রাজধানীর বাজারের চালচিত্র
বেড়েছে চালের দাম
আল হেলাল শুভ, দ্য রিপোর্ট : দুদিন বিরতি পর রবিবার থেকে ফের অবরোধের কবলের পড়ছে দেশ। একই সঙ্গে দেশে চলছে মাঝারি থেকে তীব্র শৈতপ্রবাহ। এমন প্রতিকূল পরিস্থিতির প্রভাব পড়েছে রাজধানীর চালের বাজারেও।
অবরোধ ও শৈতপ্রবাহের কারণে কয়েক দফা বেড়েছে চালের দাম। তবে শীতকালীন সবজিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম কিছুটা স্থিতিশীল থাকলেও বেড়েছে মাছ, আটা ও বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম। শনিবার রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে এমন চিত্র মিলেছে।
কারওয়ান বাজারের পাইকারি চাল ব্যবসায়ীরা জানান, আমরা আবারও অবরোধের কবলে পড়ছি। এ অবস্থায় স্বাভাবিকভাবেই বেড়ে যাবে পরিবহন ব্যয়। সরু থেকে মোটা চাল প্রতি কেজিতে দুই টাকা বেড়েছে। বর্তমানে মোটা চাল (আঠাশ) ৪৬ টাকা এবং সরু চালের মধ্যে নাজিরশাইল ৫০ থেকে ৫৬ ও মিনিকেট ৪৬ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে অন্য বাজারে সব ধরনের চাল আড়াই থেকে তিন টাকা বেশিতে বিক্রি হচ্ছে।
চাল ব্যবসায়ী জসিমউদ্দিন জানান, ‘মিলাররা বলছেন, বোরো মৌসুমের এখনও ঢের দেরি। তাই বর্তমানে ধানের দাম কিছুটা বেশি। এরপরও দাম বাড়তির মূল কারণ হচ্ছে, অবরোধে বাড়তি পরিবহন ব্যয়। গত অবরোধেও ১৭ হাজার টাকার ট্রাক ভাড়া ৪৭ হাজার টাকায় গিয়ে ঠেকেছিল। পরিবহন ব্যয়ের কারণে চালের দাম প্রতি কেজিতে ১ টাকা ২০ পয়সা থেকে তিন টাকা পর্যন্ত বেড়ে যায়।’
চালের দাম বৃদ্ধি নিয়ে একই সুরে কথা বলেছেন ফিরোজ আলম নামের অপর ব্যবসায়ী। তিনি জানান, ‘অবরোধের কারণে পরিবহন ব্যয় বাড়লে পরবর্তী সময়ে তা তেমন একটা কমে না। সহসাই শেষ হয়েছে আমন ধানের মৌসুম। এরপরও চালের দাম বাড়তির দিকে।
রাজধানীতে সবচেয়ে বেশি চাল আসে উত্তরবঙ্গ থেকে। আর শীত মৌসুমের প্রথম থেকেই ওই এলাকায় রাতের পুরোটা সময়ই কুয়াশাচ্ছন্ন থাকে। ফলে চাল আমদানিতে বিঘ্ন হচ্ছে।’
অন্যদিকে, বাজারে পেঁয়াজ ও সবজির বাজার অনেকটা স্থিতিশীল। তবে সবজির চাহিদা বেশি থাকলে আড়তদাররা সিন্ডিকেট করে প্রায়ই দাম বাড়িয়ে দেন- এমন অভিযোগ মিলেছে মোহাম্মদপুর টাউনহল কাঁচাবাজারের খুচরা বিক্রেতাদের কণ্ঠে।
দুলাল মিয়া জানান, সবজির দাম চাহিদার ওপর নির্ভর করে। ঢাকায় আসার পর যদি চাহিদা বেশি থাকে তাহলে ব্যাপারিরা (আড়তদার) বেশি দাম হাঁকান। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘রোজকার চাহিদার চেয়ে কম সবজি আসলেই পাইকাররা দাম বাড়িয়ে দেয়। আর বাধ্য হয়ে বেশি দামে কিনে আমাদের বিক্রি করতে হয়।’ একই অভিযোগ করেছেন কাওরান বাজারের খুচরা বিক্রেতারা।
বাজারে প্রতি কেজি টমেটো প্রকারভেদে বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়। এ ছাড়া কাঁচামরিচ প্রতি কেজি ৬০ টাকা, সিম ৩০ টাকা, ফুল কপি ২৫ থেকে ৩৫ টাকা, বেগুন ৪০ টাকা, আলু ২০ টাকা ও শসা ৩০ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মোহাম্মদপুর টাউনহল কাঁচাবাজারের সবজি ব্যবসায়ী আইনুল ইসলাম জানান, অবরোধের পর এখন বিক্রি ভালো। প্রতিদিন গড়ে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা বিক্রি হচ্ছে। বরবটির মৌসুম শেষ হওয়ার পথে। তাই দামটা একটু বেশি। বর্তমানে প্রতি কেজি বরবটি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকায়।
হাতিরপুল বাজারের ব্যবসায়ী এরশাদ জানান, শীতের কারণে মাছের আমদানি কম। এ জন্য মাছের দাম কিছুটা বেড়েছে। এ কথার সত্যতা পাওয়া গেছে ক্রেতা মোবারক হোসেনের কণ্ঠে। তিনি বলেন, ‘নিয়মিত বাজার করি। প্রতি সপ্তাহে মাছের দাম বাড়ছেই।’
এদিকে, দেশি মুরগির কেজি ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা, খাসির মাংস ৪২০ থেকে ৪৫০ টাকা ও মানভেদে গরুর মাংস ২৮০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মোহাম্মদপুর টাউনহল কাঁচাবাজারের খাসির মাংস বিক্রেতা খোরশেদ আলম বলেন, খাসির দাম বেশি হওয়ায় মাংসের দাম সামান্য বেড়েছে। কাপ্তান বাজার ও যাত্রাবাড়ী পাইকারি হাটে খাসির দাম বেশি। অবরোধের কারণে পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ায় এ অবস্থা।
অন্যদিকে, অনেক দিন পর পেঁয়াজের বাজার স্থিতিশীল হয়েছে। তিন অংক থেকে এখন দাম নেমে ত্রিশের ঘরে এসেছে। কাওরান বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী ফিরোজ বিশ্বাস বলেন, যদি অবরোধ দীর্ঘয়িত হয় তা হলে এর প্রভাব পেঁয়াজের দামের ওপর পড়তে পারে। বর্তমানে কারওয়ান বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩৪ টাকায়। বিপরীত চিত্র দেখা গেছে হাতিরপুল বাজারে। সেখানে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৪৫ থেকে ৪৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এ ছাড়া ডিম হালি প্রতি ২৮ টাকা, দেশি ডাল কেজিতে ১১০ ও বিদেশি ডাল ৮০ টাকা, চিনি প্রতি কেজি ৪৫ টাকা, প্যাকেটজাত ৩৬ টাকা কেজির আটা বিক্রি হচ্ছে ৩৮ টাকায়।
সয়াবিন তেল লিটার প্রতি দুই টাকা বেড়েছে বলে জানান হাতিরপুল বাজারের ভাই ভাই স্টোরের মালিক আমির হোসেন।
(দ্য রিপোর্ট/এস/এমএআর/এনআই/জানুয়ারি ১১, ২০১৪)