আহমদুল হাসান আসিক, দ্য রিপোর্ট : রাজধানীর বাবুবাজার ব্রিজ দিয়ে যাতায়াতকারী পরিবহন থেকে চাঁদা আদায় ও পরিবহন শ্রমিককে মারধর করার জের ধরে ফুলবাড়িয়া বাস টার্মিনালের সামনে এক ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে পরিবহন শ্রমিকরা। তবে চাঁদা আদায় ও অবরোধের বিষয়ে পুলিশ কিছুই জানে না বলে একাধিক থানার দায়িত্বরত কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে পরিবহন শ্রমিকরা বাস ব্যারিকেড দিয়ে প্রায় এক ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে রাখে। এর ফলে রাস্তার উভয় পাশে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। এরপর পুলিশ এবং বাস মালিকরা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

পরিবহন শ্রমিকরা জানায়, বাবুবাজার ব্রিজ থেকে স্থানীয় যুবলীগ নেতা এরফানের নেতৃত্বে একটি চাঁদাবাজ চক্র ওই রুটে চলাচলকারী পরিবহন থেকে বাস প্রতি ১০০ টাকা চাঁদা আদায় করে। এ নিয়ে তাদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে ক্ষোভ বিরাজ করছে।

পরিবহন শ্রমিক হাবিবুর রহমান জানান, বিভিন্ন সময় পুলিশ ও প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করে কোনো প্রতিকার হয়নি। আর এতে চাঁদাবাজরা আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে। এখন তারা ২০০ টাকা করে চাঁদা দাবি করে।

তিনি আরও জানান, ২০১৩ সালের নভেম্বর পর্যন্ত বাবুবাজার ব্রিজ থেকে টোল আদায় করা হয়। এরপর টোল বন্ধ হয়ে গেলে সন্ত্রাসীরা টোলের টাকা চাঁদা হিসেবে আদায় করছে।

পরিবহন শ্রমিক মো. জয়নাল হোসেন বলেন, হরতাল ও অবরোধকে কেন্দ্র করে তারা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। অবরোধে বাসপ্রতি আরও বেশি চাঁদা দাবি করে তারা। যদি কেউ দিতে রাজি না হয় সেক্ষেত্রে বিভিন্ন সময় পরিবহন শ্রমিকদের হুমকি প্রদান ও মারধর করা হয়।

জানা যায়, মঙ্গলবার পরিবহন শ্রমিকদের অভিযোগের বিষয়ে লালবাগ জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার হারুন অর রশীদকে অবগত করা হয়। এরপর তিনি চাঁদাবাজ চক্রের ৪ সদস্যকে হাতেনাতে আটক করেন।

এতে স্থানীয় যুবলীগ নেতা এরফানের নেতৃত্বে বিকেল ৩টার দিকে নগর পরিবহনের চালক আনোয়ার হোসেনকে মারধর করে আহত করা হয়। আনোয়ারকে মিটফোর্ড হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এই ঘটনার জের ধরেই পরিবহন শ্রমিকরা ক্ষিপ্ত হয়ে সড়ক অবরোধ করে।

এ সম্পর্কে নগর পরিবহন বাসের মালিক মো. আবুল কালাম বলেন, হরতাল অবরোধে চালকরা রাস্তায় বের হতে চায় না। কেননা রাস্তায় বের হলেই জীবনের ঝুঁকি। এরপরও আমরা চালকদের অনেক অনুরোধ করে বাস রাস্তায় বের করি। কিন্তু সরকারদলীয় স্থানীয় সন্ত্রাসীরা যদি বাধা প্রদান করে চাঁদা আদায় করে এটা মেনে নেওয়া যায় না।

তিনি আরও জানান, আমরা চাঁদাবাজদের বিষয়ে ডিসি হারুনকে অনেকবার বলেছি। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি।

ফুলবাড়িয়া বাস টার্মিনাল শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ইসমাঈল হোসেন বলেন, আমরা অনেকটা বাধ্য হয়েই সড়ক অবরোধ করি। দীর্ঘদিন ধরে চাঁদা আদায়ের বিষয়ে ওসি, ডিসি এবং র‌্যাব-৩ কে জানিয়েও কোনো কাজ হয়নি। তবে ওসি এবং ডিসির অনুরোধে আমরা সড়ক মুক্ত করে দিয়েছি। এর প্রতিকার না হলে আমরা আবার সড়ক অবরোধ করব।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিন থানার অফিসার ইনচার্জ এবং লালবাগ জোনের ডিসি কিছুই জানে না বলে দ্য রিপোর্টের এই প্রতিবেদককে ফোনে জানিয়েছেন।

কোতোয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাহ আলম বলেন, আমি ঘটনার বিষয়ে জানি না। বংশাল থানায় যোগাযোগ করেন। বংশাল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল কুদ্দুস ফকির বলেন, আমি ঘটনার সময় মিটিংয়ে ছিলাম। আপনি পল্টন মডেল থানায় যোগাযোগ করেন। পল্টন মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) গোলাম সারোয়ার বলেন, ফুলবাড়িয়া আমার এলাকায় পড়েনি। আমি কিছু বলতে পারব না।

ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে লালবাগ জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) হারুন অর রশীদ বলেন, আমি মিটিং-এ আছি, এমন কোনো ঘটনা আমার জানা নেই।

(দ্য রিপোর্ট/ এএইচএ/ এইচএসএম/ এনআই/ জানুয়ারি ০৭, ২০১৪)