জামায়াতকে ছাড়লেই আলোচনা : শেখ হাসিনা
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘যুদ্ধাপরাধী জামায়াতকে ছাড়লেই বিএনপির সঙ্গে আলোচনা হবে।’
গণভবন মাঠে সোমবার বিকেলে নির্বাচন পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।
বিরোধী দলের সব বাধা উপেক্ষা করে জনগণ নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় দেশবাসীকে অভিনন্দন জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘সন্ত্রাস-নাশকতার বিরুদ্ধে এবং গণতন্ত্র ও সংবিধানের পক্ষে রায় দিয়েছে জনগণ। বিরোধী দলের শত বাধাকে উপেক্ষা করে জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন।’
এ সময় প্রধানমন্ত্রী সব অশুভ শক্তির হাত থেকে দেশ ও দেশের জনগণকে রক্ষা করায় আল্লাহ রাব্বুল আল-আমিনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
নির্বাচন কমিশনসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানান শেখ হাসিনা।
লিখিত বক্তব্য শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন তিনি।
বিরোধী দলের সঙ্গে আলোচনা হবে কিনা-এমন এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধী জামায়াতকে ছাড়লেই বিএনপির সঙ্গে আলোচনা হবে। আমি অনেকবার আলোচনার উদ্যোগ নিলেও বিরোধীদলীয় নেত্রী সাড়া দেননি। উনি তো (খালেদা জিয়া) এখন দুই কূলই হারিয়েছেন। তারপরও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে সবার সঙ্গে আলোচনা করতে রাজি আমরা। তবে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি জামায়াতের সঙ্গ বিএনপিকে ত্যাগ করতে হবে।’
এ সময় প্রধানমন্ত্রী হাসিমুখে বলেন, ‘আগামী সংসদে বিরোধীদলীয় নেত্রী হিসেবে খালেদা জিয়া তো বসতে পারবেন না।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ নির্বাচন নিয়ে কোনো প্রশ্ন উঠতে পারে আমরা বিশ্বাস করি না। যারা গণতন্ত্র ও সাংবিধানিক ধারাবাহিকতায় বিশ্বাস করেন তারাই নির্বাচনে এসেছেন। যারা দেশের স্বাভাবিক পরিস্থিতি ও গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেন না তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেননি।’
সামনের দিনে আইনশৃঙ্খলা বিষয়ে হুঁশিয়ারি দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা জনগণের জানমাল নিয়ে খেলবে তাদের ছাড় দেওয়া হবে না। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
নির্বাচনে কত শতাংশ ভোটার উপস্থিতি ছিল- এমন এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন সব হিসাব-নিকাশ শেষে এই বিষয়ে জানাবেন। যতটুকু ভোট দিয়েছেন ততটুকুই যথেষ্ট। জনগণ সব বাধা উপেক্ষা করে ভোট দিয়েছেন তাতেই আমি সন্তুষ্ট।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে। বিপক্ষ শক্তি বর্জন করেছে। জনগণ বিরোধী দলের ডাকা অগণতান্ত্রিক আন্দোলনে সাড়া দেয়নি। বিরোধীদলীয় নেত্রী চেয়েছিলেন যাতে একজনও ভোটকেন্দ্রে না যায়। মানুষ তাকে প্রত্যাখ্যান করেছে।’
এক বিদেশি সাংবাদিকের করা প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা সব দেশের সঙ্গে ইতিবাচক সম্পর্কে বিশ্বাসী। কারো সঙ্গে বৈরীতা নয়, কারণ আমরা চাই বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ উন্নয়নের উদাহরণ হিসেবে নিজেদের অবস্থান করে নিয়েছে।’
আগামী সরকার জামায়াতকে নিষিদ্ধ করবে কিনা-এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জামায়াতের নিষিদ্ধ নিয়ে আদালতে মামলা আছে। তাই এ বিষয় নিয়ে মন্ত্রব্য করা ঠিক হবে না।’
নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া প্রার্থীদের হলফনামার সম্পদ বিবরণী নিয়ে নিজ দলীয় মন্ত্রী-এমপিদের বিষয়ে সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য নিয়ে কোনো পদক্ষেপ নেবেন কিনা- এমন প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি কারো দুর্নীতির প্রটেকশন দেব না। যারা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে দুর্নীতি দমন কমিশন।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আয় বাড়া স্বাভাবিক। কিন্তু অস্বাভাবিকভাবে কারো আয় বেড়ে থাকলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সরকার এসে উন্নয়নমূলক কাজ হাতে নিয়েছে। সবার সম্পদ এমনিতেই বেড়েছে। যারা চাকরি করেন তাদেরও বেতন বাড়ানো হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘অনেক ক্ষেত্রে সম্পদের হিসাবের বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। যেমন আমার বিয়ের সময় সোনার দাম ছিল ১৩০ টাকা ভরি। এখন সোনার দাম অনেক বেশি। এভাবে অনেকের সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে।’
আগামী সরকার গঠন বিষয়ক এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের জোটের শরিক দলের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব। তারা যদি চান সর্বদলীয় সরকার গঠন করতে আমি স্বাগত জানাব। তবে বিরোধী দলও তো থাকতে হবে।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কমিউনিস্টদের মধ্যে যারা ভালো, পাকা তাদের আমি নিয়ে নিয়েছি। আর অনেকেই পচে গেছেন। অনেকেই পুঙ্খানুপুঙ্খ বিচার-বিশ্লেষণ করতে করতে ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর হয়ে গেছেন।’
(দ্য রিপোর্ট/বিকে/এনডিএস/সা/জানুয়ারি ০৬,২০১৪)