দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : মন্ত্রিসভা গঠনের মাধ্যমে দেশ নতুন সরকার পাবে রবিবার। ওই দিন বিকেলে বঙ্গভবনে নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যদের শপথ পড়াবেন রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ আবদুল হামিদ।

কেউ বলছেন নতুন মন্ত্রিসভা হবে ৫৫ সদস্যের, কেউ বলছেন হবে ৪৫ সদস্যের। নতুন সরকারের মন্ত্রিসভায় কে থাকছেন, আর কে থাকছেন না- সেই হিসাব মেলানোর প্রাণান্তকর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন গণমাধ্যমকর্মীরা।

এ ছাড়া জাতীয় পার্টির একই সঙ্গে বিরোধী দল ও সরকারে থাকার দোদুল্যমানতার মধ্যে কী ধরনের সরকার গঠিত হচ্ছে- প্রশ্ন উঠছে বিভিন্ন মহল থেকে। জাতীয় সরকারের কথাও শোনা যাচ্ছে, তবে সব প্রশ্নের জবাব মিলবে রবিবারই।

এবার সরকার গঠনের মাধ্যমে স্বাধীনতার পর শেখ হাসিনার অধীনে তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসছে আওয়ামী লীগ। শেখ হাসিনাও তৃতীয়বারের মতো হতে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধান বিরোধী দল বিএনপির বর্জনের মধ্যেই ৫ জানুয়ারি রবিবার দশম জাতীয় সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বুধবার বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ২৯২ জন সাংসদের মধ্যে ২৯০ জনের নাম গেজেট আকারে প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন।

২৯২টি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২৩১, জাতীয় পার্টি ৩৩, ওয়ার্কার্স পার্টি ৬, জাসদ ৫, জাতীয় পার্টি (জেপি) ১, তরীকত ফেডারেশন ১, বিএনএফ ১ এবং স্বতন্ত্র ১৪ জন প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন।

এর আগে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ১৫৩ আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। নির্বাচন হয় ১৪৭ আসনে। দশম সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে আটটি আসনের ফলাফল স্থগিত রয়েছে।

বৃহস্পতিবার সকালে আওয়ামী লীগের সাংসদরা দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর কাছে শপথ নেন। এরপর রওশনের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টির সাংসদরা শপথ নেন। ওই দিনই সংসদীয় দলের বৈঠকে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনাকে সংসদীয় দলের নেতা নির্বাচিত করে দশম জাতীয় সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ দল আওয়ামী লীগ; আর রওশন এরশাদ হচ্ছেন বিরোধীদলীয় নেতা।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা হিসেবে রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীকে নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী নতুন সরকারের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের তালিকাও তুলে দেন রাষ্ট্রপতির কাছে।

রবিবারের ভোটকে ‘তথাকথিত’ আখ্যায়িত করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, ২৪ জানুয়ারি বর্তমান সংসদের মেয়াদ শেষের আগেই নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের শপথ গ্রহণে সংবিধান লঙ্ঘিত হয়েছে। শপথ পড়িয়ে স্পিকার এবং এ সব সদস্যের দ্বারা নির্বাচিত সংসদ নেতাকে সরকার গঠনের আমন্ত্রণ জানিয়ে রাষ্ট্রপতিও সংবিধান লঙ্ঘনের দোষে দোষী হয়েছেন বলে মনে করেন তিনি।

শুক্রবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের জনসভায় আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আগামী ১২ তারিখে আমরা সরকার গঠন করব, শপথ গ্রহণ করব।

এর আগে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে জানান, নতুন মন্ত্রিসভা শপথ নিলে তারাই হবে দেশের নতুন সরকার। এখন পর্যন্ত আগের কেবিনেট আছে। নতুন কেবিনেট শপথ নিলে তখন থেকে তা কার্যকর হয়ে যাবে। নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের পর বিভিন্ন মন্ত্রিসভা কমিটি পুনর্গঠন করা হবে বলেও জানান তিনি।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব আরও জানিয়েছিলেন, অনেকেই বলেন যে- মন্ত্রিসভায় টেকনোক্রেট মন্ত্রী থাকে। আসলে বিষয়টি ভুল। বিষয়টি হলো মন্ত্রিসভায় ৯০ শতাংশ এমপিদের মধ্য থেকে এবং বাকি ১০ শতাংশ এমপি নন কিন্তু এমপি হওয়ার যোগ্য এমন ব্যক্তিদের সদস্য করা যায়। টেকনোক্রেট না বলে নন-এমপি বলাটাই ভালো।

নানা কারণে আগেই নতুন সরকারের কাঠামো নিয়ে বিভিন্ন আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। বিএনপি নির্বাচন না করায় জাতীয় পার্টি (জাপা) জাতীয় সংসদে প্রধান বিরোধী দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে। কিন্তু দলটি একই সঙ্গে সরকারেও থাকতে চায়।

ইতোমধ্যে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, নতুন সরকারে মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, কাজী ফিরোজ রশিদ ও জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু। রওশন এরশাদের সঙ্গে বৃহস্পতিবার রাতে প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাতের সময় তারা এ আগ্রহের কথা প্রকাশ করেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সংবিধান বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জাপার নেতারা মন্ত্রিসভায় যোগ দিলে দেশে ‘অদ্ভুত’ ধরনের সরকার গঠিত হবে। জাতীয় সংসদে মূলত কোনো বিরোধী দল থাকবে না।

(দ্য রিপোর্ট/আরএমএম/এমডি/শাহ/জানুয়ারি ১১, ২০১৪)