পর্যাপ্ত সেবা পাচ্ছেন না ব্যাংক গ্রাহকরা
পর্যাপ্ত সেবা পাচ্ছেন না ব্যাংকের গ্রাহকরা। অনেক ক্ষেত্রেই তাদের হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা না থাকায় গ্রাহকদের আমানত ব্যাংকগুলো তাদের নিজস্ব কাজে ব্যবহার করছে। গ্রাহকদের সর্বনিম্ন আমানতের অর্থ ব্যাংকগুলো এটিএম সম্প্রসারণসহ নিজস্ব কাজে ব্যবহার করছে। আবার গ্রাহকদের অবগত না করেই গ্রাহক হিসাবের সর্বনিম্ন অর্থ জমা রাখার পরিমাণ বাড়ানো-কমানো হচ্ছে। গ্রাহক হিসাবের সর্বনিম্ন জমাকৃত অর্থের পরিমাণ ও এই অর্থের বিপরীতে সুদহার নিয়ে ডিসেম্বরেই বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা পড়েছে শতাধিক অভিযোগ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, দেশের সকল তফসিলি ব্যাংকে মোট হিসাবধারীর (অ্যাকাউন্ট) সংখ্যা ৪ কোটি ৮০ লাখ। যা মোট জনসংখ্যার ২৫ দশমিক ৫ শতাংশ। গ্রাহকদের অ্যাকাউন্টে সর্বনিম্ন আমানত (ব্যালেন্স) ৫শ’ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা জমা রাখতে বলে ব্যাংক কর্মকর্তারা। একেক ব্যাংকের ক্ষেত্রে এই হার একেক রকম।
জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব নীতিমালা না থাকায় ব্যাংকগুলো নিজেদের ইচ্ছামত জমা রাখার এই হার নির্ধারণ করে। সঞ্চয়ী আমানতের নিয়ম অনুযায়ী এই অর্থের বিপরীতে গ্রাহকদের ১১.২৫ শতাংশ সুদ (এফডিআর) পাওয়ার কথা। অথচ ব্যাংকগুলো low cost fund strategy-এর কথা বলে আমানতকারীদের ৫ শতাংশ সুদ দিচ্ছে। এফডিআর সুদ ও low cost fund strategy ব্যবধানে ৬ দশমিক ২৫ শতাংশ সুদহারের অর্থ দিয়ে ব্যাংকগুলো এটিএম সম্প্রসারণ, গ্রাহকদের ক্ষুদে বার্তা প্রেরণ ও অন্যান্য কাজ করে। অনেক সময় গ্রাহকদের অবগত না করে অ্যাকাউন্টে সর্বনিম্ন অর্থ জমা রাখার পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়।
সম্প্রতি ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের গ্রাহক সাবিকুন্নাহার রীতা (এটিএম হিসাব নম্বর ০১০৭ ০০৪ ০৪৫১১) দিলকুশা শাখার এটিএম বুথ থেকে ৯ হাজার টাকা উত্তোলন করতে চাইলে NO Available Fund ম্যাসেজ আসে। এই বিষয়টি সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে জানালে তাকে এক হাজার টাকা জমা রেখে বাকি টাকা উত্তোলন করতে বলে। গত মাসেও এই জমার পরিমাণ ছিল ৫০০ টাকা।
এই বিষয়ে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের দিলকুশা শাখার ব্যবস্থাপক মো. এহতেশামুল হক খান বলেন, আমাদের ব্যাংকে সর্বনিম্ন পাঁচশ টাকা জমা রাখতে হয়। তা হলে এই গ্রাহকের কেন ১ হাজার টাকা জমা রাখতে বলা হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আপনি আমাদের এটিএম শাখার প্রধান মি. ইকবাল সাহেবের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।’
এই বিষয়ে এটিএম শাখার প্রধান ইকবালকে একাধিকবার ফোন ও ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়ে মন্তব্য চাওয়া হলেও কোনো জবাব পাওয়া যায়নি।
হয়রানির বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মাহফুজুর রহমান দ্য রিপোর্টকে বলেন, ব্যাংক-গ্রাহক সম্পর্ককে আমরা সবসময় উৎসাহিত করে আসছি। এখন কেউ যদি এর সুযোগ নেয় তবে তা খতিয়ে দেখা হবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা দ্য রিপোর্টকে বলেন, গ্রাহকদের অ্যাকাউন্টে সর্বনিম্ন আমানতের অর্থ ব্যাংকগুলো এটিএম সম্প্রসারণসহ নিজস্ব কাজে ব্যবহার করে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, অক্টোবর পর্যন্ত দেশের ব্যাংকিং খাতে ৫১ হাজার ৯ শ’ ২৫ কোটি টাকার ডিমান্ড ডিপোজিট (যেকোনো সময় উত্তোলন করা যায় এমন) রয়েছে। টেলার, এটিএম, অনলাইন ব্যাংকিং কার্যক্রমের মধ্যে ১১ হাজার শাখার মাধ্যমে প্রতিদিন এই বিপুল পরিমাণ অর্থ লেনদেন হচ্ছে।
(দ্য রিপোর্ট/আএইচ/এইচএসএম/এনআই/জানুয়ারি ০৭, ২০১৪)