দোহারে নির্বাচনী সহিংসতায় নিহত ৫
পূর্ব শত্রুতার ক্ষোভ মেটাল চকদার পরিবার
আহমদুল হাসান আসিক, দ্য রিপোর্ট : নির্বাচনে হেরে পূর্বশত্রুতার ক্ষোভ মেটাল চকদার পরিবার। ঢাকা-১ (দোহার-নবাবগঞ্জ) আসনে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আব্দুল মান্নান হেরে গেলে তার সমর্থক চকদার পরিবার তাদের শত্রু জাতীয় পার্টির সালমা ইসলামের সমর্থক মোল্লা পরিবারের ওপর নৃশংস হামলা করে। এতে ৫ জন নিহত হন এবং আরও আহত হয় অন্তত ২০ জন।
ঘটনাটি ঘটে দোহার উপজেলার বিলাশপুর ইউনিয়নের হাজার বিঘা গ্রামে। নির্বাচনের একদিন পর সোমবার সকাল ৯টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সোমবার ভোরে মোল্লা পরিবার এবং চকদার পরিবারের মধ্যে কথা কাটাকাটির জের ধরে সংঘর্ষ হয়। এ সময় দুপক্ষের প্রায় ৭/৮ জন আহত হয়। এরপর সকাল ৯টায় চকদার পরিবারের অন্তত ১৫০ জন লোক দেশীয় অস্ত্র নিয়ে মোল্লা পরিবারের বিভিন্ন বাড়িতে হামলা চালায়। এতে ঘটনাস্থলেই ৩ জন এবং হাসপাতালে আরো ২ জন নিহত হয়। এদের মধ্যে একই পরিবারের ৩ জন রয়েছে।
এ সময় পুলিশ ঘটনা স্থলে থাকলেও নীরব ভূমিকা পালন করেছে স্থানীয়দের অভিযোগ।
নিহতরা হলেন- মুসা খন্দকার (৫৫), তার ছেলে মাসুদ খন্দকার (২৮), ভাগ্নে রেজাউল (২৬)। এ ছাড়া অন্য দুইজন হলেন- মকবুল হোসেন (৩৫) ও আসলাম হোসেন (২০)।
স্থানীয় বাসিন্দা আবু বক্কর জানান, হামলাকারীরা মান্নানের সমর্থক। আর যারা হামলার শিকার তারা সালমা ইসলামের সমর্থক। এদের মধ্যে নির্বাচনের আগে থেকেই সমস্যা ছিল। এ ছাড়া নির্বাচনে জেতার পর তারা বিজয় মিছিল করে। এতে আব্দুল মান্নানের ভাই মোতালেব খান ক্ষিপ্ত হন। মূলত তার নির্দেশেই এ হামলা চালানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।
নিহত মকবুলের ভগ্নিপতি মো. আফতাব উদ্দিন জানান, আব্দুল মান্নানের ভাই মোতালেব খানের নির্দেশে চকদার পরিবারের বাশার চকদার ও হুকুম চকদারের নেতৃত্বে সকালে এ হামলা চালানো হয়।
স্থানীয়রা জানান, মোতালেবের মদদে বাশার এলাকায় বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত। অন্যদিকে মুসা খন্দকার ছিলেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা বিলাশপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আলাউদ্দিনের সমর্থক। আলাউদ্দিন এবার সালমা ইসলামের হয়ে নির্বাচনে কাজ করেছেন।
এদিকে পুলিশ এটাকে নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা নয় বলে দাবি করেছে। স্থানীয় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেও এটাকে নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা নয় বলে দাবি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান বলেন, ‘এটাকে নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা বলা যাবে না। কেননা এটার সঙ্গে নির্বাচন নয় বরং পারিবারিক দ্বন্দ্বই সম্পর্কিত। আপনারা এটা খোঁজ নিয়ে দেখতে পারেন।’
তিনি আরও জানান, এ ঘটনায় ৩ জনকে আটক করা হয়েছে। তবে এখনো কোনো মামলা হয়নি।
ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও দোহার উপজেলা চেয়ারম্যান মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘নির্বাচন নয়, পারিবারিক বিষয়টিই এখানে প্রাধান্য পেয়েছে। নির্বাচনে হেরে হয়তো ক্ষোভ বেড়েছে। তবে এটা কোনোভাবেই নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা নয়।’
নিহতের পরিবারের সদস্যরা জানান, পুলিশের সামনেই হামলা করা হয়েছে। নিহত মকবুলের ভগ্নিপতি বলেন, ‘আমাদের ওপর যখন হামলা করা হয় তখন পুলিশ উপস্থিত ছিল।’
তিনি আরও জানান, ‘দোহার থানার ওসি কামরুল ইসলাম মিয়া নিজে উপস্থিত থেকে হামলাকারীদের নির্দেশ দিয়ে এ ঘটনা ঘটিয়েছে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি কামরুল বলেন, ‘আমি ব্যস্ত আছি, এখন কথা বলতে পারব না।’
ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান বলেন, ‘পুলিশের উপস্থিতি বলতে এখানে টহল পুলিশ হয়তো টহল দিচ্ছিল। তবে যদি এ কাজে কারো মদদ থাকে সেটা বিবেচনায় নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
(দ্য রিপোর্ট/এএইচএ/এনডিএস/ এনআই/জানুয়ারি ০৬,২০১৪)