগমের কোল জুড়ে। স্বামী বাহরাইন প্রবাসী লিটন মিয়া ছেলে সন্তানের খবর শুনে আনন্দে আটখানা। পরিবারের সবাই খুশি।

ওজন কম হলেও ডাক্তার জানালেন, নবজাতকটি ভালো আছে। কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু সিজারিয়ানের মাধ্যমে জন্মের দুইদিন পর নবজাতকের কিছু সমস্যা হচ্ছিল। ডাক্তার জানালেন, তাকে এখনই ইনকিউবেটরে রাখা দরকার। গ্রামের সাধারণ হাসপাতালে নেই ইনকিউবেটর। ডাক্তারের পরামর্শ মতো শিশুটিকে নিয়ে আসা হল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। আর এই নির্ভরযোগ্য হাসপাতালই কাল হলো রেশমা বেগমের। হাসপাতালই কেড়ে নিল তার আদরের দুলাল, পরম প্রতিক্ষীত সন্তানকে। ডাক্তার আর দালাল, দুই সুবিধাবাদী চক্রের খপ্পরে পড়ে গ্রামে ফিরলেন সন্তানের লাশ নিয়ে। রেশমার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা জেলার মজিদপুর গ্রামে।

রেশমার বোন খুকি বেগম জানান, শুক্রবার কুমিল্লার গৌরীপুর কামাল মর্ডান হাসপাতালে সিজারিয়ানের মাধ্যমে রেশমা এক ছেলে সন্তানের জন্ম দেন। জন্মের পর মায়ের অবস্থা ভালো না থাকলেও সন্তানের অবস্থা ভালো ছিলো। কিন্তু রবিবার সকালে শিশুটির অবস্থা খারাপ হলে ১২টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে নিয়ে আসা হয়।

মেডিকেল আনার পর থেকেই শুরু শিশুটির প্রতি অবিচার। যে ডাক্তাররা জীবন বাচানোর ব্রত নিয়ে মহান পেশায় এসেছেন সেই ডাক্তারদের অবহেলা আর দায়িত্বহীনতার কারণেই রেশমা বেগমের কোল।

খুকি জানান, হাসপাতালে আসার পর আমাদের বলা হয় ইমারজেন্সীর টিকিট কাটার জন্য। টিকিট কাটার পর শিশুটিকে নবজাতক ওয়ার্ডের ২১১ নম্বর কক্ষে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সেখানে ইন্টার্নী ডাক্তাররা বলেন, এখানে কোনো রোগী রাখা যাবে না, সিট খালি নেই।

এরপর সেখান থেকে বের হয়ে তারা একটি সংঘবদ্ধ মহিলা দালাল চক্রের খপ্পরে পড়েন। চক্রটির কয়েকজন সদস্য লাইলী, রাশেদা, পান্নাসহ আরো কয়েকজনের এ চক্রটি তাদের বলেন যে সালাউদ্দিন হাসপাতালে নিয়ে যেতে।

বিষয়টি সাংবাদিকরা টের পেয়ে ওই মহিলা দালালের হাত থেকে নবজাতককে উদ্ধার করে হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মোস্তাফিজুর রহমানের কক্ষে নিয়ে আসা হয়।

এরপর পরিচালক ওই টিকিটে লিখে দেন যে তাদের এখানে ভর্তি করা হোক। এরপর ২১১ নম্বর কক্ষেই তাদের স্থান হয়। কিন্তু ততক্ষণে সময় অনেক পেরিয়ে গেছে। শিশুটির অবস্থা খারাপ হলে ৩টার দিকে ইমারজেন্সীতে পাঠানো হয়। ৩টার দিকে কর্তব্যরত ডাক্তার রাহাত শিশুটিকে মৃত ঘোষণা করেন।

শিশুটির খালা খুকি বেগম বলেন, আমরা এত কিছু বুঝি না। বোনটা অনেক কষ্ট করেছে। কিন্তু ডাক্তারদের অবহেলার কারণে বোনের সন্তানটারে বাঁচাতে পারলাম না। আমি এখন কি জবাব দিব।

এদিকে ঢাকা মেডিকের কলেজ হাসপাতালের সহকারি পরিচালক খাজা আব্দুর গফুর বলেন, আমরা ঘটনাটি খতিয়ে দেখছি। যদি কোন ডাক্তারের অবহেলা হয়ে থাকে সোমবার তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উল্লেখ্য ওই দালাল চক্রটি বেশ কয়েক বছর যাবৎ হাসপাতালের কিছু অসাধু ডাক্তারের সহায়তায় হাসপাতাল থেকে রোগী ভাগিয়ে অন্য হাসপাতালে নিয়ে যায়।

(দ্য রিপোর্ট/এসআর-এএইচএ/এসবি/জানুয়ারি ০৬, ২০১৪)