দ্য রিপোর্ট কূটনৈতিক প্রতিবেদক : দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ওপর শুরু থেকেই চোখ ছিল বিদেশি গণমাধ্যমগুলোর। বিদেশি গণমাধ্যমে ভোটের খবর গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশ করা হয়। অনেক গণমাধ্যমে প্রধান সংবাদ হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে ভোটের খবর।

অপরদিকে অতীতের জাতীয় নির্বাচনগুলোতে বিদেশি পর্যবেক্ষক ও গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের ব্যাপক উপস্থিতি থাকলেও এবার তা ছিল না। এবার ভারত ও ভুটানের চার পর্যবেক্ষক আর ২১ বিদেশি সাংবাদিক ছাড়া আন্তর্জাতিক কোনো পর্যবেক্ষক ছিল না।

এবারের ভোট পর্যবেক্ষণে কমনওয়েলথ জোট, ইইউ জোট, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া সব মিলে মোট ৭৮ রাষ্ট্র নির্বাচন পর্যবেক্ষণে কোনো পর্যবেক্ষক পাঠাবে না বলে আগেই জানিয়েছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, যে ২১ জন সাংবাদিক ঢাকায় পৌঁছেছেন তার মধ্যে বিসিসির ১, আল জাজিরার ৯, রয়টার্স ৩, সুইস টেলিভিশন ১, এনএইচকে (জাপান) ২ ও ফ্রিল্যান্স হিসেবে ৫ জন রয়েছেন।

বিশ্বের উল্লেখযোগ্য গণমাধ্যম বিবিসি, আল জাজিরা, সিএনএন, আল আহরাম, দ্য ডন, আনন্দবাজার, টাইমস অব ইন্ডিয়া, রেডিও তেহরান, ইন্ডিয়া টুডেসহ অনেক গণমাধ্যমে ভোটের দিনের সংঘাত, ভোটারদের কম উপস্থিতি ও বিরোধী দলের ভোট বর্জনের বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

বিবিসি ও আল জাজিরার শিরোনামে বলা হয়েছে, সহিংসতা ও বিরোধী দলের নির্বাচন বর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে বাংলাদেশের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। একই গুরুত্ব দিয়ে নির্বাচনের খবর প্রকাশ করেছে ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি। ‘অশান্তির মধ্যেই শুরু বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন’ শিরোনাম করেছে ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে ভারতের দৈনিক ‘টাইমস অব ইন্ডিয়া’ এক প্রতিবেদনে লিখেছে, এই দুই নেতার মধ্যকার ‘বিষাক্ত’ সম্পর্ক দেশকে আরও একবার খাদের কিনারে নিয়ে গেছে।

জার্মানির আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলে জানায়, বিরোধী নেত্রী খালেদা জিয়া এখন গৃহবন্দি ও তার নেতৃত্বে বিরোধী দলগুলো এ নির্বাচন বর্জন করছে। জার্মানির বহুল প্রচারিত সংবাদপত্র ডি সাইট জানায়, বাংলাদেশের প্রধান দুই নেত্রীর মধ্যে গত ২০ বছর ধরে যে বৈরী সম্পর্ক চলছে, তার পরিণতিতে বর্তমান অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

ব্রিটেনের দ্য ইকোনোমিস্টে বাংলাদেশের নির্বাচনকে প্রহসন হিসেবে উল্লেখ করে বলা হয়েছে, এবারের নির্বাচন মাইনাস ওয়ান ফর্মুলার নির্বাচন। পাকিস্তানের গণমাধ্যম ডন ও জিও নিউজ তাদের অনলাইন সংস্করণে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করেছে নির্বাচনের খবর। এ ছাড়া, মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএন ছাড়াও রয়টার্স ও এপিসহ বিশ্বের বিভিন্ন সংবাদ সংস্থাও তাদের সংবাদে গুরুত্ব দিয়ে ভোটের খবর প্রকাশ করেছে।

এদিকে নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আসা ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের প্রধান নির্বাচনী কর্মকর্তা আশুতোষ জিন্দাল বলেছেন, নির্বাচনে মানুষের মধ্যে উৎসবের কোনো আমেজ নেই। ভোটের দিন দুপুরে রাজধানীর আজিমপুর গালর্স হাইস্কুল ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ভোটকেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি কম থাকলেও কোথাও কোনো সহিংসতা চোখে পড়েনি। তবে মানুষের মধ্যে উৎসবের আমেজ নেই। তিনি বলেন, আমরা যেসব কেন্দ্র্র পর্যবেক্ষণ করেছি এর মধ্যে কতগুলোতে ভোটার উপস্থিত ছিল ভালো। কয়েকটিতে ভোটার উপস্থিত ছিল কম। একতরফা এ নির্বাচন ভারত কিভাবে দেখছে- সাংবাদিকরা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি আমাদের এখতিয়ারে নেই।

ভারতের নির্বাচন কমিশনের পরিচালক বি বি গার্গও নির্বাচন পর্যবেক্ষণে রয়েছেন। ভুটান নির্বাচন কমিশনের ভোটার নিবন্ধন ও সীমানা পুননির্ধারণ বিভাগের পরিচালক সোনম তবগাইয়াল ও দেশটির নির্বাচনী তহবিল বিভাগের ম্যানেজার তাশি দর্জিও এ মুহূর্তে ঢাকায় রয়েছেন। নির্বাচন কমিশনের একজন কর্মকর্তাকে সঙ্গে নিয়ে তারা ঢাকার কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। সকাল থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত তারা পাঁচটি কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। নির্বাচন কমিশন জানায়, সকাল থেকে রাজধানীর গাবতলী ও মিরপুরের আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়সহ পাঁচটি কেন্দ্র পর্যবেক্ষণ করেছেন।

(দ্য রিপোর্ট/জেআইএল/এসবি/শাহ/জানুয়ারি ৬, ২০১৪)