রবিবার থেকে ফের অবরোধ, পেট্রোলবোমার শঙ্কা
সাকির আহমদ, দ্য রিপোর্ট : বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের ডাকা দেশব্যাপী অনির্দিষ্টকালের ফের অবরোধ শুরু হচ্ছে রবিবার থেকে। একই দিন বিকেলেই গঠিত হচ্ছে নতুন সরকারের মন্ত্রিপরিষদ। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে রাজধানীতে অবরোধ কর্মসূচি প্রথম থেকেই ছিল ঢিলেঢালা। অবরোধে তেমন একটা প্রভাব না পড়লেও পেট্রোলবোমার শঙ্কা কারোরই পিছু ছাড়ছে না।
এদিকে, অবরোধ কর্মসূচিকে সামনে রেখে পুলিশ সারাদেশে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে বলে দ্য রিপোর্টকে জানিয়েছেন ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ (আইজিপি) হাসান মাহমুদ খন্দকার।
পুলিশের গোয়েন্দা শাখা থেকে শুক্রবার সকালে অবরোধ কর্মসূচি সম্পর্কে একটি বিশেষ প্রতিবেদন পুলিশ সদর দফতরে জমা দেওয়া হয়।
সূত্র জানায়, গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, রবিবার থেকে শুরু হতে যাওয়া অনির্দিষ্টকালের অবরোধ কর্মসূচিতে নাশকতার মতো ঘটনা ঘটতে পারে। বিশেষ করে সব ধরনের যানবাহন ও ট্রেনে পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ করা হতে পারে এমন ধারণাও দেওয়া হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও যেখানে লোকসমাগম বেশি হয় এমন স্থানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার সুপারিশ করা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে।
এ ব্যাপারে আইজিপি হাসান মাহমুদ খন্দকার দ্য রিপোর্টকে বলেন, সন্ত্রাসী ও নাশকতামূলক যে কোনো ধরনের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সতর্ক রয়েছে। এ ধরনের অপরাধের সঙ্গে যারা সংশ্লিষ্ট তাদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে রাজধানীসহ সারাদেশে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এরপরও রবিবার যে নতুন সরকার গঠিত হচ্ছে তা মাথায় রেখেই পুলিশ তৎপর রয়েছে। রাজধানীতে অবরোধ কর্মসূচির সময় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও লোকসমাগম বেশি হয় এমন জায়গায় গোয়েন্দা পুলিশের সার্বক্ষণিক নজরদারি থাকবে।
তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে প্রতিটি জেলার পুলিশ সুপারকে সতর্ক দৃষ্টি রাখাসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, গোয়েন্দা প্রতিবেদন পাওয়ার পর পুলিশের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা করণীয় ঠিক করতে নিজেদের মধ্যে অনির্ধারিত বৈঠকে মিলিত হন। অনির্ধারিত বৈঠকের পরই প্রতিটি জেলার পুলিশ সুপারকে সতর্ক দৃষ্টি রাখাসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেওয়া হয়।
অবরোধ ও হরতালে নাশকতা ঘটানোর পরিকল্পনা নিয়ে যানবাহনে যারা পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ করছে আসলে তারা কারা? এমন এক প্রশ্নের জবাবে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র ও গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম-কমিশনার মনিরুল ইসলাম দ্য রিপোর্টকে বলেন, এ পর্যন্ত অনেককে গ্রেফতার করা হয়েছে। আর গ্রেফতারদের একটি বড় অংশ হচ্ছে ছাত্রদলের নেতাকর্মী-সমর্থক। গ্রেফতারকৃতদের অনেকেই ছাত্রদলের ও তারা পেট্রোলবোমা নিক্ষেপকারী সে বিষয়টি কীভাবে নিশ্চিত হলেন? জবাব দিতে গিয়ে তিনি বলেন, গ্রেফতারের পরপরই তাদের সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এ ছাড়া রিমান্ডে নিয়ে এসে জিজ্ঞাসাবাদের সময় তারা পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ করার কথা স্বীকার করেছে।
প্রায়ই একটি অভিযোগ করা হয় যে, ছাত্রদলের ঘাড়ে সওয়ার হয়ে জামায়াতের সহযোগী সংগঠন ছাত্রশিবির ১৮ দলীয় জোটের আন্দোলনের সময় প্রায়ই ঝটিকা হামলার মাধ্যমে নাশকতা ঘটাচ্ছে। পুলিশের কাছে এ বিষয়ে কী তথ্য রয়েছে প্রশ্ন করা হলে জবাবে তিনি বলেন, পার্কিং করা যানবাহন ও পুলিশের ওপর সংঘবদ্ধ হামলার সঙ্গে শিবির জড়িত। এরা হঠাৎ করে হামলা চালিয়েই আত্মগোপনে চলে যায়। বিশেষ করে মতিঝিল কলোনীর সামনে রাস্তায় সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবারে হকাররা বসে। সেখানেই জুমার নামাজের পর শিবির নির্বিচারে ভাঙচুরসহ যানবাহনে আগুন লাগানোর মাধ্যমে তাণ্ডবলীলা চালিয়েছিল।
তিনি আরও জানান, অবরোধ কর্মসূচিতে যে কোনো ধরনের নাশকতা রোধে ডিএমপি প্রস্তুত। বিশেষ করে গোয়েন্দা পুলিশের সোয়াত স্কোয়াড, স্পেশাল টিম যে কোনো ঘটনার খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অপারেশনে নামবে। তা ছাড়া সার্বক্ষণিকভাবে থাকছে মটরসাইকেলের বিশেষ টহল।
উল্লেখ্য, সোমবার রাতে রাজধানীর আদাবর এলাকার সড়কের পাশে উপকরণসহ ৬৫টি পেট্রোল বোমা উদ্ধার করেছিল র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটলিয়ন (র্যাব)। তবে কে বা কারা এই পেট্রোলবোমা রেখে যায় পুলিশ তা এখনও বের করতে পারেনি।
(দ্য রিপোর্ট/এসএ/এসবি/সা/জানুয়ারি ১১, ২০১৪)