রাসূল (সা.) এর খুতবা
দুনিয়াদারীর বিষয়ে সতর্ক হতে হবে
এ কে এম মহিউদ্দীন : দু’দিনের এ দুনিয়াদারীর কী আর মূল্য আছে বলুন? তবু এ দুনিয়ার পেছনে গুজরান হচ্ছে সমস্তটা দিন, রাত, যাপিত জীবন। সম্পদের প্রতি আমাদের যে নিরঙ্কুশ লোভ তার কোনোই মূল্য নেই, সে সম্পর্কে আল্লাহ্র রাসূলের অনেক নসিহত রয়েছে। তবে ধন-সম্পদের প্রতি আসক্তি যদি এ জন্য হয় যে, এ থেকে আল্লাহ্র সন্তুষ্টি এবং নিজের ও নিজ সম্পর্কিতদের হক আদায় করা যাবে তাহলে এটা শুধু বৈধ নয়; প্রয়োজনীয়ও বটে। কিন্তু এই গুণ শুধু তখনই সৃষ্টি হয়, যখন মানুষের অন্তরে আল্লাহ্, আল্লাহ্র রাসূল (সা.) ও আল্লাহ্র দীনের প্রতি সর্বাধিক ভালবাসা বিরাজ করে। কিন্তু মানুষের অন্তর যদি এই অনন্ত সম্পদ থেকে খালি থাকে, তাহলে পরে সেটা শয়তানের ঘর ও ইবলিসের ঠিকানায় পরিণত হয়। এমতাবস্থায় ধন-সম্পদের প্রতি আসক্তি হাজার ফিতনার কারণে পরিণত হয়। কেননা, মানুষের প্রকৃতিতেই ধন-সম্পদের আসক্তি বিরাজ করছে। আর এ কারণেই অনেক মুত্তাকি সামনেও যখন ধন-সম্পদের প্রসঙ্গটি উপস্থাপিত হয়, তখন তাদেরকেও কোনো কোনো সময় ন্যায়পথ থেকে বিচ্যুত হতে দেখা যায়।
যুদ্ধের মাঠে যখন দুই পক্ষ পরস্পরের মুখোমুখি হয়, তখন প্রায় ক্ষেত্রেই সেখানে নিয়ম-শৃঙ্খলার কোনো বালাই থাকে না। অনেক মূল্যবান জিনিস তখন এদিক-ওদিক ছড়িয়ে পড়ে থাকে। এ থেকে যে যেটা পারে উঠিয়ে নিয়ে যায়। তখন সে নিজেকে এর মালিক-মুখতার বিবেচনা করতে থাকে। হুজুর (সা.) এর পবিত্র যুগেও দু-চারবার এমন ঘটনা ঘটেছে যে, শত্রুবাহিনীর কাছ থেকে যে জিনিস ছিনিয়ে আনা হয়েছিল তার কিছু বায়তুল মালে (সরকারি কোষাগারে) জমা দেওয়া হয়নি। রাসূল (সা.) এই বেআইনি তৎপরতা ও অবিশ্বস্ততার কথা জানতে পেরে এর অশুভ পরিণামের দিকটি জনসমক্ষে তুলে ধরেন। জনতার সামনে তিনি তার ভাষণে বলেন, এমন যেন না হয়, তোমাদের কেউ কিয়ামতের দিন এমন অবস্থায় আসে যে, তার ঘাড়ের ওপর বিড়বিড়কারী উট সওয়ার হয়ে আছে এবং সে বলে, হে আল্লাহ্র রাসূল! আমাকে সাহায্য করুন। অথচ আমাকে উত্তরে বলতে হয়, আমি তোমার জন্য কিছুই করতে পারব না। কেননা, আমি তো দুনিয়ায় তোমার কাছে সত্যের আহ্বান পৌঁছে দিয়েছি। এমন যেন না হয় যে, কিয়ামতের দিন তোমাদের কেউ না কেউ আমার কাছে এমতাবস্থায় আসে যে, তার ঘাড়ের ওপর হ্রেষারবকারী ঘোড়া সওয়ার হয়ে আছে এবং সে বলে, হে আল্লাহ্র রাসূল! আমাকে সাহায্য করুন। অথচ আমাকে উত্তরে বলতে হয়, আমি তোমার জন্য কিছুই করতে পারব না। কেননা, আমি তো দুনিয়ায় তোমার কাছে সত্যের পয়গাম পৌছেঁ দিয়েছি। এমন যেন না হয় যে, কিয়ামতের দিন তোমাদের কেউ না কেউ আমার কাছে আসে যে, তার পিঠের ওপর ম্যা ম্যাকারী একটি বকরি সওয়ার হয়ে আছে এবং সে বলে, হে রাসূল, আমাকে সাহায্য করুন। অথচ আমাকে উত্তরে বলতে হয়, আমি তোমার জন্য কিছুই করতে পারব না। কেননা, আমি তো তোমার কাছে সত্যের পয়গাম পৌঁছে দিয়েছি। এমন যেন না হয়, কিয়ামতের দিন তোমাদের কেউ না কেউ আমার কাছে এমতাবস্থায় হাজির হয়, তার ঘাড়ের ওপর আর্তনাদকারী কোনো মানুষ (কৃতদাস অথবা নিহত ব্যক্তি) সওয়ার হয়ে আছে এবং সে বলে, হে আল্লাহ্র রাসূল, আমাকে সাহায্য করুন। অথচ আমাকে উত্তরে বলতে হয়, আমি তোমার জন্য কিছু্ই করতে পারব না। কেননা, আমি তো দুনিয়ায় তোমার কাছে সত্যের পয়গাম পৌঁছে দিয়েছি। এমন যেন না হয়, তোমাদের কেউ না কেউ কিয়ামতের দিন এমন অবস্থায় আসে যে, তার পিঠের ওপর আন্দোলিত কাগজপত্র রয়েছে এবং সে বলে, হে আল্লাহ্র রাসূল, আমাকে সাহায্য করুন। অথচ আমাকে বলতে হয়, আমি তোমার জন্য কিছুই করতে পারব না। আমি তো দুনিয়ায় তোমার কাছে সত্যের পয়গাম পৌঁছে দিয়েছি। এমন যেন না হয় যে, কিয়ামতের দিন তোমাদের কেউ না কেউ আমার কাছে আসে এমন অবস্থায় যে, তার পিঠের ওপর খিয়ানতের মাল-সামান রয়েছে এবং সে বলে, হে আল্লাহ্র রাসূল, আমাকে সাহায্য করুন। অথচ উত্তরে আমাকে বলতে হয়, আমি তো দুনিয়ায় তোমার কাছে সত্যের পয়গাম পৌঁছে দিয়েছি। (মুসলিম শরীফ; পৃ.১৪৩, খণ্ড-২য়)।
প্রিয় পাঠক লক্ষ্য করুন, আল্লাহ্র রাসূলের সতর্কভাষণ। তিনি উম্মতকে সচেতন করতে চেয়েছেন যাতে সে সচেতন হয়ে তার কাঙ্ক্ষিত যাত্রা জান্নাতের দিকেই ধাবিত হতে পারে। এটা অবশ্যই সকলকে মনে রাখতে হবে, রাসূল (সা.) এর সুপারিশ ছাড়া কেউ জান্নাতে যেতে পারবে না। সুতরাং, সময় হেলায় না কাটিয়ে মূল কাজে মনযোগ দেওয়া দরকার। মুমিন হওয়ার পূর্বশর্ত সবার থেকে অগ্রাধিকার দিতে হবে রাসূল মুহাম্মদ (সা.)-কে।
লেখক: প্রাবন্ধিক,সাংবাদিক ও পিএইচডি গবেষক