কুষ্টিয়া সংবাদদাতা : জেলার ২১টি বালু মহালের ইজারা হচ্ছে না। সরকারি কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় স্থানীয় প্রভাবশালীরা অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও বিক্রি করছেন। ফলে কোটি টাকার বেশি রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ২১টি বালু মহালের মধ্যে আছে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বাহাদুরখালী, মহানগর, চকুয়াদামা, শুকদেবপুর, জুগিয়া ও মৌজার বালু মহাল। ভেড়ামারা উপজেলার পশ্চিম চরদাদাপুর, চরগোলাগনগর-আরাজীসাড়া ও রূপপুর বালু মহাল। মিরপুর উপজেলার ঘোড়ামারা-রানাখড়িয়া, চরমাদিয়া, পশ্চিম দাদাপুর, মিনাপাড়া ও চরতালবাড়িয়া বালু মহাল। কুমারখালী উপজেলার লাহিনীপাড়া, জয়নাবাদ-ছেঁউড়িয়া, সেরকান্দি-আগ্রাকুণ্ডা-তেবাড়ীয়া-বরুরিয়া, পাথরবাড়ীয়া-উত্তর হিজলাকর-এনায়েতপুর, গোবিন্দপুর, ভাড়রা-এলঙ্গী বালু মহাল। খোকসা উপজেলার চাঁদট-ভবানীপুর-গনেশপুর-কোমরভোগ এবং ওসমানপুর বালু মহাল।

২০০৮ সালে স্থানীয় প্রশাসন থেকে সর্বশেষ বালু মহালগুলোর ইজারা ডাকা হয়। এরপর আর কোন ইজারা দেওয়া সম্ভব হয়নি।এ নিয়ে ভেড়ামারা উপজেলার মুক্তার হোসেন মুক্তি ও কুষ্টিয়া পৌর এলাকার বাসিন্দা বিএনপি নেতা আনোয়ারুল হক মাসুম হাইকোর্টে পাল্টাপাল্টি রিট পিটিশন করেন।

ভেড়ামারা উপজেলা প্রশাসন জানায়, এলাকার প্রভাবশালীরা বিআইডব্লউটিএ থেকে নাব্যতা রক্ষার জন্য নদী খননের অনুমতি নিয়ে অবৈধভাবে বালু মহাল থেকে বালু উত্তোলন শুরু করেন। ২০০৯ সালে এ বিষয়ে দরপত্র আহবান করলে প্রভাবশালীরা হাইকোর্টে রিট করেন।বিআইডব্লউটিএ ৩০ লাখ ঘনফুট বালু উত্তোলনের যে অনুমতি দিয়েছিল তা পূরণ না হওয়ায় তাদেরকে আরো সময় দেওয়া প্রয়োজন বলে হাইকোর্ট আদেশ দেন।

গত ৪ বছরেও ৩০ লাখ ঘনফুট বালু তুলতে সক্ষম হননি বলে দাবি করছেন রিটকারীরা। হাইকোর্ট শর্তসাপেক্ষে বালু তোলার অনুমতি দিলেও শর্ত ভঙ্গের অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ২০০৮ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত কোন জেলা প্রশাসকই বালু মহালগুলো মুক্ত করতে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করনেনি। ফলে সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে। তবে বর্তমান জেলা প্রশাসক সৈয়দ বেলাল হোসেন বালু মহালসংক্রান্ত মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য আইন ও ভূমি সচিবকে চিঠির মাধ্যমে অনুরোধ জানিয়েছেন। সর্বশেষ ১৩ আগস্ট আইন সচিবকে আরেক দফা চিঠি পাঠান তিনি।

প্রশাসন সূত্রে আরো জানা যায়, সপ্তাহ খানেক আগে রিট পিটিশন মামলা দুটি খারিজ করে দেওয়ার পাশাপাশি স্থানীয় প্রশাসনকে বালুমহালগুলো বুঝে নেওয়ার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। এরপর পুনরায় উচ্চ আদালতে আপিল করেন ওই দুই ব্যক্তি।

অভিযোগ রয়েছে, প্রতিদিন লাখ লাখ ঘনফুট বালু উত্তোলন করে বিক্রি করা হচ্ছে। প্রতি ট্রাক বালু ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। ইজারা না দেওয়ায় সরকার প্রতি বছর কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে।

কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক সৈয়দ বেলাল হোসেন এ প্রসঙ্গে বলেন, বালু মহাল ইজারা না হওয়ায় সরকার প্রতি বছর কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে। বিষয়টি আইন ও ভূমি সচিবকে একাধিকবার অবহিত করা হয়েছে। আশা করছি, দ্রুত রিট নিষ্পত্তি হয়ে মহালগুলোর বৈধ ইজারা দেওয়া সম্ভব হবে।

(দিরিপোর্ট২৪/জেএইচজে/এইচএস/এমএআর/অক্টোবর ২৯, ২০১৩)