জোসনা জামান, দ্য রিপোর্ট : এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) নেতৃত্বে মানবসম্পদ উন্নয়ন কর্মসূচিতে চালু হচ্ছে এমএফএফ (মাল্টি-ট্রান্স ফাইন্যান্সিং ফ্যাসিলিটি) পদ্ধতি। উন্নয়ন সহযোগীদের নতুন অর্থায়ন পদ্ধতির ফলে গুরুত্বপূর্ণ এ খাতে দীর্ঘমেয়াদি ফল বয়ে আনবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এ কর্মসূচিতে এখন পর্যন্ত যুক্ত হয়েছে সুইস এজেন্সি ফর ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন (এসডিসি)। এ ছাড়া আরও কয়েকটি সংস্থা অর্থায়ন করবে বলে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।

এডিবি ডেস্কের প্রধান অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের যুগ্ম-সচিব সাইফুদ্দিন আহমেদ এ বিষয়ে দ্য রিপোর্টকে জানান, এমএফএফ পদ্ধতির ফলে দাতারা যৌথভাবে সরকারের গৃহীত কর্মসূচিগুলোতে অর্থায়ন করবে। এ কর্মসূচিতে চার ধাপে অর্থছাড় করবে অংশগ্রহণকারী দাতারা। ফলে আগে থেকেই জানা যাবে দাতারা কোন সময় এবং কত টাকা ছাড় করবে। এ কারণে প্রকল্পের গতি বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি সরকারকে আর অহেতুক কমিটমেন্ট চার্জ গুনতে হবে না।

তিনি আরও জানান, এর আগে এমএফএফ পদ্ধতিতে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের নেতৃত্বে শিক্ষা খাত, বিদ্যুৎ ও রেল খাতে দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। এবার নেওয়া হচ্ছে মানব সম্পদ উন্নয়নে।

স্কিল ফর ইমপ্লয়মেন্ট ইনভেসমেন্ট প্রোগ্রাম নামের দশ বছরমেয়াদি এ কর্মসূচি বাস্তবায়নে এডিবি প্রায় চার হাজার কোটি টাকা (৫০ কোটি মার্কিন ডলার) সহজ শর্তে ঋণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এরমধ্যে প্রথম ট্রান্সে দিচ্ছে প্রায় ৬৪০ কোটি টাকা (৮ কোটি মার্কিন ডলার)। এ জন্য ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন কাজ শেষ করছে। বর্তমানে কন্সালটেশন মিশন কাজ করছে। শিগগিরই নেগোশিয়েশন সম্পন্ন হবে এবং আগামী মার্চ-এপ্রিল মাসের মধ্যেই এডিবির সঙ্গে সরকারের চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এডিবি চারটি ট্রান্সে পুরো অর্থছাড় করবে। এর মধ্যে প্রথম ট্রান্সে চলতি বছর দেবে ৮ কোটি মার্কিন ডলার, দ্বিতীয় ট্রান্সে ১০ কোটি, তৃতীয় ট্রান্সে ১৬ কোটি এবং চতুর্থ ট্রান্সে ১৬ কোটি মার্কিন ডলার অর্থছাড় করবে। চলতি বছর থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে এ পরিমাণ অর্থসহায়তা দেবে সংস্থাটি।

এ ছাড়া সুইস এজেন্সি ফর ডেলেপমেন্ট কো-অপারেশন (এসডিসি) চার ট্রান্সে অর্থায়ন করবে। এরমধ্যে প্রথম ট্রান্সে দেবে প্রায় ৮০ কোটি টাকা (১ কোটি মার্কিন ডলার) এবং বাকি ট্রান্সগুলোতে একই পরিমাণে অর্থছাড় করবে।

এমএফএফ পদ্ধতিতে অর্থায়নের ক্ষেত্রে সহজ শর্ত রয়েছে এডিবিসহ অন্য দাতাদের। পাঁচ বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ২৫ বছরে এ ঋণ পরিশোধ করতে হবে বাংলাদেশকে। এর সুদের হার ২ শতাংশ।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্র জানায়, মানবসম্পদ উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদি এ কর্মসূচি বাস্তবায়নে প্রধান ভূমিকা পালন করবে অর্থমন্ত্রণালয়। এর পাশাপাশি রয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, আইসিটি মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, শিল্প মন্ত্রণালয়, পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ), বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিটিএমএ, লেদার ইন্ড্রাস্ট্রি এসোসিয়েশনসহ কয়েকটি এনজিও।

কর্মসূচির আওতায় ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) ট্রেনিং, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং, শিপবিল্ডিং, তৈরি পোশাকশিল্প, ইলেকট্রিক এবং টেক্সটাইলের ওপর বেকারদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এরমধ্য দিয়ে যাতে তারা আত্মকর্মসংস্থান তৈরির পাশাপাশি দেশে ও বিদেশে দক্ষ শ্রমিকের চাহিদা পূরণ করতে পারে।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ সূত্র আরও জানায়, সরকার ২০১৪ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত দশ বছরমেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য সেকেন্ডারি এডুকেশন সেক্টর ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম শীর্ষক কর্মসূচিও হাতে নিয়েছে। এতে মোট বিনিয়োগের পরিমাণ ধরা হয়েছে ১৭ দশমিক ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর মধ্যে নতুন এমএফএফ পদ্ধতির আওতায় চার কিস্তিতে এডিবি ঋণ দিচ্ছে প্রায় চার হাজার কোটি টাকা (৫০ কোটি মার্কিন ডলার)। মোট অর্থ থেকে প্রথম কিস্তির ৭২০ কোটি টাকা বা ৯ কোটি মার্কিন ডলার চুক্তি ইতোমধ্যেই স্বাক্ষরিত হয়েছে।

এ ছাড়া বিদ্যুত খাতে এই এমএফএফ পদ্ধতির আওতায় এডিবি চারটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র সংস্কারের জন্য পাঁচ হাজার ৬০০ কোটি টাকা (৭০ কোটি মার্কিন ডলার) অর্থায়ন করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছে।

(দ্য রিপোর্ট/জেজে/এমএআর/সা/জানুয়ারি ০৯, ২০১৪)