যানজট কোলাহলে চেনা রূপে ঢাকা
রানা হানিফ, দ্য রিপোর্ট : বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের ডাকা অনির্দিষ্টকালের অবরোধ স্থগিত করায় ঢাকা ফিরে পেয়েছে তার চিরচেনা রূপ। সকাল থেকে রাজধানীর সড়কগুলোতে যান চলাচল বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে দেখা দিয়েছে তীব্র যানজট।
সোমবার রাজধানী ঘুরে দেখা গেছে, শুধু যানজট নয়, ফুটপাতে হকারদের হাকডাকে মুখর হয়ে উঠেছে রাজপথ। অবশ্য রবিবার বিরোধী দলের অবরোধ থাকা সত্ত্বেও রাজধানীতে ছিলো একই চিত্র।
নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছিলেন বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট। ৫ জানুয়ারির নির্বাচন প্রতিহত করতে লাগাতার অবরোধ পালন করে আসছিলো তারা। ব্যাপক সহিংসতা ও প্রাণহানীর মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বিঘ্নিত হয়। অনেক আশঙ্কার মধ্যেও নতুন সরকারের শপথ ও দফতর বণ্টন হয়। একই সঙ্গে বিরোধী দলের অবরোধ তুলে নেওয়ায় উদ্বেগ কেটেছে বলে মনে করছেন সাধারণ মানুষ।
সোমবার থেকে বিরোধী দলের অবরোধ স্থগিত হওয়ায় সকাল ৭টা থেকে রাজধানীর বাস স্টপেজগুলোতে দেখা যায় অফিসগামী মানুষের ভীড়। কোথাও কোথাও দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে তারপর তাদের উঠতে হচ্ছে বাসে। রাজধানীর শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানগুলো খোলা থাকায় শিক্ষার্থীদের পরিবহনে ব্যবহৃত ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যাও ছিলো অনেক বেশি। বিশেষ করে রাস্তার পাশে এসব ব্যক্তিগত গাড়ি পার্কিং করায় সৃষ্টি হয় তীব্র যানজটের।
সকাল সাড়ে ৯টায় মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা যায়, তখনও রয়েছে অফিস যাত্রীদের ভীড়। তবে যাত্রীর তুলনায় গণপরিবহন কম থাকায় বাসে দাঁড়িয়ে বা গেটে ঝুলেই যেতে হচ্ছে গন্তব্যে।
সকালে মোহাম্মদপুর থেকে রাজধানীর অভ্যন্তরীণ রুটে ছাড়তে শুরু করে বিআরটিসির বাস। এছাড়া এটিসিএল, তরঙ্গ, মৈত্রী, রাজা সিটি, মালঞ্চ, তরঙ্গ প্লাসের মতো বেসরকারি পরিবহন কোম্পানিগুলোর বাস চলাচল অন্যান্য দিনের তুলনায় ছিলো বেশি।
এটিসিএল বাস কাউন্টারের টিকেটম্যান আনিস দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘অবরোধে আমাদের কোম্পানির বাস অর্ধেকেরও কম চলাচল করেছে। অবরোধ না থাকায় গতকাল থেকে বাসের সংখ্যা বাড়তে থাকে। আজ (সোমবার) দুই একটা বাদে সব বাসই রাস্তায় চলছে।’
রাজধানীর যানজটের পরিস্থিতি নিয়ে জানতে চাইলে মিডওয়ে পরিবহনের চালক মো. ফরিদ মিয়া দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘সকাল ৭টায় আমি খিলগাঁও-তালতলা থেকে বাস ছেড়েছি আর মোহাম্মদপুরে আসছি সাড়ে দশটায়। রাস্তায় অনেক জ্যাম।’
অফিসগামী শাকিল রেজা রনি ও বেগ সজল রহমানের সঙ্গে কথা হয়। তারা জানায়, অবরোধে বাসে আগুনের ভয়ে তারা রিকসায় করে অফিস যেতেন। কিন্তু অবরোধ না থাকায় এখন বাসে চড়তে ভয় নেই তাদের।
এদিকে সকাল থেকেই রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সিগন্যাল পয়েন্টগুলোতে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র যানজটের। মোহাম্মদপুর হতে আসাদগেট পর্যন্ত সৃষ্টি হয় দীর্ঘ জ্যামের। তবে এই রাস্তাটির উভয় পাশে স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের পরিবহনে ব্যবহৃত প্রাইভেট কার পার্কিং করে রাখায় সৃষ্টি হয়েছে এই যানজটের।
এদিকে ধানমন্ডি ২৭ নম্বর থেকে শুরু করে শুক্রাবাদ, ধানমন্ডি ৩২ নম্বর, কলাবাগান, হয়ে সিটি কলেজ পর্যন্ত রয়েছে তীব্র যানজট। স্বাভাবিক গতিতে চলতে পারছে না কোনো যানবাহন। থেমে থেমে আটকে যাচ্ছে পরিবহনগুলো।
অপরদিকে যাত্রাবাড়ি চৌরাস্তাও সকাল থেকেই গাড়ির দখলে চলে যায়। চৌরাস্তা ঘিরে সড়কগুলোতে সৃষ্টি হয় যানজটের। যাত্রাবাড়ি মোড়ে যাত্রীদের উপস্থিতিও ছিলো আগের মতোই। মতিঝিল ও গুলিস্তানে গিয়ে দেখা গেছে সেখানকার ফুটপাতগুলোতে কেনাবেচা চলছে নানা পণ্যের। ভীড় ঠেলে এগোনো মুশকিল রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এ দুটি স্থানে।
বিরোধী দলের অবরোধ প্রত্যাহার ও রাজধানী স্বাভাবিক হওয়ার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক স্থপতি ইকবাল হাবীব দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘গত দুই মাসের হরতাল অবরোধে রাজধানীবাসীর মনে আতঙ্ক-শঙ্কা ছিলো। কিন্তু কাজকর্ম অনেকটায় স্বাভাবিক ছিলো। রাস্তায় গণপরিবহন চলাচলও ছিলো স্বাভাবিক। অবরোধ স্থগিত হওয়াতে এখন প্রাইভেট গাড়ির চলাচল বেড়ে গেছে। আর এতে করে আগের মতোই যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।’
এই নগর পরিকল্পনাবিদ বলেন, ‘আমি অবরোধের পক্ষ নিচ্ছি না। তবে অবরোধের মাধ্যমে এটা প্রমাণিত হলো ঢাকায় প্রাইভেট গাড়ির সংখ্যা কমে গেলে যান চলাচল স্বাভাবিক হবে। যানজট থাকবে না। অনেকে রিকসাকে যানজটের জন্য দায়ি করে। পুরো অবরোধে রিকসায় ছিলো অনেকটা প্রধান বাহন। কিন্তু কম গতির বাহন হলেও মানুষ তার গন্তব্যে পৌঁছাতে পেরেছে স্বাভাবিক দিনের চাইতে অর্ধেক সময়ে।’
(দ্য রিপোর্ট/এইচআর/এমসি/জানুয়ারি ১৩, ২০১৪)