ঢিলেঢালা অবরোধ
শক্তিশালী হচ্ছে সরকার, সঙ্কটে বিএনপি
সাকির আহমদ, দ্য রিপোর্ট : তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি মানাতে ব্যর্থ বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট নতুন করে নির্বাচন বাতিলের দাবিতে আন্দোলনে নামছে। রবিবার আবারও শুরু হচ্ছে অবরোধ। এবারের দাবি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফল বাতিল ও গ্রেফতার হওয়া নেতাদের মুক্তি।
সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার দেশব্যাপী অবরোধ কর্মসূচি ঢিলেঢালাভাবে পালিত হওয়ায় আগামী দিনের আন্দোলন সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এ যাবৎ করা আন্দোলনের কার্যকর কোনো ফসল ঘরে তুলতে না পারায় বিএনপির ভেতরেও তৈরি হয়েছে হতাশা। ব্যাপক সংখ্যক নেতাকর্মী গ্রেফতার হওয়ায় নতুন করে আন্দোলন কতটা শক্তিশালীভাবে গড়ে তোলা সম্ভব হবে, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন রাজনীতি সংশ্লিষ্টরা। বরং বিএনপি রাজনৈতিক অস্তিত্ব সঙ্কটের মুখে পড়েছে এমন ধারণা তাদের।
অন্যদিকে রাজনীতির মাঠে দ্রুততার সঙ্গে ছুটছে আওয়ামী লীগ। বিরোধী দল ছাড়াই ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন করে এখন সরকার গঠনের অপেক্ষায় রয়েছে আওয়ামী লীগ ও তার মিত্ররা। রবিবার বিকেলে গঠিত হচ্ছে নতুন সরকারের মন্ত্রিপরিষদ। আর গত বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদ ভবনে ২৮৫ জন সংসদ সদস্য শপথ গ্রহণ করার মধ্যদিয়ে সরকার গঠনের প্রথমধাপ অতিক্রম করেছে তারা।
পাঁচ দফা অবরোধ কর্মসূচিতে রাজধানীর জীবনযাত্রা প্রায় স্বাভাবিক দেখা গেছে। যানবাহন চলাচল করেছে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে কিছুটা কম। এক পর্যায়ে রাজপথে যানবাহনের সংখ্যাও বেড়ে যায়। বিএনপির অবরোধ ও হরতাল কর্মসূচি রাজধানীতে সফল না হলেও রাজধানীর বাইরে অনেকটা সফল ছিল।
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট সরকার গঠন করার পর থেকে বিএনপি তাদের জোট নিয়ে প্রথম থেকেই আন্দোলন শুরু করে। কিন্তু রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, পাঁচটি বছর আন্দোলন করলেও বিএনপি সে আন্দোলন থেকে কোন ফসল ঘরে তুলতে ব্যর্থ হয়েছে। আর আওয়ামী লীগ মহাজোটকে নিয়ে একলা চলো নীতি অবলম্বন করে গত ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন করেছে। ৫ জানুয়ারির আগেই মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের দিন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ১৫৩ জন সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। আর ৫ জানুয়ারি ১৪৭টি আসনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। নির্বাচন কমিশন বলছে, নির্বাচনে শতকরা ৪০ ভাগ ভোট পড়েছে। কিন্তু বাস্তব চিত্র হচ্ছে ৫-১০ ভাগ ভোট পড়েছে। এমন তথ্য নির্বাচনের পর গণমাধ্যমে উঠে এসেছে। বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের আন্দোলন কর্মসূচির বাড়া ভাতে ছাই দিয়ে আওয়ামী লীগ শক্ত সরকার গঠন করতে চলেছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সরকারকে যে কোনো দাবি মানতে বাধ্য করতে রাজধানীতে আন্দোলন শক্তিশালী করতে হয়। বিএনপি ও তার মিত্ররা এক্ষেত্রেও ব্যর্থতার ষোলোকলা পূরণ করেছে। যখনই বিএনপি আন্দোলনের পথে হাঁটার চেষ্টা করেছে তখনই রাজধানী কিংবা বাইরের জেলা শহরে এমন সব ঘটনার জন্ম দিয়েছে যার দায়ভার সরকার বিএনপি ও তার মিত্রদের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়েছে। সেই সঙ্গে মিডিয়াও সেসব ঘটনার পেছনে ছুটেছে। তবে রাজনীতির মাঠে আওয়ামী লীগ পুরো পাঁচটি বছর সফলতার সঙ্গে লড়াই করেছে। বিএনপির আন্দোলনকে সরকার কোনোভাবেই দানা বাঁধতে দেয়নি।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, হরতাল-অবরোধের নামে অনেক জ্বালাও-পোড়াও করেছে বিরোধী দল। তাদের হাত থেকে মানুষ তো দূরে থাক পশু-পাখিও রক্ষা পায়নি। এই ধ্বংসাত্মক রাজনীতির মাধ্যমে দাবি আদায় হয় না। বিএনপি দেরিতে হলেও এটা বুঝতে পারছে। আমরা আশা করব, বিএনপি এই নৈরাজ্যের পথ ছেড়ে জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ করে গণতন্ত্রের পথে আসবে।
তবে বিরোধী দলের আন্দোলনকে ব্যর্থ হিসেবে দেখতে রাজি নয় বিএনপি। দলটির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট আহমদ আজম খান দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘বর্তমান সরকার গণতান্ত্রিক সরকার নয়। এরা পাতানো নির্বাচনের মাধ্যমে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে ক্ষমতায় এসে গণতন্ত্রবিরোধী কর্মকাণ্ড করছে। বিরোধী দলকে কোনো গণতান্ত্রিক শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করতে দেয়নি। দলীয় অনুগত পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়ে বিরোধী দলের কর্মসূচি পণ্ড করে দিয়েছে। আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতেও দেখামাত্র পাখির মতো গুলি চালিয়েছে। সারাদেশে অসংখ্য নেতাকর্মীকে হত্যা, গুম ও হামলা-মামলা দিয়ে নিপীড়ন-নির্যাতন করেছে। এর পরও বিএনপির আন্দোলনের সঙ্গে দেশের জনগণের সমর্থন আছে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের এই উপদেষ্টা বলেন, ‘বিরোধী দলের ডাকে জনগণ প্রহসনের নির্বাচন বর্জন করেছে। কোনো ভোটার ভোটকেন্দ্রে যায়নি। প্রধানমন্ত্রী নিজেই বলেছেন, যে কয়জন ভোট দিয়েছে তাতেই তিনি খুশি। তার বক্তব্যেই প্রমাণ হয়, ৫ জানুয়ারির প্রহসনের নির্বাচন শুধু বিরোধী দল নয়, পৃথিবীর কোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র এমনকি প্রধানমন্ত্রীরও আশা পূরণ হয়নি। তার পরও এই নির্লজ্জ সরকার সকলের বিরোধিতা সত্ত্বেও সরকার গঠনের লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছে।’
এ ব্যাপারে মহাজোট সরকারের শিল্পমন্ত্রী ও নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া দ্য রিপোর্টকে বলেন, বিএনপি আন্দোলনের নামে কিছু মানুষ খুন ছাড়া কোনো সফলতা পায়নি। তাদের আন্দোলন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ছাড়া কিছুই ছিল না। বিএনপির আন্দোলনের নিয়ন্ত্রণ ছিল জামায়াত-শিবিরের হাতে। এর পরও জামায়াত-শিবির তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে পারেনি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা অ্যাসোসিয়েট প্রেসের (এপি) ঢাকা ব্যুরোর সাবেক প্রধান ফরিদ হোসেন দ্য রিপোর্টকে বলেন, বিএনপি গণআন্দোলন গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়েছে। বিএনপির রাজনৈতিক কৌশলও ছিল ভুল। গণআন্দোলন ছাড়া সরকারকে দাবি মানাতে বাধ্য করার দৃষ্টান্ত নেই। বিরোধী দল সরকারকে দাবি মানাতে বাধ্য করতে পারেনি।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ তার মিত্রদের নিয়ে নির্বাচন করেছে। নির্বাচনের ফলাফল বাইরের দেশগুলো প্রত্যাখ্যান করেনি। তবে তারা হতাশা ব্যক্ত করেছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরকার গঠন করলে কঠোর অবস্থানে যাবে আওয়ামী লীগ।
(দ্য রিপোর্ট/এসএ/কেএ/জেএম/শাহ/জানুয়ারি ১০, ২০১৪)