‘আন্দোলন ভিন্ন খাতে নিতে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা’
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : দশম জাতীয় নির্বাচন বাতিলের আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে নিতে সুকৌশলে সংখ্যালঘুদের ওপর জঘন্য হামলা চালানো হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন।
তিনি বলেন, ‘একটি অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয়েছে ভোটারবিহীন নির্বাচন। এ জন্য দায়ীদের একদিন আদালতের এবং জনগণের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে।’
সুপ্রিম কোর্টে ‘ল’ রিপোর্টার্স ফোরামের কার্যালয়ে রবিবার জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরোমের উদ্যোগে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ সব কথা বলেন তিনি।
অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী সংবিধান রক্ষার কথা বললেও তিনি নিজেই সংবিধান লঙ্ঘন করছেন। এ জন্য অবশ্যই একদিন তাকে জনগণের কাছে জবাব দিতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমি এর আগেই বলেছিলাম সংবিধানের ত্রয়োদশ ও পঞ্চদশ সংশোধনীর ফলে দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা একটি অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়বে। আমার ধারণাই সঠিক হল।’
জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘গত ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম সংসদ নির্বাচন সংবিধান সম্মত হয়নি। নিয়ম হল সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠান করা। কিন্তু সরকার তার মেয়াদ শেষ না করে নির্বাচন করেছে।’
তিনি বলেন, ‘সংসদ সদস্যদের শপথ অনুষ্ঠান এবং মন্ত্রীদের শপথ পাঠ সংবিধান সম্মত হবে না।’ এ সরকার পদে পদে সংবিধান লঙ্ঘন করছে বলেও মন্তব্য করেন এ আইনজীবী।
জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘সংবিধানে উল্লেখ আছে সব নাগরিকের সমঅধিকার। এখানে সংখ্যালঘু এবং সংখ্যাগুরু বলে কোনো বিষয় নেই। গত ৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনের পরে বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর সন্ত্রাসীরা যে হামলা চালিয়েছে তার প্রতিবাদের ভাষা আমাদের জানা নেই। এ ধরনের হামলায় যারা জড়িত তারা সন্ত্রাস। এ জন্য তাদের অবশ্যই বিচার হওয়া উচিত।’
একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির মাধ্যমে তদন্ত করে দোষীদের যথাযথ শাস্তির ব্যবস্থা করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের পেছনে একটি রাজনৈতিক চক্রান্ত রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘গত ৫ জানুয়ারি ভোটারবিহীন নির্বাচন বাতিলের আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে সুকৌশলে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর এ জঘন্য হামলা চালানো হয়েছে।’
জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘আমরা যারা জাতীয়তাবাদী রাজনীতিতে বিশ্বাসী, তারা ধর্মবিদ্বেষী নয়। বহু হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক জাতীয়তাবাদী দলে আছেন।’
উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ‘যেমন আমাদের মাঝে রয়েছেন গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী।’
জাতীয়তাবদী সব আইনজীবীর উদ্দেশে জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘প্রতি জেলা বারের স্ব স্ব এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনায় জড়িতদের তালিকা করে সুপ্রিম কোর্ট ফোরামের কাছে পাঠান।’
সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সভাপতি বলেন, ‘সংবিধানের ১২৩(৩)(ক) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ হিসেবে নতুন সংসদের কার্যভার গ্রহণের সময় ২৪ জানুয়ারির পর। কারণ বর্তমান সরকারের পাঁচ বছরের মেয়াদ পূর্ণ হবে আগামী ২৪ জানুয়ারি। সরকারের মন্ত্রীরা বলছেন, সংসদের শপথ গ্রহণের পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে পূর্বের সংসদ ভেঙে যায়, এ কথাটি সঠিক নয়।’
সরকার ক্রমাগতভাবে একটির পর একটি বিষয়ে সংবিধান লঙ্ঘন করে যাচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন বিএনপিপন্থি এ আইনজীবী।
গ্রেফতার বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, খন্দকার মাহবুব হোসেন, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনসহ অন্য আইনজীবীকে অবিলম্বে মুক্তির দাবি জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে- উপস্থিত ছিলেন অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী ও ব্যারিস্টার রাগিব রউফ চৌধুরী।
(দ্য রিপোর্ট/এসএ/এনডিএস/সা/জানুয়ারি ১২, ২০১৪)