পদ্মা অয়েলের এমডির অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান করবে দুদক
হাসিব বিন শহিদ, দ্য রিপোর্ট : পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. আবুল খায়েরের অবৈধ সম্পদের তদন্ত করবে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এরই মধ্যে তার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সম্পদের বিবরণী দাখিলের জন্য নোটিশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, মো. আবুল খায়েরের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের হিসাব চেয়ে নোটিশ দাখিলের বিষয়ে বুধবার সকালে সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। আজকালের মধ্যেই তাকে নোটিশ দেওয়া হচ্ছে। দুদক কার্যালয়ে বুধবার কমিশনের চেয়ারম্যান মো. বদিউজ্জামান সম্পদ বিবরণী নোটিশ জারির অনুমোদন দেন।
দুদকের অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা উপ-পরিচালক (টাঙ্গাইল সমন্বিত জেলা কার্যালয়) জাহাঙ্গীর আলম দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘সম্পদ বিবরণী নোটিশ জারির জন্য কমিশনের অনুমোদনের কপি এখনো হাতে আসেনি। অনুমোদনের কপি আসলেই আবুল খায়েরের বিরুদ্ধে সম্পদ বিবরণী নোটিশ করা হবে। নিয়ম অনুসারে নোটিশের সাত দিনের মধ্যে তাকে স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের হিসাব কমিশনে দাখিল করতে হবে।’
দুদক সূত্র জানায়, প্রাথমিক অনুসন্ধানে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের প্রমাণ পাওয়ায় তার বিরুদ্ধে এ নোটিশ জারির অনুমোদন দিয়েছে কমিশন। দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে তার স্থাবর-অস্থাবর যাবতীয় সম্পদের তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। তার বিরুদ্ধে সম্পদ বিবরণীর নোটিশ করলে যাবতীয় হিসাব পাওয়া যাবে।
এ ছাড়া অধিকতর অনুসন্ধানে আরও সম্পদের হিসাব পাওয়া যেতে পারে। এমতাবস্থায় মো. আবুল খায়েরের বৈধ আয়, সম্পদ ও দায় দেনার সঠিক হিসাব নিরুপনের জন্য তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪ এর ২৬(১) ধারা মোতাবেক সম্পদ বিবরণী নোটিশ জারির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
সূত্র জানায়, মো. আবুল খায়ের ১৯৮২ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেন। তিনি ১৯৮৩ সালের ৬ নভেম্বর পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের অফিসার গ্রেড এম-ভি হিসেবে যোগদান করেন। পরবর্তী সময়ে ২০০৭ সালের ১৮ জুন জিএম পদে এবং ২০১১ সালের ১৯ জুলাই এমডি হিসেবে পদোন্নতি লাভ করেন। পদাধিকার বলে তিনি পদ্মা অয়েল কোম্পানির সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইএলবিএল এর পরিচালনা পর্ষদের সদস্য। বেতন, ভাতা, ইনসেনটিভ বোনাস, সহযোগী প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য হিসেবে সম্মানী ভাতা এবং গুলশানের নিজ ফ্ল্যাট ভাড়া বাবদ বছরে মোট প্রায় আট লাখ ৭৪ হাজার ৬১৬ টাকা তার বৈধ আয়।
সূত্র আরও জানায়, চট্টগ্রাম জেলার মুরাদপুর সুগন্ধা আবাসিক এলাকার সড়ক নম্বর-১/খ, বাসা নম্বর-২৩ এ আবুল খায়েরের কোনো বাড়ি নেই। সেখানে আবুল খায়েরের স্ত্রী মিসেস মনোয়ারা খায়েরের নামে একটি ফ্ল্যাট ছিল। যা ১৯৯৯ সালের ১৫ নভেম্বর পাঁচ লাখ টাকায় বিক্রি করা হয়েছে। ১৯৯০ সালে আবুল খায়ের তার স্ত্রীর নামে চট্টগ্রামের ডবলমরিং থানার পাহাড়তলী মৌজার জেএল নম্বর-৫, মৌজার ২৩০০৬ আরএস জরিপের ৪৫ নম্বর খতিয়ানের ১০ শতক জমি দেড় লাখ টাকায় ক্রয় করেন।
রাজধানীর গুলশানে রোড নম্বর-১১৩/এ, বাড়ি নম্বর-০১ এ সাত কাঠা জমির ওপর নির্মিত ছয় তলা বাড়ির একটি ফ্ল্যাটের মালিক আবুল খায়েরের স্ত্রী। তিনি ২০ লাখ ৩৫ হাজার টাকায় ওই ফ্ল্যাটের মালিকানা লাভ করেন। আবুল খায়ের ১৯৮৭ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি গুলশান সাব রেজিস্ট্রি অফিসের কবলা দলিল নম্বর-২৪৫৯/৮৭ মূলে পাঁচ শতক জমিসহ একটি পুরাতন দোতলা বিল্ডিং সাত লাখ টাকায় ক্রয় করেন। এ সম্পত্তি ক্রয়ের জন্য তিনি বাংলাদেশ হাউজ বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশনের চার লাখ টাকা লোন করেন। পরবর্তী সময়ে তিনি ওই জমির দুই দশমিক পাঁচ শতক তার বড় বোন মিসেস ফিরোজা বেগমকে দান করেন।
স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ শাখায় মো. আবুল খায়েরের স্ত্রী মনোয়ারা বেগমের নামে একটি সঞ্চয়ী হিসাব রয়েছে। ওই ব্যাংক হিসাবে পৈত্রিক সূত্রে প্রাপ্ত আয় এবং দুটি ডেভেলপার কোম্পানি প্রদত্ত সাইনিং মানি বাবদ প্রাপ্ত অর্থ জমা রয়েছে। তবে ব্যাংক স্টেটমেন্ট না পাওয়ায় ওই অ্যাকাউন্টে কত টাকা জমা আছে তার সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি।
আবুল খায়ের ৩১ বছর চাকরি জীবনে স্ত্রী মনোয়ারা খায়ের ও তার নিজের নামে অর্জিত স্থাবর সম্পদের মোট মূল্য ৩৪ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। আবুল খায়েরের চাকরি জীবনে নিজস্ব আয় ব্যতীত গৃহীত ঋণের পরিমাণ মোট ২৪ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। ২০১১-১২ অর্থ বছর পর্যন্ত তার লোনসহ নিট বৈধ আয়ের পরিমাণ ৫৭ লাখ ৩৬ হাজার টাকা।
প্রসঙ্গত, গত বছরের জুনে বিজ্ঞাপন না দিয়ে এবং নিয়োগ কমিটি গঠন ছাড়া ৮৮ জন কর্মচারিকে চাকরি দেওয়ার অভিযোগে দুদকের দায়ের করা পৃথক তিনটি মামলার আসামি তিনি।
(দ্য রিপোর্ট/এইচবিএস/এনডিএস/আরকে/জানুয়ারি ০৮, ২০১৪)