এ টি এম হায়দার
দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : লেফটেন্যান্ট কর্নেল এ টি এম হায়দার ১৯৪২ সালের ১২ জানুয়ারি কলকাতার ভবানীপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধকালে পর্যায়ক্রমে ২নং সেক্টরের সহ-অধিনায়ক ও সেক্টর কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন। স্বাধীনতা যুদ্ধে অবদান রাখার জন্য তিনি বীর উত্তম খেতাব পান।
তার পুরো নাম আবু তাহের মোহাম্মদ হায়দার। গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার জয়কা ইউনিয়নের কান্দাইল গ্রামে। বাবা মোহাম্মদ ইসরাইল বৃটিশ ও পাকিস্তান পুলিশ বিভাগের ইন্সপেক্টর ছিলেন। মা হাকিমুন নেসা গৃহিনী। দুই ভাই ও তিন বোনের মধ্যে লে. কর্নেল হায়দার ছিলেন দ্বিতীয়।
তার স্কুল জীবনের শুরু পাবনার বীণাপানি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। কিশোরগঞ্জ রামানন্দ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৫৮ সালে এসএসসি পাস করেন। ১৯৫৮ সালে স্কাউট হিসেবে পশ্চিম পাকিস্তানের লাহোর জাম্বুরীতে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৬১ সালে কিশোরগঞ্জ সরকারি গুরুদয়াল কলেজ থেকে আইএ পাস করেন। এরপর পশ্চিম পাকিস্তানের লাহোর ইসলামিয়া কলেজ থেকে দ্বিতীয় বিভাগে বিএসসি ডিগ্রী লাভ করেন। লাহোরের পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিসংখ্যানে মাস্টার্স ১ম পর্ব পড়াকালে সেনাবাহিনীতে আবেদন করে কমিশনের জন্য মনোনীত হন।
১৯৬৫ সালে সেনাবাহিনীতে কমিশন লাভ করেন। পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমী কাকুলে ট্রেনিং করেন এবং কমিশনের পর গোলন্দাজ বাহিনীর অফিসার হিসাবে নিয়োজিত হন। পরে তিনি চেরাটে স্পেশাল সার্ভিস গ্রুপ ট্রেনিংয়ে কৃতিত্বের সাথে উর্ত্তীর্ণ হন। এই প্রশিক্ষণে ৩৬০ জন অফিসারের মধ্যে বাঙালি ছিলেন মাত্র দুইজন। ট্রেনিং শেষে মুলতান ক্যাণ্টনমেন্টে পোস্টিং হয় এবং ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত সেখানেই ছিলেন। তৃতীয় কমান্ডো ব্যাটালিয়নের ক্যাপ্টেন হিসেবে ১৯৬৯ সালের শেষে অথবা ১৯৭০ সালের প্রথম দিকে তিনি কুমিল্লা সেনানিবাসে নিয়োগ পান। ১৯৭১ সালের জানুয়ারি মাসে বদলি করে ঢাকায় নিয়ে আসা হয় এবং ১৫/২০ দিন পর আবার কুমিল্লায় নিয়োগ দেয়া হয়।
২৬ মার্চ ১ম কমান্ডো ব্যাটেলিয়নের কর্মকর্তা থাকাকালে কুমিল্লা সেনানিবাস থেকে পালিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। শুরু থেকেই ২নং সেক্টরের কমান্ডার মেজর খালেদ মোশাররফের সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ভারতের মেলাঘর প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে মুক্তিযোদ্ধাদের কমান্ডো, বিস্ফোরক ও গেরিলা ট্রেনিংসহ শপথ করাতেন তিনি। মেলাঘরে প্রথম স্টুডেন্ট কোম্পানি গঠন করেন। এই কোম্পানিকে তিনিই ট্রেনিং দিতেন।
কিশোরগঞ্জ-ময়মনসিংহ মহাসড়কের উপর তারের ঘাটপুল ও মুসল্লি রেলপুল, ঢাকা-চট্রগ্রামের মহাসড়কের ফেনিতে বড়পুল ধবংসসহ একাধিক অপারেশনের নেতৃত্ব দেন তিনি। অক্টোবরের ৭ তারিখে খালেদ মোশাররফ নিয়মিত ব্রিগেড কে' ফোর্সের কমান্ড গ্রহণ করলে তিনি সেক্টর অধিনায়কত্ব লাভ করেন। ১৬ ডিসেম্বর পাকবাহিনীর আত্মসমর্পন অনুষ্ঠানে তিনি উপস্থিত ছিলেন। ঔদিন প্রথম ঢাকা বেতারে ও টিভি থেকে ঘোষণা করেন, ‘আমি মেজর হায়দার বলছি- মুক্তিবাহিনীর প্রতি নির্দেশ...।’ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ১৯৭৩ সালে তাকে বীর উত্তম উপাধিতে ভুষিত করে।
তার ছোট বোন ক্যাপ্টেন সিতারা বেগম ও ছোট ভাই এ টি এম সফদারও মুক্তিযোদ্ধা। সিতারা বেগম মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য বীর প্রতীক খেতাব প্রাপ্ত।
স্বাধীনতার পর তিনি কুমিল্লা সেনানিবাসে ১৩ ইস্ট বেঙ্গল প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৭৪ সালে তিনি লেফটেন্যান্ট কর্ণেল পদে উন্নীত হন ও চট্রগ্রাম সেনানিবাসে ৮ম বেঙ্গলের কমান্ডিং অফিসার হিসেবে নিয়োগ পান। ১৯৭৫ সালের নভেম্বরে পিতার জরুরি টেলিগ্রাম পেয়ে ঢাকায় আসেন এবং জেনারেল খালেদ মোশাররফের সঙ্গে দেখা করতে যান।
১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর আবু তাহেরের পাল্টা অভ্যুত্থানে (সিপাহি বিপ্লব) তিনি নিহত হন। ১১ নভেম্বর কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় তাকে সমাহিত করা হয়।
(দ্য রিপোর্ট/ওএস/ডব্লিউএস/জানুয়ারি ১২, ২০১৪)