৪৪ জন ‘ছক্কা এমপি’
বাহরাম খান, আল হেলাল শুভ ও মৌমিতা মাসিয়াত : দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার রেকর্ড হয়েছে। একই সঙ্গে নতুন রেকর্ড হয়েছে বিনা ভোটে ‘প্রথমবার’ এমপি নির্বাচিত হওয়ার। এমন এমপির সংখ্যা ৪৪ জন। এদের মধ্যে আওয়ামী লীগের ৩০ জন, জাতীয় পার্টির ১৩ জন এবং জাসদের একমাত্র প্রার্থী শিরীন আখতার।
এই ৪৪ জনের কেউ কেউ এর আগে দলীয় মনোনয়ন পেলেও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হতে পারেননি। তবে বেশির ভাগই প্রথমবার দলীয় মনোনয়ন পেয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি হয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট এলাকার ভোটাররা তাদের ‘রাজ কপালী’ ও ‘ছক্কা এমপি’ বলে অভিহিত করছেন।
রংপুর-২ আসনের আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরী (আ’লীগ) দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘ভোটারদের বলেছি, এবার যারা আমাকে ভোট দেওয়ার মনস্থির করেছিলেন তারা আগামীবার দিতে পারবেন। আমি তৃণমূলের লোক। ভোট হলেও পাস করতাম।’
ফেনী-১ আসনের শিরীন আক্তার (জাসদ) দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘সবচেয়ে বড় উদ্বেগ ছিল নির্বাচন নিয়ে। নির্বাচন হয়ে যাওয়াতে আমরা খুশি।’
ওই এলাকার ভোটার শামীম রহমান দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘উনি রাজ কপালী মানুষ। জীবনের প্রথমবারই বিনা ভোটে এমপি হলেন।’
লক্ষ্মীপুর-২ আসনের মোহাম্মদ নোমান (জাপা) দ্য রিপোর্টকে বলেন, এভাবে নির্বাচিত হওয়ার মধ্যে উল্লসিত হওয়ার কিছু নেই। ভোটাররা তাদের অধিকার প্রয়োগ করতে পারেননি। এ নির্বাচন কিভাবে হয়েছে, কেন হয়েছে তার সবকিছু সবাই জানে। তাই এখানে আনন্দিত হওয়ার কিছু নেই।’
এ আসনের ভোটার সোহেল হাসান বলেন, ‘আমাদের ভোট দেওয়া লাগেনি। এমনিতেই এমপি হইয়া গেছে। উনি আমাদের ছক্কা এমপি। প্রথমবারই ছক্কা মেরেছেন।’
আওয়ামী লীগের ৩০ জন
সারাদেশে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রথমবারের মতো এমপি নির্বাচিত হয়েছেন ৩০ জন। এদের মধ্যে লালমনিরহাট-২ আসনে নূরুজ্জামান আহমেদ, রংপুর-২ থেকে আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরী, জয়পুরহাট-১ সামছুল আলম দুদু, জয়পুরহাট-২ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, নাটোর-১ আবুল কালাম, নাটোর-২ শফিকুল ইসলাম শিমুল, সিরাজগঞ্জ-২ হাবিবে মিল্লাত, সিরাগঞ্জ-৪ তানভির ইমাম, বরিশাল-৫ শওকত হোসেন হিরণ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ কানসাট বিদ্যুৎ আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী গোলাম রব্বানী, পাবনা-২ আজিজুর রহমান আরজু, যশোর-৩ কাজী নাবিল আহমেদ, ময়মনসিংহ-২ শরীফ আহমেদ, ঢাকা-১৯ এনাম মেডিকেল কলেজের চেয়ারম্যান ডা. এনামুর রহমান, সাতক্ষীরা-৪ জগলুল হয়দার, ময়মনসিংহ-৯ আনোয়ার আবেদীন খান তুহিন, মানিকগঞ্জ-২ কন্ঠশিল্পী মমতাজ (নবম জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন), মুন্সীগঞ্জ-৩ মৃণাল কান্তি দাস, কিশোরগঞ্জ-২ সোহরাব উদ্দিন, মাদারীপুর-৩ আসনে আ ফ ম বাহাউদ্দিন, ব্রাক্ষণবাড়ীয়া-৪ আনিসুল হক, চাঁদপুর-৪ মোহাম্মদ শামছুল হক ভূঁইয়া, ফেনী-২ নিজাম উদ্দিন হাজারী, নোয়াখালী-৩ মামুনুর রশীদ কিরণ, লক্ষ্মীপুর-৩ একেএম শাহজাহান কামাল, চট্টোগ্রাম-১৪ নজরুল ইসলাম চৌধুরী, কক্সবাজার-২ আশেক উল্লাহ রফিক, নোয়াখালী-১ এইচএম ইব্রাহিম এবং কক্সবাজার-৩ থেকে সাইমুম সরোয়ার কমল এর আগে মনোনয়ন পেলেও এমপি হিসেবে এই প্রথমবারের মতো নির্বাচিত হয়েছেন। এ ছাড়া নোয়াখালী-২ মোরশেদ আলম এর আগে জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন পেলেও এমপি নির্বাচিত হতে পারেননি। তবে এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি নির্বাচিত হলেন।
জাতীয় পার্টির ১৩ জন
জাতীয় পার্টি থেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন নীলফামারী-৪ আসনে শওকত চৌধুরী। তিনি এর আগে দল থেকে মনোনয়ন পেলেও এমপি হতে পারেননি। একই অবস্থা বগুড়া-২ শরিফুল ইসলাম জিন্নার।
এ ছাড়া বগুড়া-৩ নূরুল ইসলাম তালুকদার, বগুড়া-৬ নূরুল ইসলাম ওমর, বরিশাল-৬ নাসরিন জাহান রত্না, ময়মনসিংহ-৫ সালাউদ্দিন আহমেদ মুক্তি, নারায়ণগঞ্জ-৩ লিয়াকত হোসেন খোকা, সুনামগঞ্জ-৪ আসনে পীর ফজলুর রহমান, কুমিল্লা-২ মোহাম্মদ আমির হোসেন, কক্সবাজার-১ মোহাম্মদ ইলিয়াছ, সিলেট-৫ সেলিম উদ্দিন এবং লক্ষ্মীপুর-২ আসনে মোহাম্মদ নোমান ৯৬ সালে মনোনয়ন পেলেও এমপি হিসেবে এই প্রথম নির্বাচিত হয়েছেন। এ ছাড়া হবিগঞ্জ-১ থেকে নির্বাচিত মোহাম্মদ আব্দুল মনিম চৌধুরী এর আগে একটি উপনির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও জয়ী হতে পারেননি।
এ ছাড়া জাসদ থেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রথমবারের মতো নির্বাচিত ফেনী-১ আসনে শিরীন আক্তার ১৯৯১ সালে দলীয় মনোনয়ন পেলেও এই প্রথম এমপি নির্বাচিত হয়েছেন।
(প্রতিবেদনটি তৈরিতে সংশ্লিষ্ট জেলার দ্য রিপোর্টের জেলা সংবাদদাতাগণ সহযোগিতা করেছেন)
(দ্য রিপোর্ট/বিকে-এএইচএস-এমএম/জেএম/শাহ/জানুয়ারি ৭, ২০১৪)