এবার গুরুত্ব পাচ্ছেন প্রবীণরা
মন্ত্রী বানাতে হলফনামা যাচাই করছেন শেখ হাসিনা
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : বিতর্কিত ও ব্যর্থদের বাদ দিয়ে নতুন মন্ত্রিসভা গঠন করতে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে নড়বড়ে অবস্থান সুসংহত ও প্রতিকূল পরিস্থিতি কঠোর হাতে দমন করতে এবার মন্ত্রী পরিষদে রাখছেন গতবার বাদ পড়া প্রবীণ নেতাদের। নির্ধারিত মেয়াদের আগেই দায়িত্ব নিয়ে ঝুঁকিমুক্ত থাকতে তড়িঘড়ি করে সরকার গঠন করতে চেয়েছে দলটির নীতি নির্ধারণী মহল। তাতে অব্যাহত সহিংসতা মোকাবেলায় দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হবে।
দশম জাতীয় সংসদের ভোটার বিহীন নির্বাচনের কলঙ্ক মোচনও এ প্রক্রিয়ার অংশ বলে মনে করছেন রাজনীতি বিশ্লেষকরা। দ্রুত সরকার গঠনের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এসব যুক্তিই উপস্থাপন করছেন দলটির শীর্ষ নেতারা।
জানা গেছে, আগের মন্ত্রিসভায় নতুন মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব দেওয়ার পরে রাতারাতি সম্পদশালী বনে যাওয়ার ঘটনাও গতবারের মন্ত্রীদের ব্যাপারে শেখ হাসিনাকে হতাশ করেছে। তাছাড়া দায়িত্ব পালনেও নতুন অনেকেই ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন বলেও মনে করেন প্রধানমন্ত্রী। তাই তাদের প্রতি বিরাগভাজন তিনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ কয়েকজন দ্য রিপোর্টকে এ তথ্য জানান।
মন্ত্রী বানাতে তোড়জোড়ের অংশ হিসেবে এবার দশম সংসদ নির্বাচনে যারা দলের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে এসেছেন নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া তাদের সবার হলফনামা যাচাই-বাছাই করছেন শেখ হাসিনা। জানা গেছে এবারের মন্ত্রিসভায় ৪০ থেকে ৬০ জন সদস্য থাকবেন। টেকনোক্রেট কোটায়ও মন্ত্রী নেওয়া হবে। এক্ষেত্রে দলের ও নাগরিক সমাজের বিশিষ্ট কয়েকজন আসতে পারেন। তবে দুই দফায় মন্ত্রীদের শপথ অনুষ্ঠান হতে পারে। নাগরিক সমাজের কাদের মন্ত্রীত্ব দেওয়া যায় তা নিয়ে পর্যালোচনা চলছে। পর্যালোচনা ও যাচাই-বাছাই চূড়ান্ত হলে পরের দফায় টেকনোক্রেট মন্ত্রীরা শপথ নেবেন। প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ সূত্রটি আরো জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মঙ্গলবার রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ অ্যাডভোকেটের সঙ্গে দেখা করে নতুন সরকার গঠন নিয়ে কথা বলেছেন। এ সাক্ষাতে কীভাবে ও কখন সরকার গঠন করলে সুবিধা হবে তা নিয়ে রাষ্ট্রপতির পরামর্শ নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রায় দেড় ঘণ্টাব্যাপী এ সাক্ষাতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়েও রাষ্ট্রপতির পরামর্শ চান প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ ও আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এক নেতা এ প্রতিবেদককে এ তথ্য জানান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানায়, রাজনৈতিক নানা রকম চিন্তা থেকে অভিজ্ঞতা সম্পন্ন রাজনীতিকরা দলে ও সরকারে আবশ্যক হয়ে উঠেছেন। যদিও ওয়ান ইলেভেন পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন রকম মান-অভিমান থেকে মহাজোট সরকারের গত মন্ত্রিসভায় পুরনোদের বাদ দেন শেখ হাসিনা। কিন্তু বর্তমান অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবেলা ও চিড় ধরা আন্তর্জাতিক সম্পর্ক সুদৃঢ় ও জোরদারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করার ক্ষেত্রে দক্ষতার পরিচয় দিতে পারবেন সেসব রাজনৈতিক নেতাদের সমন্বয়ে নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পাশাপাশি নতুন মন্ত্রিসভায় এদের অন্তর্ভুক্তি সরকারের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারেরও চেষ্টা।
এক্ষেত্রে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সুরঞ্জিত সেনগুপ্তদের মত সিনিয়র ও বর্ষিয়ান রাজনীতিকদের গুরুত্ব বেড়েছে তার কাছে। সংস্কারের তকমা লাগিয়ে অনেকদিন দূরে সরিয়ে রাখলেও এবার শেখ হাসিনা নিজেই তাদেরই পাশে রাখতে চান।
আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, দীর্ঘদিন নিষ্ক্রিয় করে রাখলেও সরকারের শেষ সময়ে এসে আমু, তোফায়েলদের দলীয় কাজে সক্রিয় করেছেন। সর্বশেষ নির্বাচনকালিন সরকারের মন্ত্রিসভায়ও তাদের অর্ন্তভুক্ত করেছেন। সুতরাং তাদের নিয়ে পথ চলার ইঙ্গিত তিনি আগেই দিয়ে দিয়েছেন। তাছাড়া আগামী দিনগুলো অতিক্রম করতে বর্ষিয়ান রাজনীতিকদের সিদ্ধান্ত অনেক কাজে আসবে। এ চিন্তা থেকে আমু, তোফায়েলদের গুরুত্ব বেড়েছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম বলেন, নতুন সরকারের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে অভিজ্ঞ রাজনীতিকরাই শেখ হাসিনার পাশে থাকবেন। তবে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে অভিজ্ঞ রাজনীতিক আমির হোসেন আমু ও সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
(দ্য রিপোর্ট/ এমডি/ জানুয়ারি ০৯, ২০১৪)