বাহরাম খান, দ্য রিপোর্ট : বহুল আলোচিত-সমালোচিত নির্বাচনের পর শপথ নিয়েছে নতুন সরকার। নির্বাচনের নৈতিক ভিত্তি নিয়ে সমালোচনা থাকলেও আইনগত বাধা ছিল না। নতুনভাবে নির্বাচিত এমপিদের শপথ ও মন্ত্রিপরিষদের শপথ নিয়ে আইনগত বির্তক রয়েছে খোদ আওয়ামী লীগের মধ্যে।

রবিবার বঙ্গভবনে বিকেল ৩টা ৩৫ মিনিটে তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বঙ্গভবনে তাকে শপথবাক্য পাঠ করান। সংবিধানের ৫৬ অনুচ্ছেদের ৩ ধারা অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী এ শপথ নেন।

এর পর পরই সংবিধানের ৫৬ অনুচ্ছেদের ১ ধারা অনুযায়ী শপথ নেন ৪৮ জন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রিপরিষদ সদস্য ৪৯। এদের মধ্যে পূর্ণমন্ত্রী ৩০, প্রতিমন্ত্রী ১৭ ও উপমন্ত্রী ২ জন।

শপথ নেওয়ার পর প্রথম প্রতিক্রিয়ায় প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, আন্তর্জাতিক হোক আর জাতীয় হোক শেখ হাসিনা কোনো চাপের কাছে মাথা নত করে না, এটা তো ভালো করেই জানেন। দেশটা আমাদের, জনগণ আমাদের। দেশের ও জনগণের কল্যাণে যা করার তাই করে যাব।’ এ সময় সরকার পরিচালনার ক্ষেত্রে সবার সহযোগিতাও কামনা করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রিপরিষদ সদস্যদের দফতর তালিকা-

নতুন মন্ত্রিসভা খুব ভালো হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সরকারি দলের সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। তিনি বলেন, এই সরকার নিয়ে দেশ আরও অনেক দূর এগিয়ে যাবে।’ এ সময় হেঁটে হেঁটে বঙ্গভবন ছাড়ার সময় তাকে খুব বিষণ্ন দেখাচ্ছিল।

পরিবেশ ও বনমন্ত্রী হিসেবে সদ্য শপথ নেওয়া আনোয়ার হোসেন মঞ্জু সফল হওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেন। বঙ্গভবন থেকে বের হওয়ার পথে সাংবাদিকদের দেওয়া প্রতিক্রিয়ায় জাতীয় পার্টির (মঞ্জু) এ নেতা বলেন, ‘সংকট পৃথিবীর সব জায়গায় আছে। যারা সফলভাবে সংকট মোকাবেলা করতে পারেন তারা জয়ী হন। আমরা আশাবাদী সফল হব।’

শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেন, নতুন সরকারের পথ চলা শুরু হল। এগিয়ে যেতে হবে। পেছনের দিকে তাকানো যাবে না।

শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ শপথ শেষে বঙ্গভবন থেকে বের হওয়ার পথে সাংবাদিকদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী আবারও দায়িত্ব দিয়েছেন। আশা করি, সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারব।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন, ‘আমরা সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ব। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ নতুন গন্তব্যে এগিয়ে চলবে।’

মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি বলেন, ‘সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ। আমরা সব চ্যালেঞ্জে সফল হব আশা করি। ইতোমধ্যে আমরা সফল একটি সরকার পরিচালনা করেছি। সামনের দিনে এর ধারাবাহিকতা থাকবে।’

পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বলেন, ‘আমি খুব খুশি। নেত্রীকে ধন্যবাদ। দায়িত্ব নিয়ে কাজ করব।’

বিদুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু বলেন, নতুন দায়িত্ব পালনের অঙ্গীকার নিয়েছি। গণমানুষের চাহিদা মতো কাজ করতে চাই।

আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানিয়ে নিজের প্রতিক্রিয়ায় ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান জাভেদ বলেন, ‘ভালো করে কাজ করার শপথ নিয়েছি। কাজ করব ইনশাল্লাহ।’

এদিকে নতুন মন্ত্রিসভা নিয়ে জাতীয় পার্টির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, ‘জাতীয় পার্টির সমন্বয়ে সরকার গঠিত হয়েছে। ভালো সরকার হবে বলে আশা করি। সরকার গঠন নিয়ে জনগণের মধ্যে কিছুটা বিভ্রান্তি রয়েছে। দু-একদিনের মধ্যে সব কেটে যাবে।’ গণতান্ত্রিক সরকারে সবার সমালোচনা সহ্য করতে হয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

প্রধান বিরোধী দল বিএনপির বর্জনের মধ্যেই ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ২৯২ জন সাংসদের মধ্যে ২৯০ জন সাংসদের নাম গেজেট আকারে প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন।

২৯২টি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২৩১, জাতীয় পার্টি ৩৩, ওয়ার্কার্স পার্টি ছয়, জাসদ পাঁচ, জাতীয় পার্টি (জেপি) এক, তরীকত ফেডারেশন এক, বিএনএফ এক ও স্বতন্ত্র ১৪ জন প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন।

এর আগে বিনাপ্রতিদ্বিন্দ্বিতায় ১৫৩ জন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। নির্বাচন হয় ১৪৭ আসনে। দশম সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে আটটি আসনের ফল স্থগিত রয়েছে। ১৬ জানুয়ারি এ সব এলাকায় নির্বাচনের কথা রয়েছে।

(দ্য রিপোর্ট/বিকে/এসবি/সা/জানুয়ারি ১২, ২০১৪)