মাহফুজ স্বপন ও রাজু হামিদ, দ্য রিপোর্ট : বিরোধী দলবিহীন দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সর্বোচ্চ ৯০ দশমিক ৩৬ শতাংশ ভোট পড়েছে গোপালগঞ্জ-২ আসনে। এর আগের নির্বাচনে (নবম) এই আসনে ভোটার উপস্থিতি ছিল ৮২ দশমিক ৭৭ শতাংশ। তখন সকল দল নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল।

এই আসনে পুনরায় এমপি নির্বাচিত হয়েছেন আও্য়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফুফাতো ভাই শেখ ফজলুল করিম সেলিম।

অন্যদিকে সবচেয়ে কম ভোট (১০ দশমিক ৮৮ শতাংশ) পড়েছে ঢাকা-১৫ আসনে। সেখানে গত নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ছিল ৭৪ দশমিক ০৫ শতাংশ। এই আসনে পুনরায় এমপি নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের কামাল আহমেদ মজুমদার।

নির্বাচন কমিশন থেকে প্রাপ্ত ফলাফল বিশ্লেষণ করে এই তথ্য পাওয়া গেছে।

গত ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত সারাদেশের ১৪৭টি আসনের ১৭২৪৯টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত এর মধ্যে আটটি আসনের ২০৫টি কেন্দ্রের ফলাফল স্থগিত করা হয়েছে। স্থগিত কেন্দ্রগুলোর ফলাফল বাদ দিলে শতকরা ৪০ দশমিক ৫৬ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে দাবি করেছে নির্বাচন কমিশন।

বিরোধী দলবিহীন এই নির্বাচনে প্রার্থীদের হার জিতের চেয়েও মানুষের বেশি কৌতূহল ভোটার উপস্থিতি নিয়ে। নির্বাচন শেষে এ নিয়ে এখন পর্যন্ত চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ।

ভোটার উপস্থিতি নিয়ে নির্বাচন কমিশনের দেওয়া তথ্য নিয়েও রয়েছে বিতর্ক। দেশীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ সংস্থা বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন ও ফেয়ার ইলেকশন মনিটরিং এ্যালায়েন্স (ফেমা)দাবি করেছে, নির্বাচনে সব মিলিয়ে গড়ে ১০ শতাংশ ভোট পড়েছে।

ফেমার প্রধান মুনিরা খান সংবাদিকদের জানান, এবারের নির্বাচনে সব মিলিয়ে গড়ে ১০ শতাংশেরও কম ভোটার ভোট দিয়েছেন।

মানবাধিকার কমিশনের পরিচালক অ্যাডভোকেট এ কে আজাদ বলেন, ভোট কেন্দ্রগুলোতে ভোটার ছিলো খুবই স্বল্পসংখ্যক। বেশির ভাগ ভোটকেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি ছিলো শতকরা শূন্য ভাগ থেকে ১০ ভাগ পর্যন্ত।

সর্বোচ্চ ভোট পাওয়া আসন

সর্বোচ্চ ভোট পাওয়া দশটি আসনের তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে আছে (৮৯ দশমিক ৯৫ শতাংশ) গোপালগঞ্জ-৩ আসন। এই আসনে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই আসনে গত নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ছিলো ৮৭ দশমিক ৫৪ শতাংশ।

এরপরে ৮৯ দশমিক ৭৪ শতাংশ ভোট পড়েছে গোপালগঞ্জ-১ আসনে। এই আসনে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন মুহাম্মদ ফারুক খান। যেখানে গত নির্বাচনে ভোট পড়েছিলো ৮৪ দশমিক ২৪ শতাংশ।

শতকরা ৭১ দশমিক ৫২ শতাংশ ভোট পড়েছে ভোলা-৩ আসনে (নবমে-৮৬ দশমিক ৯৬ শতাংশ)। এই আসনে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন।

শতকরা ৭০ দশমিক ৪৮ শতাংশ ভোট পড়েছে লালমনিরহাট-১ আসনে (নবমে-৯১ দশমিক ৭৯ শতাংশ)। এই আসনে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের মো. মোতাহার হোসেন।

শতকরা ৬৮ দশমিক ৯৩ শতাংশ ভোট পড়েছে চট্টগ্রাম-১৩ আসনে (নবমে-৮৮ দশমিক ০৩ শতাংশ)। সেখানে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের সাইফুজ্জামান চৌধুরী।

শতকরা ৬৮ দশমিক ৬০ শতাংশ ভোট পড়েছে বরিশাল-৪ আসনে (নবমে-৮৫ দশমিক ৬৩ শতাংশ)। এই আসনে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের পংকজ নাথ।

শতকরা ৬৮ দশমিক ৩২ শতাংশ ভোট পড়েছে শেরপুর-১ আসনে (নবমে-৮৭ দশমিক ৭৬ শতাংশ)। এই আসনে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের মো. আতিউর রহমান আতিক।

শতকরা ৬৭ দশমিক ৫১ শতাংশ ভোট পড়েছে কুমিল্লা-৫ আসনে (নবমে-৮৪ দশমিক ১৮ শতাংশ)। সেখানে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের আবদুল মতিন খসরু।

শতকরা ৬৫ দশমিক ৯৪ শতাংশ ভোট পড়েছে চট্টগ্রাম-৩ আসনে (নবমে-৮২ দশমিক ৭২ শতাংশ)। এই আসনে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের মাহফুজুর রহমান।

সর্বনিম্ন ভোট পাওয়া আসন

অন্যদিকে সর্বনিম্ন ভোট পাওয়া দশ আসনের দ্বিতীয় অবস্থানে আছে বগুড়া-৪ আসন। এই আসনে ভোট পড়েছে ১২ দশমিক ৭৫ শতাংশ (নবমে-৯২ দশমিক ০৫ শতাংশ)। এমপি নির্বাচিত হয়েছেন জাসদের এ, কে, এম রেজাউল করিম তানসেন।

এরপর ১৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ ভোট পড়েছে চট্টগ্রাম-১১ আসনে (নবমে-৮৭ দশমিক ৫৮ শতাংশ)। সেখানে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের এম, আবদুল লতিফ।

শতকরা ১৪ দশমিক ৫৩ শতাংশ ভোট পড়েছে ঢাকা-৪ আসনে (নবমে-৮১ দশমিক ৩২ শতাংশ)। সেখানে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন জাতীয় পার্টির সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা।

শতকরা ১৫ দশমিক ৩৮ শতাংশ ভোট পড়েছে ঝিনাইদহ-৩ আসনে (নবমে-৯৩ দশমিক ৭৬ শতাংশ)। এমপি নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের মো. নবী নেওয়াজ।

শতকরা ১৬ দশমিক ৫৯ শতাংশ ভোট পড়েছে সাতক্ষীরা-২ আসনে (নবমে-৯১ শতাংশ)। এই আসনে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের মীর মোস্তাক আহমেদ রবি।

শতকরা ১৭ দশমিক ৯৮ শতাংশ ভোট পড়েছে রংপুর-৩ আসনে (নবমে-৮২ দশমিক ০১ শতাংশ)। এমপি নির্বাচিত হয়েছেন জাতীয় পার্টির হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।

শতকরা ১৮ দশমিক ০৫ শতাংশ ভোট পড়েছে ঢাকা-১৭ আসনে (নবমে-৭৩ দশমিক ৫২ শতাংশ)। এমপি নির্বাচিত হয়েছেন বিএনএফ’র এস এম আবুল কালাম আজাদ।

শতকরা ১৮ দশমিক ৩৫ শতাংশ ভোট পড়েছে ঢাকা-১৬ আসনে (নবমে-৭৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ)। সেখানে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন মো. ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাহ্।

শতকরা ২০ দশমিক ২৯ শতাংশ ভোট পড়েছে মৌলভীবাজার-২ আসনে (নবমে-৮৫ দশমিক ৯৫ শতাংশ)। সেখানে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন স্বতন্ত্র মো. আব্দুল মতিন।

(দ্য রিপোর্ট/এমএস-আরএইচ/এইচএসএম/এনআই/জানুয়ারি ০৭, ২০১৪)