সাইমন ড্রিং
দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : বিখ্যাত সাংবাদিক, টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব ও প্রামাণ্য চিত্র নির্মাতা সাইমন ড্রিং ১৯৪৫ সালের ১১ জানুয়ারি ইংল্যান্ডের নরফোকের ফাকেনহাম শহরে জন্মগ্রহণ করেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালে তিনি পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর নৃশংসতার বিবরণ সংবাদমাধ্যমে তুলে ধরে বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
তিনি কিংস লিন টেকনিক্যাল কলেজে পড়ালেখা করেন। ১৬ বছর বয়সে বিশ্বভ্রমণে বের হন। ১৯৬৩ সালে থাইল্যান্ডের ব্যাংকক ওয়ার্ল্ড সংবাদপত্রে প্রুফ রিডারের কাজ নেন। ১৯৬৪ সালে লাওসে নিউইয়র্ক টাইমসের স্ট্রিংগার হিসেবে কাজ করেন। একই বছর ভিয়েতনামে রয়টার্সের যুদ্ধবিষয়ক সংবাদ প্রতিনিধি হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন।
১৯৭০ এবং ১৯৮০-এর দশক জুড়ে তিনি ডেইলি টেলিগ্রাফ এবং বিবিসি টেলিভিশন নিউজের বৈদেশিক সংবাদদাতা হিসেবে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কর্মরত ছিলেন। ওই সময় ভারত, পাকিস্তান, আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য, ল্যাটিন আমেরিকা এবং ইউরোপের অস্থিতিশীল ঘটনাপ্রবাহ নিয়মিত সংবাদ মাধ্যমে তুলে ধরেন। ইরানের শাহবিরোধী গণ-অভ্যুত্থান নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করে নন্দিত হন তিনি। পেশাগত জীবনে ২২টি যুদ্ধ ও অভ্যুত্থান কাভার করেছেন। বিবিসি টেলিভিশন ও রেডিও'র সংবাদ এবং সাম্প্রতিক ঘটনাবলী নিয়ে কাজ করেছেন প্রায় ২০ বছর। তিনি বিভিন্ন চ্যানেলের জন্য অনেকগুলো প্রামাণ্যচিত্র প্রযোজনা ও উপস্থাপনা করেন। এ ছাড়া পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সংবাদপত্র ও সাময়িকীতে লিখেছেন তিনি।
ভিয়েতনাম যুদ্ধ এবং বাংলাদেশের গণহত্যার ওপর প্রতিবেদন তাকে বিশ্বজোড়া খ্যাতি ও সুনাম এনে দেয়। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চে সাইমন ড্রিং হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে (বর্তমানে হোটেল রূপসী বাংলা) লুকিয়ে ছিলেন। তৎকালীন পাকিস্তানে সামরিক আইনের তোয়াক্কা না করে ২৭ মার্চ তিনি মুক্তিযুদ্ধের সংবাদ সংগ্রহ করে ডেইলি টেলিগ্রাফে পাঠান। যা ‘ট্যাংকস ক্র্যাশ রিভোল্ট ইন পাকিস্তান’ শিরোনামে ৩০ মার্চ প্রকাশিত হয়। মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে আন্তর্জাতিক জনমত সৃষ্টিতে এ প্রতিবেদনটি বিশ্বব্যাপী ব্যাপকভাবে সাড়া জাগিয়েছিল। ১৯৭১ সালে সরকার তাকে জোরপূর্বক পাকিস্তান থেকে বের করে দেয়। ইংল্যান্ড থেকে একই বছরের নভেম্বরে কলকাতায় আসেন তিনি। সেখান থেকে তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের খবরাখবর ওই দৈনিকে প্রেরণ করতেন। ১৬ ডিসেম্বর যৌথবাহিনীর সঙ্গে তিনি ঢাকায় আসেন।
সাইমন ড্রিং বাংলাদেশের বেসরকারি টেলিভিশন ধারণার অন্যতম রূপকার। বাংলাদেশের একমাত্র বেসরকারি টেরেস্ট্রিয়াল টেলিভিশন চ্যানেল একুশে টেলিভিশনের সাথে যুক্ত ছিলেন। ১৯৯৭ সালে বিবিসি ছেড়ে তিনি একুশে'র ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব দেন। ২০০২ সালে সম্প্রচার আইন লঙ্ঘনের কারণে চ্যানেলটি সম্প্রচার কার্যক্রম বন্ধ করতে বাধ্য হয়। তিনি ও সহযোগী তিনজন নির্বাহী পরিচালক প্রতারণা ও জালিয়াতির অভিযোগে অভিযুক্ত হন। ওই বছর অক্টোবর মাসে সরকার তার ভিসা এবং ওয়ার্ক পারমিট বাতিল করে। ২০০২ সালের ১ অক্টোবর তিনি বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হন।
সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে তিনি দুই বার আহত হন। প্রথমবার ভিয়েতনামে এবং দ্বিতীয়বার সাইপ্রাসে তুর্কিদের আগ্রাসনের সময়।
১৯৮৬ সালে লন্ডনে তিনি স্পোর্ট এইড নামের দাতব্য তহবিলের ধারণা তুলে ধরেন। স্যার বব গেল্ডোফের সাহায্যে ১২০টি দেশের প্রায় ২০ মিলিয়ন মানুষের অংশগ্রহণে একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। ৩৭ মিলিয়ন ডলার এই তহবিলে জমা হয়। ওই বছর দ্য রেস এসেইন্ট টাইম শিরোনামে অন্য আরেকটি দাতব্য তহবিল গড়েন সাইমন ড্রিং। এতে ১৬০টি দেশের প্রায় ৫৫ মিলিয়ন মানুষ অংশগ্রহণ করেন।
তিনি ‘ইন্টারন্যাশনাল রিপোর্টার অব দ্য ইয়ার’, ‘ভ্যালিয়ান্ট ফর ট্রুথ’, ‘অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল’, ‘সনি’ ও ‘নিউইয়র্ক ফেস্টিভ্যাল গ্রান্ড প্রাইজ’সহ বিভিন্ন পুরস্কার ও সন্মাননা লাভ করেন।
বর্তমানে তিনি স্ত্রী ফাইওনা ম্যাকফেরসনকে নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার ব্রিসবেনে বসবাস করছেন। তাদের দুই যমজ কন্যা- আভা রোজ এবং ইন্ডিয়া রোজ। তার আগের সংসারে তানিয়া নামের এক মেয়ে আছেন।
(দ্য রিপোর্ট/ওএস/ডব্লিউএস/জানুয়ারি ১১, ২০১৪)