দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : ভোটারবিহীন নির্বাচনে নিজেদের ইমেজ ঢাকতেই দ্রুততার সঙ্গে সরকার গঠনের চিন্তা করছে আওয়ামী লীগ। বিরোধী দলের সহিংস কর্মকাণ্ড মোকাবেলায় শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে সরকার গঠন জরুরি বলে মনে করছে দলটির নীতি-নির্ধারণীমহল। এরই অংশ হিসেবে মধ্য জানুয়ারির আগেই নতুন সরকার গঠনের প্রক্রিয়া শেষ করার ইচ্ছা রয়েছে। তবে তা করতে কোনো সাংবিধানিক জটিলতা সৃষ্টি হবে কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

কোনো আইনগত বাধা না থাকলে ২৪ জানুয়ারি নির্ধারিত মেয়াদের আগেই ভেঙে দেওয়া হবে চলমান নবম জাতীয় সংসদ।

একটি সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে মন্ত্রী হিসেবে বেশ কয়েকজনের একটি তালিকাও চূড়ান্ত করেছেন। যেখানে দলের সিনিয়র তিন নেতা ও কয়েকজন নতুন কেন্দ্রীয় নেতার নাম রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘নির্বাচিত সরকারের প্রথম কাজ হবে যে কোনো মূল্যে দেশের জনগণের জানমাল এবং রাষ্ট্রের সম্পদ রক্ষা করা।’ এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত এ প্রতিবেদককে বলেন, ২৪ জানুয়ারির আগে নতুন সরকার গঠন করতে কোনো বাধা নেই। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন শেষ হয়েছে। যে কোনো সময় সরকার গঠন হতে পারে।

জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য এ প্রতিবেদককে বলেন, ৯ জানুয়ারির মধ্যে নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যদের শপথ নেওয়ার সম্ভাবনা আছে। তিনি বলেন, ১০ জানুয়ারির পর ১৫ জানুয়ারির মধ্যে নতুন মন্ত্রিসভা গঠন করা হবে।

সূত্র জানায়, সোমবার দলের সিনিয়র কয়েকজন নেতার সঙ্গে গণভবনে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী সহসাই নতুন সরকার গঠনের বিষয়ে ইঙ্গিত দিয়েছেন। বিকেলে সংবাদ সম্মেলন শেষে এ বৈঠক করেন শেখ হাসিনা।

আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের কয়েক নেতা জানান, চলমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে নবম সংসদের মেয়াদ শেষ করার আগেই নতুন সরকার গঠন করা ঝুঁকিমুক্ত। নতুন সরকার গঠন করা হলে সরকারের ভিত্তি শক্তিশালী হবে। সহসাই মন্ত্রিসভা গঠন করা হবে এমন ইঙ্গিতে মন্ত্রী হতে আগ্রহী কেন্দ্রীয় নেতারা দৌড়ঝাঁপও শুরু করেছেন।

নবম জাতীয় সংসদের মেয়াদ শেষ হবে আগামী ২৪ জানুয়ারি। নিয়ম অনুযায়ী মেয়াদ শেষ হওয়ার পরই নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যদের শপথ নেয়ার কথা। তবে তার আগে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের গেজেট জারি করবে নির্বাচন কমিশন। সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেওয়ার পরই রাষ্ট্রপতি সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের প্রধানকে সরকার গঠনের আমন্ত্রণ জানাবেন। সেই আমন্ত্রণ পেয়ে নতুন সরকার গঠনের উদ্যোগ নেবেন প্রধানমন্ত্রী। সংবিধানের এ প্রক্রিয়া শেষ করতে হলে ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

সংবিধানের ১৪৮ (২ক) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘সংসদ সদস্যদের সাধারণ নির্বাচনের ফলাফল সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপিত হইবার তারিখ হইতে পরবর্তী তিন দিনের মধ্যে এই সংবিধানের অধীন এতদুদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা তদুদ্দেশ্যে অনুরূপ ব্যক্তি কর্তৃক নির্ধারিত অন্য কোনো ব্যক্তি যে কোনো কারণে নির্বাচিত সংসদের শপথ পাঠ পরিচালনা করিতে ব্যর্থ হইলে বা না করিলে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার উহার পরবর্তী তিন দিনের মধ্যে উক্ত শপথ পাঠ পরিচালনা করিবেন, যেন এই সংবিধানের অধীন তিনিই ইহার জন্য নির্দিষ্ট ব্যক্তি।’

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নতুন মন্ত্রিসভার শপথ গ্রহণের প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। শপথ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিদের খসড়া তালিকা তৈরি করা হয়েছে। নতুন করে তৈরি করা হয়েছে শপথের ফোল্ডার।

এ বিষয়ে দ্য রিপোর্টকে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূঁইয়া বলেন, অ্যাপারেন্টলি ২৪ জানুয়ারির পরই নতুন মন্ত্রিপরিষদ গঠিত হবে। তবে সংসদ ভেঙে দিলে আগেও সম্ভব।

তিনি আরও বলেন, প্রথম বিষয় হলো- সংসদ সদস্যদের শপথ নেওয়া। এরপর আসে নতুন মন্ত্রিপরিষদ গঠনের বিষয়টি।

(দ্য রিপোর্ট/আরএমএম/এনআই/শাহ/জানুয়ারি ৭, ২০১৪)