সহিংসতা নিয়ে উদ্বিগ্ন মানুষ
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা নিয়ে উদ্বিগ্ন সাধারণ মানুষ। বিরোধী দলের টানা হরতাল ও অবরোধের পর নির্বাচন কেন্দ্রিক রাজনৈতিক সহিংসতা নিয়ে শঙ্কিত সবাই।
পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, অতীতে দেশে নির্বাচন কেন্দ্রিক সহিংসতা ঘটলেও এবারের মতো অবস্থা তৈরি হয়নি কখনো। এবারের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে প্রধান বিরোধীদল বিএনপিসহ অধিকাংশ দলের অংশগ্রহণ ছাড়াই। ফলে বিরোধী জোট নির্বাচন প্রতিহতে যেমন ছিল সক্রিয় তেমনি নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে সরকার ছিল অটল। এ অবস্থায় নির্বাচনের দিন থেকে সহিংসতা চলে আসছে দেশের বিভিন্ন স্থানে।
বিএনপিসহ বিরোধী দলের অংশগ্রহণ ছাড়া এবং তাদের চরম বিরোধিতার মধ্যে রবিবার দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনের দিন দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতায় কমপক্ষে ১৯ জন নিহত হন। এসব ঘটনায় আহত হন আরো অনেকে।
এরই ধারাবাহিকতায় নির্বাচনের পরের দিন সোমবার রাজনৈতিক সহিংসতায় ঢাকার দোহারে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির সমর্থকদের সংঘর্ষে পিতা-পুত্রসহ ৫ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া নোয়াখালীর সোনাইমুড়িতে এক যুবলীগ কর্মী এবং দিনাজপুরের বীরগঞ্জে নির্বাচনের দিন সহিংসতায় গুরুতর আহত এক শিবিরকর্মী সোমবার মারা গেছে।
রাজনৈতিক এ সহিংসতা শুধু সরকার ও বিরোধীদলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। ক্ষমতাসীন দল ও জোট এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সমর্থকদের মধ্যেও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে।
সোমবার সকাল ৯টার দিকে ঢাকা-১ (দোহার-নবাবগঞ্জ) আসনে বিজয়ী জাতীয় পার্টির সালমা ইসলাম সঙ্গে পরাজিত আওয়ামী লীগ প্রার্থী আব্দুল মান্নানের সমর্থকদের সংঘর্ষে একই পরিবারের ৩ জনসহ ৫ জন নিহত এবং আহত হন অন্তত ২০ জন।
দোহার উপজেলার বিলাশপুর ইউনিয়নের হাজার বিঘা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন- মুসা খন্দকার (৫৫), তার ছেলে মাসুদ খন্দকার (২৮), ভাগ্নে রেজাউল (২৬)। এ ছাড়া অন্য দুইজন হলেন- মকবুল হোসেন (৩৫) ও আসলাম হোসেন (২০)।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সোমবার সকাল ৯টায় মান্নান সমর্থক চকদার পরিবারের অন্তত ১৫০ জন লোক দেশীয় অস্ত্র নিয়ে মোল্লা পরিবারের বিভিন্ন বাড়িতে হামলা চালায়। এ সময় তারা যাকে সামনে পায় তাকেই উপর্যুপরি কুপিয়ে চলে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই ৩ জন এবং হাসপাতালে আরও দুইজন নিহত হন।
স্থানীয় বাসিন্দা আবু বক্কর জানান, হামলাকারীরা মান্নানের সমর্থক। আর যারা হামলার শিকার তারা সালমা ইসলামের সমর্থক। এদের মধ্যে নির্বাচনের আগে থেকেই সমস্যা ছিল। এ ছাড়া নির্বাচনে জেতার পর তারা বিজয় মিছিল করে। এতে আব্দুল মান্নানের ভাই মোতালেব খান ক্ষিপ্ত হন। মূলত তার নির্দেশেই এ হামলা চালানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।
এদিকে রবিবার রাতে নোয়াখালীর সোনাইমুড়িতে আওয়ামী লীগ সমর্থকরা বিজয় মিছিল বের করলে স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের হামলায় আহত হন যুবলীগকর্মী মাহফুজ (২৩)। সোমবার ভোর সাড়ে ৪টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তার মৃত্যু হয়। একইভাবে রবিবার নির্বাচনের দিন দিনাজপুরের বীরগঞ্জে সহিংসতায় আহত এক শিবিরকর্মী সোমবার সকালে মারা গেছেন।
মেহেরপুরের গাংনী উপজেলায় নির্বাচনে জয়ী আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মকবুল হোসেনের সমর্থকেরা দলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল খালেকের বাড়ি ও কার্যালয়ে হামলা চালিয়েছেন। বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী মকবুল হোসেনের সমর্থকেরা আওয়ামী লীগের নেতার বাসভবনের সামনে থাকা আটটি মোটরসাইকেলে ভাঙচুর চালান। তারা কার্যালয়ের দেড়শ চেয়ার, চারটি টেবিল ও বাড়ির আসবাব তছনছ করেন।
সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ১২ জনকে আটক করা হয়েছে।
যশোরের অভয়নগরে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। উপজেলার চাঁপাতলার মালোপাড়ায় শতাধিক বাড়ি ঘর ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।
এছাড়া দেশের আরো বেশ কিছু এলাকায় বিরোধী জোট ও ক্ষমতাসীন সমর্থকদের মধ্যে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে।
একদিকে বিএনপি-জামায়াতের টানা হরতাল-অবরোধ চলছে, অন্যদিকে বিরোধী জোটের নির্বাচন বর্জন ও চরম বিরোধিতা সত্ত্বেও রবিবার ক্ষমতাসীন জোট দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করে। এ নির্বাচনে যদিও কমসংখ্যক ভোটারের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।
এতদিন হরতাল-অবরোধ নিয়ে আতঙ্কিত থাকলেও এখন যোগ হয়েছে নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংসতা। এটি ছড়িয়ে পড়েছে গ্রামেগঞ্জে। শুধু রাজনৈতিক কর্মী-সমর্থকরাই নয়, সহিসংতার শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষও।
রাজধানী ঢাকাতে নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংসতার তেমন কোনো খবর পাওয়া না গেলেও এ নিয়ে শঙ্কিত সবাই। সাধারণ মানুষের মধ্যে কমবেশি আতঙ্ক বিরাজ করছে এ নিয়ে।
(দ্য রিপোর্ট/কেএ/জেএম/জানুয়ারি ০৭, ২০১৪)