জোসনা জামান, দ্য রিপোর্ট : আবারও ব্যয় বাড়ছে মিরপুর-বিরুলিয়া-আশুলিয়া সড়ক নির্মাণে। এর আগে, একবার ব্যয় বেড়েছিল প্রায় ১২ কোটি টাকা। দ্বিতীয় দফায় এবার আরো ১২ কোটি ৮৩ লাখ টাকা ব্যয় এবং একই সঙ্গে বাস্তবায়নের মেয়াদ চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে।

নতুন প্রস্তাবে দেখানো ব্যয় মোট প্রকল্প ব্যয় থেকে ৩৫ শতাংশ বেশি। কারণ হিসেবে যোগাযোগ মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, ভূমি অধিগ্রহণে পরিমাণ হ্রাস ও ব্যয় বৃদ্ধি, মাটির কাজ ও রক্ষাপ্রদ কাজের পরিমাণ ও ব্যয় বৃদ্ধি, আরসিসি সেতু ও পেভমেন্ট নির্মাণের পরিমাণ কমে যাওয়া এবং সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের রেট শিডিউল ২০১১ অনুযায়ী প্রকল্প ব্যয় হালনাগাদ করনের কারণেই প্রকল্পের ব্যয় বাড়ছে।

প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা সচিব ও ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য ভূঁইয়া সফিকুল ইসলাম এ বিষয়ে দ্য রিপোর্টকে বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে ঢাকা জেলার বিরুলিয়া হতে আশুলিয়া পর্যন্ত সড়ক নির্মাণের মাধ্যমে সুষ্ঠু ও নিরাপদ সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপন ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন হবে। তাই সংশোধিত প্রস্তাব বিবেচনাযোগ্য। এ ছাড়া ২০১৩ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্পটির কাজের বাস্তব অগ্রগতি ৯৫ শতাংশ এবং আর্থিক অগ্রগতি ৩৪ কোটি ১৪ লাখ ৯৯ হাজার টাকা যা মূল প্রকল্পের ৯২ দশমিক ২৭ শতাংশ।

যোগাযোগ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের যানবাহন ঢাকায় যাতায়াতের সময় সাভার, বালিয়ারপুর, আমিনবাজার ও গাবতলীতে প্রতিনিয়ত ব্যাপক যানজটের সম্মুখীন হতে হয়। এ অবস্থায় মিরপুর মাজার সড়ক হতে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ হয়ে সাভার উপজেলার বিরুলিয়া হতে সিএন্ডবি আশুলিয়া সড়কের চরাবাগ পয়েন্টে আশুলিয়া পর্যন্ত প্রায় ১০ দশমিক ৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়ক নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। এটি সাভার বাইপাস সড়ক হিসেবে নির্মাণ করা হচ্ছে।

মূল প্রকল্পটি ২০ কোটি ৭২ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০০১ সালের ১০ জুলাই জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়। ২০০৩ সালের মধ্যে এটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব পায় সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী বাস্তবায়নের কাজ শেষ করতে না পারায় ২০০৬ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর প্রকল্পটির ব্যয় ও মেয়াদ বাড়িয়ে প্রথম সংশোধনী প্রস্তাব অনুমোদন করে একনেক। এ সময় ব্যয় প্রায় ১২ কোটি টাকা বেড়ে দাঁড়ায় ৩৬ কোটি ৮৩ লাখে। বাস্তবায়ন কাল ২০০৮ সাল পর্যন্ত বেড়ে যায়।

নতুন প্রস্তাব পাওয়ার পর ২০১০ সালের ২১ মার্চ এবং ১৫ জুলাই দুই দফা প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সড়ক বিভাগ তাদের প্রস্তাবিত মোট ব্যয় ৬৪ কোটি ১২ লাখ থেকে কমিয়ে ৫৮ কোটি ৪৬ লাখ ৮২ হাজার টাকায় ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) পুনর্গঠন করে।

পুনর্গঠিত ডিপিপির উপর ২০১৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি পুনরায় পিইসি সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) নেতৃত্বে আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করে ব্যয় যুক্তিযুক্তকরণ করা হয়। কমিটির মোট ব্যয় প্রস্তাবিত ৫৮ কোটি ৪৬ লাখ ৮২ হাজার টাকা থেকে কমিয়ে ৪৯ কোটি ৬৬ লাখ ২৪ হাজার টাকা নির্ধারণের সুপারিশ করে। সুপারিশ অনুযায়ী ডিপিপি পুনর্গঠন করে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠালে ২০১৩ সালের ১০ নভেম্বর আবারও পিইসি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সভায় প্রকল্পটির দ্বিতীয় সংশোধনী প্রস্তাব জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদনের সুপারিশ করা হয়।

জাতীয় নির্বাচন এবং নতুন সরকার গঠনের কারণে বর্তমানে স্থগিত থাকা একনেক পুনরায় চালু হলেই এ সংশোধনী প্রস্তাবটি অনুমোদন দেওয়া হবে বলে পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে।

প্রকল্পটির আওতায় যে সব কার্যক্রম করা হচ্ছে সেগুলো হলো- ৩ দশমিক ১৪ হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণ, ৫ দশমিক শূন্য ৩ লাখ ঘনমিটার সড়ক বাঁধে মাটির কাজ, ৯ দশমিক ৩৮ কিলোমিটার পেভমেন্ট নির্মাণ, ২২২ দশমিক ৬৪ মিটার দুটি আরসিসি সেতু নির্মাণ, ২০ মিটার চারটি আরসিসি কালভার্ট, রক্ষাপ্রদ কাজে ৪০ হাজার বর্গমিটার সিসি ব্লকসহ জিওটেক্সটাইল, একটি ইন্টারসেকশন উন্নয়ন এবং আনুষাঙ্গিক কাজ।

প্রকল্পটির দ্বিতীয় সংশোধনী প্রস্তাবে বলা হয়েছে, সরকারের চলমান ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের আওতায় ৪ হাজার ৬৭২ কিলোমিটার নতুন সড়ক নির্মাণ, ৮ হাজার ৪৩৩ কিলোমিটার সড়ক উন্নয়ন বা পুনর্বাসন এবং ২৩ হাজার ৭৭৭ মিটার নতুন সেতু বা কালভার্ট নির্মাণ এবং ১০ হাজার ৩৬২ মিটার সেতু বা কালভার্ট পুনঃনির্মাণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গৃহীত এ প্রকল্পটি ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার লক্ষ্যপূরণে সহায়ক হবে।

(দ্য রিপোর্ট/জেজে/এমএআর/জানুয়ারি ০৭, ২০১৪)