ঝুঁকির মুখে পড়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত ৬টি ইউরিয়া সার কারখানা। অব্যবস্থাপনা ও সঠিক পরিকল্পনার অভাবে ১৪ দলীয় মহাজোট সরকারের গত ৫ বছরে ইউরিয়া সারের উৎপাদন কমেছে ৫০ শতাংশ। রাষ্ট্রায়ত্ত ৬টি ইউরিয়া সার কারখানার উৎপাদন নেমে এসেছে ১০ লাখ টনের নিচে।

জানা গেছে, বিগত ৪ দলীয় জোট সরকারের সময়ে ২০০৬-০৭ অর্থবছরে রাষ্ট্রায়ত্ত ইউরিয়া সার কারখানাগুলোর উৎপাদন ছিল ১৮ লাখ টনের উপরে। ২০১২-১৩ সালে সেখানে এ উৎপাদন নেমে এসেছে ৯ লাখ ৩৩ হাজার ৬৮৬ টনে। আর ২০১৩-১৪ সালের প্রথম ৬ মাসের উৎপাদন ৪ লাখ টনেরও নিচে এসেছে।

অন্যদিকে এ সময় আমদানি বেড়েছে বেশ কয়েকগুণ। ২০০৬-০৭ সালে আমদানির পরিমাণ ছিল ৮ লাখ ১৩ হাজার ৬৫২ টনের মতো। ২০১২-১৩ সালে তা দাঁড়িয়েছে ১৩ লাখ ১৪ হাজার ২৩১ টনে। দেখা যাচ্ছে, এক সময়ের রফতানিমুখী এ শিল্প ক্রমেই আমদানি নির্ভর হয়ে উঠছে।

উল্লেখ্য, ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ কেমিকেল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) উৎপাদিত ইউরিয়া সার দেশের চাহিদা মিটিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে রফতানি করা হতো। এ ধারাবাহিকতা ধরে রাখার চেষ্টা অব্যাহত ছিল। বিগত ৪ দলীয় জোট সরকারের সময়ে বিসিআইসির ৬টি ইউরিয়া সার কারখানার উৎপাদন ছিল ১৮ লাখ টন থেকে ২০ লাখ টনের মধ্যে। কিন্তু ২০০৮ সালে দিলীপ বড়ুয়া শিল্প মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই গ্যাস স্বল্পতার অভিযোগে ইউরিয়া সারের উৎপাদন কমিয়ে ফেলা হয়। পাশপাশি বাড়িয়ে দেওয়া হয় সার আমদানির পরিমাণ। এভাবে উৎপাদন কমিয়ে আমদানি বাড়িয়ে দেওয়ায় লাভজনক সার কারখানাগুলো লোকসানের মুখে পড়েছে।

গত ৫ বছরে বিভিন্ন দেশ থেকে সরকার-টু-সরকার এবং ওপেন টেন্ডার পদ্ধতিতে ৮৪ লাখ ৭৫ হাজার ৮২৮ টন ইউরিয়া আমদানি করা হয়।

ইউরিয়া সার উৎপাদন :

বিসিআইসি সূত্রে জানা গেছে, ২০০১-০২ সালে মোট ইউরিয়া উৎপাদন হয়েছিল ১৫ লাখ ৪৫ হাজার ৭২৪ টন, ২০০২-০৩ সালে ২০ লাখ ৫৬ হাজার ৭২৪ টন, ২০০৩-০৪ সালে ১৯ লাখ ৮৬ হাজার ১৯৯ টন, ২০০৪-০৫ সালে ১৮ লাখ ৭৮ হাজার ৩০০ টন, ২০০৫-০৬ সালে ১৭ লাখ ৩০ হাজার ৩৬৩ টন, ২০০৬-০৭ সালে ১৮ লাখ ১৭ হাজার ১৯৮ টন ছিল। ২০০৮ সালে দিলীপ বড়ুয়া শিল্প মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেওয়ার পর এর উৎপাদন ক্রমান্বয়ে কমতে থাকে। ২০০৭-০৮ সালে সার কারখানাগুলোর উৎপাদন নেমে আসে ১৪ লাখ ৪৭ হাজার ৮৮৪ টনে। ২০০৮-০৯ সালে ১২ লাখ ৮০ হাজার ২৯৪ টন, ২০০৯-১০ সালে ১০ লাখ ৫৮ হাজার ৫৬৩ টন, ২০১০-১১ সালে ৯ লাখ ৮ হাজার ৮৩৭ টন, ২০১১-১২ সালে ৯ লাখ ৩৩ হাজার ৬৮৬ টন, ২০১২-১৩ সালে ১০ লাখ ২৬ হাজার ৯৯৯ টন। ২০১৩-১৪ অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে উৎপাদন হয়েছে ৩ লাখ ৯৫ হাজার ৩৪ টন।

আমদানি :

২০০৬-০৭ সালের আগ পর্যন্ত ২ লাখ ৩৫ হাজার টন থেকে ৬ লাখ ৩৩ হাজার টনের মধ্যেই সীমিত ছিল ইউরিয়া সারের আমদানির পরিমাণ। তা বাড়তে বাড়তে ২০১২-১৩ সালে এসে দাঁড়িয়েছে ১৩ লাখ ১৪ হাজার টনে।

সার উৎপাদন কমে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে সদ্য এলপিআরে যাওয়া পরিচালক (পরিকল্পনা) দিপক রঞ্জন দত্ত জানান, গ্যাস সঙ্কট ও কারখানা পুরাতন হওয়ার কারণে উৎপাদন সক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে। এ ছাড়াও কিছু মেকানিক্যাল ও মেইনটেনেন্স সমস্যা ছিল। যার ফলে উৎপাদন কম হয়েছে।

এদিকে বাংলাদেশে ইউরিয়া সারের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি খাত আমদানিনির্ভর হয়ে পড়লে ভবিষ্যতে কৃষির উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করছেন এফবিসিসিআই এর সাবেক প্রথম সহ-সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন। এ সমস্যা দূর করতে তিনি বিদ্যুৎ খাতের মতো বেসরকারি খাতে ইউরিয়া সার কারখানা স্থাপনের অনুমোদন দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

(দ্য রিপোর্ট/আই/এসবি/ এনআই/জানুয়ারি ১০, ২০১৪)