দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ছেড়ে দেওয়া আসন রংপুর-৬ (পীরগঞ্জ) থেকে উপ-নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন তার ছেলে সজিব ওয়াজেদ জয়। জয়ের পৈত্রিক বাড়িও পীরগঞ্জে। আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা বিষয়টি দ্য রিপোর্টকে নিশ্চিত করেছেন।

এ ছাড়া এমন ইংগিত খোদ প্রধানমন্ত্রীও দিয়েছেন। গত বছর ৩১ ডিসেম্বর রংপুরের পীরগঞ্জে তরফমৌজা হাইস্কুল মাঠে আওয়ামী লীগ আয়োজিত নির্বাচনী জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের পর জয়কে আপনাদের কাছে পাঠিয়ে দেবো। সে আপনাদের সেবা করবে। রংপুরকে বিভাগ করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছে। এখানে উন্নয়নের জন্য যা যা করা দরকার সবই হবে।’

এদিকে নির্বাচনী পথসভা ও জনসংযোগ করতে বৃহস্পতিবার রংপুর ও পীরগঞ্জে যাচ্ছেন সজিব ওয়াজেদ জয়। এর আগে ২০১৩ সালের ৩১ জুলাই মায়ের সফরসঙ্গী হিসেবে পীরগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত এক জনসভায় যোগ দিতে রংপুরে গিয়েছিলেন তিনি।

জনসভায় রংপুরের আঞ্চলিক ভাষায় তিনি বলেন, আপনাদের কথা দিলাম ‘মুই ফিরি আসিম’ (আমি ফিরে আসবো)। উত্তরবঙ্গের কথা ভুলবো না। যেখানেই থাকি উত্তরবঙ্গের উন্নয়ন করতেই থাকবো। এর আগে ২০১০ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য করা হয় ড. ওয়াজেদ মিয়ার সন্তান সজিব ওয়াজেদ জয়কে।

নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মহাজোট নেতা হিসেবে জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে উপহার হিসেবে রংপুর-৬ আসনটি পান আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রংপুর-৬ এর পীরগঞ্জের এই আসন থেকে প্রথম নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এর আগের সংসদ নির্বাচনগুলোতে গোপালগঞ্জ-৩ ছাড়া ঢাকার কয়েকটি আসন ও বাগেরহাট, খুলনা ছাড়া এই আসন থেকে কখনই নির্বাচন করেননি তিনি।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গোপালগঞ্জ-৩, রংপুর-৬ ও নড়াইল-১ আসন থেকে মনোনয়ন সংগ্রহ করলেও নড়াইল-১ আসনটি ছেড়ে দিয়ে গোপালগঞ্জ-৩ ও রংপুর-৬ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সিদ্ধান্ত নেন শেখ হাসিনা।

আওয়ামী লীগ নেতারা জানান, সজিব ওয়াজেদ জয়কে এই আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত করানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী অনেক আগে থেকে কাজ করছেন।

রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম রাজু দ্য রিপোর্টকে বলেন, আমরা চাই, এ অঞ্চলের মানুষ চায় সজিব ওয়াজেদ জয় রংপুর-৬ আসন থেকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুন। সেটা সারাদেশের মানুষও চায়।

১৯৭৩ সালের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে করিম উদ্দিন আহাম্মদ নির্বাচিত হন। ১৯৭৯ সালের দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হন মজিবর রহমান। ১৯৮৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত এই আসনটি জাতীয় পার্টির দুর্গ হিসেবেই পরিচিত ছিলো। ১৯৮৬ সালের তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হন আব্দুল জলিল প্রধান। ১৯৮৮ সালের চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রাথী হিসেবে পুনরায় নির্বাচিত হন আব্দুল জলিল প্রধান। ১৯৯০ সালে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের পরও ১৯৯১ সালের পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসন থেকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ নির্বাচিত হন।

১৯৯৬ সালের সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসন থেকে পুনরায় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ নির্বাচিত হন। ওই সময় দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন আওয়ামী লীগের মতিয়ার রহমান চৌধুরী। ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসন থেকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী নুর মোহাম্মদ মণ্ডল ৯০৭৩০ ভোটে নির্বাচিত হন। এই নির্বাচনে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ৭৭৯৯১ ভোটে।

এরপর ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির সমর্থনে মহাজোট নেতা হিসেবে এই আসন থেকে নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

(দ্য রিপোর্ট/এইউএ/এসবি/এমডি/জানুয়ারি ০৮, ২০১৪)