দ্য রিপোর্ট কূটনৈতিক প্রতিবেদক : নবনির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা শপথ নিয়েছেন। সরকার গঠনের জন্য মন্ত্রিপরিষদ সদস্যদের রবিবার শপথ নেওয়ার কথা।

অন্যদিকে বিদেশী বন্ধুরা এখন পর্যন্ত নতুন সরকারকে স্বীকৃতি দেয়নি। একমাত্র ভারত ছাড়া বিদেশী বন্ধুদের সকলেই নতুন করে নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে সংলাপে বসার আহ্বান জানিয়েছে।

কূটনীতিকরা বলছেন, ৫ জানুয়ারির ভোট নিয়ে সরকারের সঙ্গে বিদেশীদের দূরত্ব বেড়েই চলছে। এমন অবস্থা চলতে থাকলে, অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। বিভিন্ন দেশ ও জোটের সঙ্গে থাকা দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক চুক্তিগুলোতেও প্রভাব পড়তে পারে। যা দেশের জন্য শুভ নয়।

জানা গেছে, ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও নতুন করে নির্বাচিত সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বিদেশী বন্ধুদের কাছ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো অভিনন্দন বার্তা পাননি।

কূটনৈতিক শিষ্টাচার অনুযায়ী, ভোটের ফল ঘোষণার পরপরই নতুন সরকারকে স্বাগত জানিয়ে বিদেশী বন্ধুরা বিভিন্ন মাধ্যমে অভিনন্দন বার্তা পাঠিয়ে থাকেন।

সদ্য সমাপ্ত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও চলমান সহিংসতা নিয়ে জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কমনওয়েলথ, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি ও চীন উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। পাশাপাশি নতুন করে নিরপেক্ষ নির্বাচনের আহ্বান জানিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে সংলাপে বসার আহ্বান জানিয়েছে বন্ধুপ্রতিম এই দেশগুলো।

তবে প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সাংবিধানিক প্রয়োজনীয়তা বলে মন্তব্য করেছে। দেশটি বলেছে, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে তাদের মতো করেই চলতে দিতে হবে।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তো স্পষ্ট করে বলেছে, এই নির্বাচনের বৈধতা তারা দেখছে না। এ জন্য তারা জয়ী দল ও দলের নেতাকে অভিন্দন জানানোর প্রয়োজন মনে করছে না। তারা পরিষ্কারভাবে বলেছে, আলোচনার মাধ্যমে নতুন একটি নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কমনওয়েলথের মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো তাদের অবস্থান আগেই জানিয়ে দিয়েছে।’

ড. ইমতিয়াজ বলেন, ‘নির্বাচিত দলকে শুধুমাত্র আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ই নয়, ভারতও কিন্তু কোনো অভিনন্দন জানায়নি। ভারত শুধু বলেছে, নিয়ম রক্ষার জন্য এই নির্বাচন।’

তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক মহলে এই নির্বাচনের বৈধতা না থাকায়, ভবিষ্যতে তারা যে পদক্ষেপগুলো নেবে তা বাংলাদেশের জন্য ক্ষতিকারক হবে। বিশেষ করে অর্থনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে তারা যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে। যেমন তারা বড় ধরনের আর্থিক লেনদেনে যাবে না।’

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘কমনওয়েলথ, জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্রের মতো আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় নির্বাচন পর্যবেক্ষক না পাঠানোর সিদ্ধান্তের মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছে এই নির্বাচন তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। যেহেতু এই নির্বাচন তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়, সেহেতু জয়ী দলকে অভিন্দন জানানোর কোনো প্রয়োজন তারা মনে করেনি। আর এই নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সরকারের বৈধতাও আন্তর্জাতিক মহলে প্রশ্নের সম্মুখীন হবে।’

তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সবসময় আলোচনার মাধ্যমে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরামর্শ দিয়ে এসেছে। এখনও তারা বলছে পরবর্তী নির্বাচনের ব্যবস্থা করার জন্য। আর এ কাজে সরকার যত দেরি করবে ততই দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সঙ্কট বাড়তে থাকবে।’

(দ্য রিপোর্ট/জেআইএল/এসবি/ এনআই/জানুয়ারি ১০, ২০১৪)