দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : রাজনীতির মাঠে বহুল আলোচিত জামায়াতে ইসলামী কোনো পাতানো ফাঁদে পা দিতে চায় না। রবিবার নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের পর সরকারের পরবর্তী পদক্ষেপ দেখেই তারা সামনের দিকে অগ্রসর হবে। একই সঙ্গে সংখ্যালঘু ইস্যুসহ চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন দলটির শীর্ষ নেতৃত্ব। জামায়াত সূত্রে এ সব তথ্য জানা গেছে।

জামায়াত-শিবির নেতাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, চলমান সরকারবিরোধী আন্দোলনকে ভিন্নখাতে নিতেই নানা কৌশলে এগোচ্ছে সরকার। সেই কৌশলের অংশ হিসেবেই সংখ্যালঘু ইস্যুটি সামনে এনেছে তারা। উদ্দেশ্য জামায়াত-শিবিরকে সহিংস করে তোলা। আমেরিকা ও ইউরোপের দেশগুলোর কাছে দলটিকে সন্ত্রাসী ও জঙ্গি হিসেবে তুলে ধরা। এটিকে সরকারের ফাঁদ হিসেবেই দেখছেন শীর্ষ নেতারা। সরকারের এ কৌশলের সঙ্গে প্রতিবেশী একটি দেশেরও রোল আছে বলে জামায়াত নেতারা মনে করেন।

জামায়াত সূত্র জানায়, ‘আওয়ামী লীগ ও প্রতিবেশী একটি দেশের পক্ষ থেকে বারংবার জামায়াত-শিবিরকে টেররিস্ট পার্টি বলা হচ্ছে। আমেরিকা ও ইউরোপের দেশগুলোর কাছে এ বিষয়ে তারা অভিযোগও করেছে। কিন্তু জামায়াতকে একটি মডারেট ইসলামিক পার্টি হিসেবে আখ্যা দেওয়া এ সব দেশের কাছে বিষয়টি এখনও প্রতিষ্ঠিত না হওয়ায় নতুন কৌশলে এগোচ্ছে আওয়ামী লীগ।’

৫ জানুয়ারি বিরোধী দলবিহীন দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর যশোর, সাতক্ষীরা, দিনাজপুরসহ দেশের বেশ কিছু এলাকায় সংখ্যালঘু হিন্দুদের ওপর হামলা, বাড়িঘর, ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান ও উপাসনালয়ে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এ সব ঘটনার সঙ্গে স্থানীয় জামায়াত-শিবিরকেই দায়ী করা হচ্ছে সরকার ও প্রগতিশীলদের পক্ষ থেকে। অভিযোগ করা হচ্ছে জামায়াত-শিবির অধ্যুষিত এ সব এলাকায় হিন্দুরা ভোট দেওয়ায় হামলা করেছে জামায়াত-শিবির। হিন্দুদের ওপর হামলা-নির্যাতনের ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারে বিশেষ অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এমনকি তাদের বিচার বিশেষ ট্রাইব্যুনালে করার ব্যাপারেও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আইন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এ নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, পেশাজীবী সংগঠন ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রতিবাদের ঝড় উঠছে। প্রতিদিন প্রতিবাদ সমাবেশ-মানববন্ধন হচ্ছে।

তবে এ সব অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে আসছে জামায়াত। সর্বশেষ ৯ জানুয়ারি দলটির ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান এক বিবৃতিতে দাবি করেন, ‘সরকার সংখ্যালঘুদের নিয়ে রাজনৈতিক নোংরা খেলায় মত্ত। ৫ জানুয়ারি একদলীয় প্রহসনের নির্বাচনের পর নিজেদের রাজনৈতিক বিপর্যয় ঠেকাতে এবং বিশ্ব সম্প্রদায়ের দৃষ্টি ভিন্নখাতে নিতে দলীয় ক্যাডারদের দিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘুদের ওপরে নির্যাতন চালিয়ে তা বিরোধী দল, বিশেষ করে জামায়াত-শিবিরের ওপর চাপানোর এক ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে।’

তিনি দাবি করেন, ‘জামায়াতের ইতিহাসে ভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের ওপর হামলা ও জ্বালাও-পোড়াও ঘটনার সঙ্গে কোনো ধরনের সম্পৃক্ততার নজির নেই। এ সব ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

জামায়াত সূত্র আরও জানায়, আপাতত সহিংস রাজনীতিতে নিজেদের সম্পৃক্ত করা থেকে বিরত থাকছে দলটি। রবিবার বিকেলে নতুন মন্ত্রিসভা গঠন হচ্ছে। নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের পর সরকারের পরবর্তী পদক্ষেপ কী হয় তা দেখতে চায় জামায়াত। এ পর্যন্ত নেতাকর্মীদের সহিংস কর্মসূচি থেকে দূরে থাকতে বলা হয়েছে শীর্ষ মহল থেকে। ততদিন বিএনপির সঙ্গে ঢিলেঢালাভাবে মাঠের আন্দোলনে থাকতে বলা হয়েছে।

এমনিতেই পুলিশের ওপর হামলা ও রাজপথে সহিংসতার অভিযোগ রয়েছে জামায়াত-শিবিরের বিরুদ্ধে। তাই নতুন করে আর কোনো কলঙ্কে জড়াবে না তারা। কারণ সহিংস রূপ ধারণ করে বিদেশিদের কাছে বিশেষ করে আমেরিকা ও ইউরোপীয় দেশগুলোর কাছে টেররিস্ট হিসেবে পরিচিত হতে চায় না দলটি। তাই সবকিছু মাথায় রেখেই এগোচ্ছেন দলের শীর্ষ নেতারা।

এ ব্যাপারে জামায়াতে ইসলামীর সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদ দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামী গণতান্ত্রিক ও সংবিধান স্বীকৃত পন্থায় আন্দোলনে বিশ্বাসী। জামায়াতের সুদীর্ঘ ইতিহাসে কোনো ধরনের হিংসাত্মক, ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ততা নেই। ৫ জানুয়ারি জনগণের অংশগ্রহণ ছাড়াই অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নামে নাটক মঞ্চস্থ করে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার পথে অগ্রসর হচ্ছে সরকার। এ জন্য তারা জনগণ ও আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি ভিন্নখাতে নিতে সংখ্যালঘু ইস্যুটি সামনে নিয়ে এসেছে।

(দ্য রিপোর্ট/কেএ/এসবি/এনআই/জানুয়ারি ১১, ২০১৪)