চলে গেলেন বিচারপতি হাবিবুর রহমান
হঠাৎ করেই চলে গেলেন ভাষাসৈনিক বিচারপতি হাবিবুর রহমান। কাউকে কিছু না বলে, যেন অভিমানে। চিকিৎসা, সেবা বা সুস্থতা কামনার সুযোগ দিলেন না কাউকে।
একটি জীবনে একজন মানুষের দ্বারা যতটুকু দেওয়া সম্ভব বিচারপতি হাবিবুর রহমান তার চেয়ে কম দেননি। ইতিহাস ও আইনের ছাত্র হলেও নিজস্ব বিষয় ছাড়াও সাহিত্য গবেষণা, ব্যাকরণ, বানান রীতি, কোরআন অনুবাদ, ধর্মীয় গবেষণামূলক বই রচনা করেছেন তিনি। নিজে কবিতা লেখার পাশাপাশি চীনা ভাষা থেকে কবিতাও অনুবাদ করেছেন। তার প্রকাশিত পুস্তকের সংখ্যা ৪০-এর মতো।
শিক্ষা জীবনে ইতিহাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সর্বোচ্চ ডিগ্রি নেওয়ার পর অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও সর্বোচ্চ ডিগ্রি নিয়েছেন। তিনি লন্ডনে ব্যারিস্টারিও করেছেন।
কর্মজীবনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস ও আইনের শিক্ষক ছিলেন তিনি। আবার আইন ব্যবসায় যোগদানের পর ঢাকা হাইকোর্টে বিচারিক কাজেও যোগ দিয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত দেশের প্রধান বিচারপতি হিসেবে তিনি অবসরে যান। সেই সুবাদে সাংবিধানিক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শুরুতে ৯৬ সালে হাবিবুর রহমান হন দেশের প্রথম তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান।
প্রধান বিচারপতি হিসেবে তিনি আন্তর্জাতিক বিচার সম্মেলনে একাধিকবার দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেন। তার কর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি বাংলা একাডেমি, একুশে পদকে ভূষিত হন। দক্ষ প্রশাসক হিসেবেও তিনি পুরস্কৃত হয়েছেন। এ ছাড়া ইব্রাহীম মেমোরিয়াল, অতীশ দীপঙ্কর পুরস্কারসহ তিনি আরো অনেক স্বীকৃতি পেয়েছেন।
কীর্তিমান মানুষকে পুরস্কৃত করে পুরস্কারদাতা বা প্রতিষ্ঠানই ধন্য হয়। বিচারপতি হাবিবুর রহমানের ক্ষেত্রে বিষয়টি তেমনই।
একটি জাতির জন্য যারা মধ্যরাতের নক্ষত্র হিসেবে জাতিকে পথ দেখান, হাবিবুর রহমান তেমনই একজন মানুষ।
মানুষ হিসেবে তাকে চলে যেতেই হতো। পরিণত বয়সেই তিনি চলে গেলেন। যতটুকু তিনি দিয়েছেন নিজের থেকেই দিয়েছেন, চেয়ে নিতে হয়নি।
তাঁর মতো একজন মানুষ পেয়ে জাতি ধন্য হয়েছে। একজন বিশ্বাসী মানুষ হিসেবে আমরা তার রূহের মাগফেরাত কামনা করি। কামনা করি তাঁর জীবন ও কর্মের জন্য তিনি যেন মহান আল্লাহর দরবারে পুরস্কৃত হন।