দ্য রিপোর্ট কূটনৈতিক প্রতিবেদক : জাতীয় সংসদে বৃহস্পতিবার নব-নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা শপথ বাক্য পাঠ করছেন। প্রতিবেশি রাষ্ট্র ভারত ছাড়া অন্য কোনো দেশের সরকার এখনো নব-নির্বাচিতদের রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসার প্রক্রিয়াকে স্বাগত জানায়নি। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিদেশি বন্ধুদের কাছ থেকে এখন পর্যন্ত উল্লেখ করার মতো কোনো অভিনন্দন বার্তা পাননি।

কূটনৈতিক শিষ্টাচার অনুযায়ী, ভোটের ফল ঘোষণার পরপরই নতুন সরকারকে স্বাগত জানিয়ে বিদেশি বন্ধুরা বিভিন্ন মাধ্যমে অভিনন্দন বার্তা পাঠিয়ে থাকেন।

অন্যদিকে, সদ্য সমাপ্ত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও চলমান সহিংসতা নিয়ে এবার হতাশা প্রকাশ করেছে ফ্রান্স, জার্মানী ও চীন। দেশ তিনটি বুধবার পৃথক বিবৃতিতে রাজনৈতিক দলগুলোকে জনগণের প্রত্যাশার প্রতি সাড়া দিয়ে অংশগ্রহণমূলক রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় ফেরার এবং অর্থবহ সংলাপ শুরুর তাগিদ দিয়েছে।

এক বিবৃতিতে বুধবার ফ্রান্সের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জানান, সহিংস এবং কম ভোটার উপস্থিতির নির্বাচনের পর বাংলাদেশের পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে দেশটি। সব রাজনৈতিক দলকে সহিংসতার পথ পরিহার করে শান্তিপূর্ণ ও সহনশীল আচরণ করার পাশাপাশি নিজস্ব গণতান্ত্রিক কাঠামোর মধ্যে সংলাপে বসার আহ্বান জানিয়েছে ফ্রান্স।

এক বিবৃতিতে বুধবার জার্মান সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, সকলের স্বার্থে, মত পার্থক্য ভুলে বাংলাদেশে একটি শান্তিপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকার ও বিরোধী দলগুলোর দায়িত্বশীল ভূমিকা দেখতে চায় দেশটি। জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে হতাশা প্রকাশ করে বিবৃতিতে নির্বাচনের আগে-পরে অনেক মানুষ হতাহত হওয়ার ঘটনায় নিন্দা জানানো হয়। যে কোনো ধরনের সহিংসতা, বিশেষ করে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা পরিহার করতে বিবৃতিতে সব পক্ষের প্রতি আহ্বান করা হয়।

ঢাকায় নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূতের মতে, দশম সংসদ নির্বাচনে প্রধান বিরোধী দলসহ বেশির ভাগ দল অংশ নেয়নি এবং অধিকাংশ ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি। এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সংঘটিত সহিংসতা গণতন্ত্রের পাশাপাশি বাংলাদেশের অর্থনীতিকে যেভাবে ধ্বংস করেছে, তাতে চীন উদ্বিগ্ন।

এর আগে সদ্য সমাপ্ত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও চলমান সহিংসতা নিয়ে জাতিসংঘ, কমনওয়েলথ, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য হতাশা প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছে।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে প্রতিবেশি রাষ্ট্র ভারত সাংবিধানিক প্রয়োজনীয়তা বলে মন্তব্য করেছে। দেশটি বলেছে, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে তাদের মত করেই চলতে দিতে হবে।

জানা গেছে, শিষ্টাচার অনুযায়ী, নির্বাচন কমিশন ভোটের ফল ঘোষণার পরপরই, এমনকি অনেক ক্ষেত্রে গণমাধ্যমে বিজয়ের স্পষ্ট ঘোষণার পরই বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধানদের অভিনন্দন বার্তা, টেলিফোন আসতে শুরু করে। এবার ভোটের শেষে এমপিদের শপথ গ্রহণের দিন ধার্য্য হয়ে গেলেও তা আসেনি। বরং দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে অবিলম্বে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নতুন একটি নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা বলেছে প্রভাবশালী এবং বন্ধু রাষ্ট্রগুলো।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘ভোট নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের অন্যতম মিত্র দেশ ভারতও সতর্ক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ অবিলম্বে সংলাপ শুরু এবং একটি গ্রহণযোগ্য নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘৫ জানুয়ারীর নির্বাচনে যেভাবে ভোটার উপস্থিতির কথা প্রচার করা হয়েছে, বাস্তবে তা হয়নি। মিডিয়ার মাধ্যমে মানুষ প্রকৃত ঘটনা জানতে পেরেছে।’

(দ্য রিপোর্ট/জেআইএল/এমডি/ জানুয়ারি ০৯, ২০১৪)