দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : কোন ধরনের চাপের মুখে মাথা নত করবেন না বলে জানিয়েছেন নতুন সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়া শেখ হাসিনা। শপথের পর বঙ্গভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

নতুন সরকার আন্তর্জাতিক চাপের আশঙ্কা করছে কিনা জানতে চাইলে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আন্তর্জাতিক হোক আর জাতীয় হোক শেখ হাসিনা কোন চাপের কাছে মাথা নত করে না, এটা তো ভালো করেই জানেন। দেশটা আমাদের, জনগণ আমাদের। দেশের ও জনগণের কল্যাণে যা করার তাই করে যাবো।’

নির্বাচনের পর বিএনপির সঙ্গে সমঝোতায় বসা ও আরেকটি নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে শেখ হাসিনা বলেন, ‘গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা বজায় রাখা ও উন্নয়নে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না হয় সে বিষয়ে লক্ষ্য রাখা। পাশাপাশি সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ বন্ধ করাও হবে আমাদের প্রধান কাজ।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমার একটাই কথা, তারা (বিএনপি) হরতাল-অবরোধ দিয়ে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। সাধারণ মানুষকে পুড়িয়ে মারছে। এ সব ধ্বংসাত্মক কাজ তাদের বন্ধ করতে হবে। যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গ ছাড়তে হবে। এরপরই তাদের সঙ্গে সমঝোতা হতে পারে। তাই সমঝোতার কারণে গণতন্ত্রিক ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য যে কোন পদক্ষেপ আমরা নিতে পারি।’

সরকারে থাকা দলই বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করবে- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে শেখ হাসিনা বলেন, আপনাদের স্মৃতি এতো তাড়াতাড়ি অস্পষ্ট হয়ে যায়, এটা দেখে আমি সত্যিই খুব দুঃখিত। ১৯৯৬ সালেও আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের সময় বিরোধী দলসহ অন্যান্য দলের সকলকে নিয়েই ঐকমত্যের সরকার গঠন করা হয়েছিল। আমি স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি, এমন দৃষ্টান্ত নতুন নয়। এ দৃষ্টান্ত আমিই সৃষ্টি করেছিলাম ’৯৬ সালে। কারণ আমরা দেশের উন্নয়ন চাই।’

তিনি আরো বলেন, ‘আপনারা একদিকে বলবেন ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে, আবার সবাইকে নিয়ে চলতে গেলে প্রশ্ন করবেন। এটা তো ঠিক নয়।’

সরকার আন্তর্জাতিক সমর্থন পাওয়ার বিষয়ে কতটুকু আশাবাদী জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সকলেই সহযোগিতা করবে। কারণ গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত থাকুক এটা সবাই চায়। এ ছাড়া আমাদের যথেষ্ট কূটনৈতিক সাফল্য রয়েছে।

সরকারের ভেতরে ও বাইরে দুটি বিরোধী দল রয়েছে। দুই বিরোধী দল কিভাবে মোকাবেলা করবেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার মনে হয় আপনি ভুল করছেন। বাংলাদেশ বহুদলীয় গণতন্ত্রের দেশ। দুটি দল নয়, অনেক দল রয়েছে। সব দল মোকাবেল করা বড় কথা নয়। আমরা সবার সহযোগিতা চাই। সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে চাই।

পদ্মা সেতু সংক্রান্ত এক প্রশ্নের বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ইতোমধ্যে মূল পদ্মা সেতুর টেন্ডার হয়ে গেছে। মূল সেতুর নির্মাণ কাজ আমরা আগামী জুনের মধ্যে শুরু করতে পারবো। এ ছাড়া অ্যাপ্রোচ রোড, পুনর্বাসনসহ সেতুর আনুষঙ্গিক কাজ শুরু হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছে। এমন কাজ নেই বাঙালিরা পারে না। দরকার সঠিক নেতৃত্ব, সঠিক দিকনির্দেশনা ও ইচ্ছা। সেটা আমাদের আছে।

জামায়াত নিষিদ্ধের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ বিষয়ে মামলা চলছে। তাই এ বিষয়ে এখন কিছু করার নেই।

তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে মমতার সঙ্গে কথা বলবেন কিনা- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, সীমান্ত নিয়ে ইতোমধ্যে সমঝোতা হয়েছে। তিস্তা নিয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে। আমি মনে করি প্রতিবেশী দেশ হিসেবে একটা সমঝোতায় আসা উচিৎ। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে যে কোন সমস্যার সমাধান হতে পারে।

মন্ত্রিসভা আগামীতে আর বাড়বে কিনা- এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মন্ত্রিসভা সব সময়ই রিসাফল (পুনর্বিন্যাস) হয়। এটাই নিয়ম। তবে বড় হবে না ছোট হবে এটা আগেই বলা যায় না। এটা নির্ভর করে।

এবার মন্ত্রিসভায় অনেক কম সংখ্যক নারী সদস্য রয়েছে। মন্ত্রিসভা পুনর্গঠনের সময় নারীদের সংখ্যা বাড়ানো হবে কিনা- এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, কম সংখ্যক কোথায়? সাংবাদিকরা বলেন, তিনজন মাত্র। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আছি না।’ এ সময় সবাই সমস্বরে হেসে ওঠেন।

‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলছে, বিচারের রায় হবে। রায় কার্যকর হতে থাকবে।’ অপর এক প্রশ্নের জবাবে জানান প্রধানমন্ত্রী।

‘বিএনপি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে আসবে’- এমন প্রত্যাশা ছিল জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি নেত্রী নির্বাচনে না এসে ‘যে ভুল’ করেছেন- তা তিনি এখন বুঝতে পারছেন। আমি জানি না উনাদের কে পরামর্শ দেন। তবে তিনি ভুল বুঝতে পেরেছেন।

তিনি আরো বলেন, দুঃখের বিষয়, গণতন্ত্রের ভিত মজবুত করতে তাদের যে দায়িত্ব তারা তা পালন করেনি। যদি আসত, তা হলে গণতন্ত্রের ভিত্তি আরো দৃঢ় হতো।

আরেকবার সরকার গঠনের সুযোগ দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী ভোটারদের ধন্যবাদ জানান এবং নির্বাচনের পর বিভিন্ন স্থানে হামলার ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান।

(দ্য রিপোর্ট/আরএমএম/এনডিএস/এমএআর/ এনআই/জানুয়ারি ১২, ২০১৪)