আন্দোলন চলছে, চলবে
সরকারের ক্ষমতায় থাকার সাংবিধানিক ভিত্তি নেই : খালেদা
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, ‘বাংলাদেশের সচেতন জনগণ ক্ষমতায় থাকার সরকারি কারসাজির একতরফা অপপ্রয়াসকে পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করেছে। কাজেই এই সরকারের ক্ষমতায় টিকে থাকার কোনো নৈতিক ও সাংবিধানিক ভিত্তি নেই। জনগণের অনুমোদন ছাড়া দেশ পরিচালনার এখতিয়ার কারো থাকে না।’ একই সঙ্গে বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘অবৈধ সরকার দীর্ঘায়িত হবে না ইনশা আল্লাহ্।’
সংবাদ মাধ্যমকে দেওয়া এক বিবৃতিতে সোমবার সন্ধ্যায় বিরোধী দলীয় নেতা নির্বাচন পরবর্তী বক্তব্যে এ সব কথা বলেন। বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনী প্রহসনে আওয়ামী লীগেরও বিপুলসংখ্যক লোক শরিক না হওয়ায় আমি তাদেরকেও ধন্যবাদ জানাই। আশা করি তারাও জনগণের অনুভূতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে তাদের সঙ্গেই একাত্ম থাকবেন।’
খালেদা জিয়া বলেন, ‘ভোটারশূন্য এই নির্বাচনী প্রহসনের মাধ্যমে সকলের সামনে হাতে-কলমে প্রমাণিত হয়েছে যে, সরকারের প্রতি মানুষের ঘৃণা ও অনাস্থা কত তীব্র। এর মাধ্যমে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, তাদের মুষ্টিমেয় দোসর ও আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশনের গণবিরোধী কুকর্মও দিবালোকের মতো স্পষ্ট হয়ে গেছে।’
বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ‘দেশের এবং সারা দুনিয়ার মানুষ নিজের চোখে সরাসরি ও মিডিয়ার মাধ্যমে দেখেছেন এবং জেনেছেন যে, কীভাবে ভোটাররা এই কারসাজির ঘৃণ্য প্রহসনকে বর্জন করেছেন। সারাদিন সারাদেশের ভোটকেন্দ্রগুলো ছিল ফাঁকা। ভোটারবর্জিত এই একতরফা কারসাজিকে জনগণ ঘৃণাভরে পুরোপুরি বর্জন করেছেন। গণতন্ত্র হত্যার এই যজ্ঞে তারা সায় দেননি। প্রত্যাখ্যান করেছেন আওয়ামী লীগের এই নির্লজ্জ মহড়াকে। বাংলাদেশের মানুষ তাদের অধিকারের পক্ষে, গণতন্ত্রের পক্ষে, স্বৈরশাসনকে দীর্ঘায়িত করার বিপক্ষে। অতীত ঐতিহ্যের ধারায় আরেকবার তারা নীরব বিপ্লব ঘটিয়েছেন।’
গণমাধ্যমে নির্বাচনী প্রহসনের চিত্র সঠিকভাবে তুলে ধরায় তাদের ধন্যবাদ জানিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, ‘অভিনন্দন বাংলাদেশ। অভিনন্দন বাংলাদেশের গণতন্ত্রপ্রিয় মানুষকে। ধন্যবাদ জানাই বাংলাদেশের সচেতন নাগরিক ও ভোটারদের। তারা ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের নামে কলঙ্কময় প্রহসনকে বর্জন করেছেন।’
তিনি বলেন, ‘সবখানে সারাদিন ভোটকেন্দ্রগুলো শূন্য পড়েছিল। কেউ ভোট দিতে আসেনি। অনেক কেন্দ্রে একটি ভোটও পড়েনি। কোথাও কোথাও দু’চারটা করে ভোট পড়লেও বেশিরভাগই ছিল জাল। অথচ ভোটগ্রহণের শেষ পর্যায়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের নির্বাচন কমিশন অভিমুখে ছোটাছুটি ও তৎপরতার পর রাতে লাখ লাখ ভোট পড়েছে বলে দেখানো হয়। এতে পুরো প্রহসনটির সামান্যতম বিশ্বাসযোগ্যতাও আর অবশিষ্ট থাকেনি।’
সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গায়ের জোর, সন্ত্রাস ও রাষ্ট্রশক্তির অপব্যবহার করে প্রহসনের মাধ্যমে দেশের জনগণকে পরাজিত ও গণতন্ত্র এবং মানুষের অধিকারকে কেড়ে নিয়ে আওয়ামী লীগ তাদের শাসনক্ষমতা প্রলম্বিত করতে চাইছে। কতটা নির্লজ্জ হলে তারা বলতে পারে, জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিয়েছে এবং তারা দেশ পরিচালনায় জনগণের ম্যান্ডেট পেয়ে গেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘মানুষের কোনো ভোট বা সম্মতি ছাড়াই আগেই জাতীয় সংসদের ১৫৩টি আসন আওয়ামী লীগ ভাগ-বাটোয়ারা করে সিলেকশন করেছে। বাকি ১৪৭ আসনেও ভোটারদের সমর্থন দূরে থাক, তারা ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের হাজিরই করতে পারেনি।’
খালেদা বলেন, ‘গত ৫ জানুয়ারির কলঙ্কময় প্রহসনের মাধ্যমে সরকারের প্রতি জনগণের অনাস্থাই কেবল নয়, আরও প্রমাণ হয়েছে যে, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন ছাড়া বাংলাদেশে সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ, শান্তিপূর্ণ এবং সকলের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন সম্ভব নয়। কাজেই আমি অবিলম্বে নির্বাচনের নামে এই প্রহসন বাতিল, সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সকলের অংশগ্রহণে একটি সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে সমঝোতায় পৌঁছার আহ্বান জানাচ্ছি।’
খালেদা জিয়া আরও বলেন, ‘আমাকে গৃহবন্দী রেখে, জনগণের ওপর দমন-পীড়ন চালিয়ে সমস্যা ও সংকটের কোনো সুরাহা হবে না। সন্ত্রাসের পথে অবৈধ ক্ষমতাকে প্রলম্বিত করার অপচেষ্টাতেও শেষ রক্ষা হবে না। বরং তাতে সংকট আরও জটিল ও গভীর হবে।’
খালেদা বলেন, ‘সরকারের অবৈধ ক্ষমতাকে প্রতিরোধ করতে গিয়ে নিরস্ত্র সাধারণ মানুষ অকাতরে প্রাণ দিচ্ছেন। তাদের আত্মদান বৃথা যাবে না। ব্যক্তিবিশেষের ক্ষমতার উৎকট বাসনা যেভাবে রক্ত ঝরাচ্ছে, তা বেশিদিন চলতে পারে না। জনগণের এ আন্দোলন বিজয় অর্জন না হওয়া পর্যন্ত চলবে। এ আন্দোলনকে বেগবান করার জন্য আমি সকল রাজনৈতিক দল, শক্তি ও ব্যক্তির প্রতিও আহ্বান জানাই।’
তিনি বলেন, ‘প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীসহ সকলের প্রতি আমার আহ্বান, বেআইনী কার্যকলাপ ও হত্যা-নির্যাতন থেকে বিরত থাকুন। সুস্থ, স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে কাজ করুন। জনগণের সঙ্গে থাকুন। ধর্মীয় সংখ্যালঘু, দুর্বল জনগোষ্ঠীসহ সকল নাগরিকের জীবন, সম্পদ ও সম্ভ্রমের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন।’
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘বাংলাদেশে জনগণের সকল অধিকার ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসে বিধ্বস্ত। উদারনৈতিক গণতান্ত্রিক রাজনীতি ও নিয়মতান্ত্রিক কার্যক্রম স্তব্ধ। সংবাদমাধ্যম শৃঙ্খলিত। আগেরবারের আওয়ামী শাসনামলে সৃষ্ট জঙ্গিবাদকে আমরা ধর্মপ্রাণ মানুষের সহযোগিতা নিয়ে কঠোর হাতে দমন করতে পেরেছিলাম। তা আবারও স্বৈরশাসনের কারণে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার অবকাশ পেয়েছে। এই স্বৈরব্যবস্থা শুধু বাংলাদেশে নয়, সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার স্থিতিকে হুমকির দিকে ঠেলে দিতে পারে। তাই অবিলম্বে বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং গণতান্ত্রিক রীতিনীতির অবাধ অনুশীলনের পক্ষে বিশ্ববিবেককেও আরও বেশি সোচ্চার ও সক্রিয় হতে হবে।’
(দ্য রিপোর্ট/টিএস-এমএইচ/এসকে/ এনআই/জানুয়ারি ০৬, ২০১৪)