আমিরুল ইসলাম নয়ন, দ্য রিপোর্ট : বীমা খাতে দীর্ঘদিনের বিশৃঙ্খলা নিরসনে নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠা করা হলেও তা আশানুরূপ ফল বয়ে আনতে পারেনি। মূলত নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের মধ্যে শৃঙ্খলার অভাব ও চেয়ারম্যানের স্বেচ্ছাচারিতা এ খাতের অস্থিরতাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) চেয়ারম্যান ও সদস্যদের মূল্যবান সময় কেটেছে পারস্পরিক দ্বন্দ্বে। এরই মধ্যে আগামী এপ্রিলে সব সদস্য ও চেয়ারম্যানের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। ফলে বীমা খাতের কাঙ্ক্ষিত শৃঙ্খলা এখনও অধরাই থেকে যাচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

জানা গেছে, ২৫ জানুয়ারি চেয়ারম্যান এম শেফাক আহমেদের চুক্তির মেয়াদ শেষ হচ্ছে। আর ৩০ জানুয়ারি শেষ হচ্ছে সদস্য নব গোপাল বণিকের মেয়াদ। কিন্তু দীর্ঘ তিন বছর পেরিয়ে গেলেও আইডিআরএর অফিসই সাজানো হয়নি এখনও। দেওয়া হয়নি জনবল নিয়োগ। অস্থায়ী লোকবল দিয়েই সাধারণ ও জীবন বীমা খাতের ৭৩টি প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। এ জন্য আইডিআরএতে একজন চেয়ারম্যান, চারজন সদস্য ও অস্থায়ী ৩৯ জন কর্মকর্তা রয়েছেন।

তিন বছরেও চূড়ান্ত হয়নি জনবল কাঠামো

বীমা শিল্পের শৃঙ্খলা ফেরানো ও পুরনো বীমা আইনকে যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে ২০১০ সালের মার্চ মাসে নতুন বীমা আইন প্রণয়ন করা হয়। এর আলোকে ২০১১ সালের জানুয়ারিতে গঠিত হয় আইডিআরএ। শুরু থেকেই সংস্থাটিতে তীব্র জনবল সঙ্কট রয়েছে। ওই সময় স্বাভাবিক কাজ চালিয়ে নিতে কয়েক দফায় অফিসার, জুনিয়র অফিসার ও এমএলএসএস পদে অস্থায়ীভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু তাদের চাকরি স্থায়ী করা না করা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকায় গত দুই বছরে ১৬ জন অফিসার ও জুনিয়র অফিসার চাকরি ছেড়ে চলে যান। বর্তমানে সংস্থাটিতে চেয়ারম্যান, সদস্য ও এমএলএসএস মিলিয়ে মাত্র ৫৫ জন রয়েছেন। এর মধ্যে কর্মকর্তার সংখ্যা ৩৮ জন।

আইডিআরএ সূত্র জানিয়েছে, দেশে ব্যবসারত বীমা কোম্পানিগুলোর নিয়ন্ত্রণের জন্য, দুই থেকে আড়াইশ’ কর্মকর্তা প্রয়োজন। সঙ্কট দূর করতে ১৭৯ কর্মকর্তা-কর্মচারির তালিকা ও সাংগঠনিক কাঠামো (অর্গানোগ্রাম) চূড়ান্ত করে ২০১১ সালে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠায় আইডিআরএ। পরবর্তী সময়ে অর্থ মন্ত্রণালয় তা যাচাই-বাছাই করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। গত বছরের ২৬ জুন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ৯৪ জন লোকবল সংবলিত অর্গানোগ্রাম অনুমোদন করে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। এরপর অর্থ মন্ত্রণালয় তা চূড়ান্ত করতে আইডিআরএর কাছে পাঠায়। কিন্তু দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও তা অনুমোদন করেনি আইডিআরএ।

আইডিআরএ সূত্র জানিয়েছে, সংশ্লিষ্ট বিভাগকে না জানিয়েই চেয়ারম্যান এম শেফাক আহমেদ অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠান। ওই চিঠিতে তিনি ১৭৯ জনের কথা জানান। এর ফলে চেয়ারম্যানের সঙ্গে সদস্যদের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্য হয়ে উঠে।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে আইডিআরএর এক সদস্য বলেন, চেয়ারম্যান আমাদের না জানিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন। অথচ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদিত জনবল কাঠামো দিয়ে বীমা খাতের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা যেত।

তিনি আরও বলেন, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের বীমা নিয়ন্ত্রক সংস্থা প্রথমাবস্থায় মাত্র ৬৫ জন জনবল নিয়োগ দিয়েছিল।

জানা গেছে, দীর্ঘদিন অপেক্ষার পর অর্গানোগ্রাম পাস হওয়ায় সবার মাঝে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছিল কিন্তু চেয়ারম্যানের আপত্তির কারণে তা ভূলুণ্ঠিত হতে চলেছে। এখন সহসা অর্গানোগ্রাম পাস হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।

অভিযোগ রয়েছে, এম শেফাক আহমেদ অর্থমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠজন হওয়ার সুবাদে সংস্থার অনেক সিদ্ধান্তই এককভাবে নিয়ে আসছেন। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে তিনি আইডিআরএর সদস্য বা বিভিন্ন উপ-কমিটির মতামতকে তেমন প্রাধান্য দেন না।

চেয়ারম্যানের মাথার ওপর মামলার পাহাড়

মামলার পাহাড় নিয়ে ইন্স্যুরেন্স ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড রেগুলেটরি অথরিটির (আইডিআরএ) চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এম শেফাক আহমেদ। তার বিরুদ্ধে ১৬টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। একটি মামলায় ইতোমধ্যে তিনি দণ্ডিত হয়েছেন। এ ছাড়া আরও মামলার আশঙ্কায় রয়েছেন তিনি। এ প্রেক্ষাপটে চুক্তির মেয়াদ আরেক দফা বাড়ানোর জন্য তিনি জোর তদবির চালাচ্ছেন বলে জানা গেছে।

ইতোমধ্যে এম শেফাক আহমেদের নিয়োগের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে রিট হয়েছে। তার নিয়োগ কেন অবৈধ হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি শেষে বিচারপতি নাঈমা হায়দার ও বিচারপতি জাফর আহমেদের দ্বৈত বেঞ্চ ২৫ নভেম্বর এ রুল জারি করেন।

অন্য একটি রিটের (১১২০৬/২০১২) শুনানি শেষে বিচারপতি নাঈমা হায়দার ও বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকীর বেঞ্চ শেফাক আহমেদকে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান পদে অযোগ্য ও চেয়ারম্যান পদ শূন্য ঘোষণা করেন। এ রায়ের বিরুদ্ধে শেফাক আহমেদ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে একটি আপিল করেন, যা বর্তমানে বিচারাধীন।

জানা গেছে, ব্যক্তিগতভাবে আইডিআরএর চেয়ারম্যান এম শেফাক আহমেদের বিরুদ্ধে এ যাবত ১৬টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ ছাড়া স্ত্রী নির্যাতনের অভিযোগে তার স্ত্রী শামীমা ইকবাল ২০০৯ সালে পারিবারিক আদালতে পারিবারিক মোকদ্দমা নং-১২৮৪/২০০৯ দায়ের করেন। বিচারক কানিজ ফাতিমা এ মামলার রায় দেন। রায়ে ২৫ লাখ ৪০ হাজার টাকা বাদীকে পরিশোধের জন্য শেফাক আহমেদকে আদেশ দেয়া হয়। কিন্তু শেফাক আহমেদ আদালতের আদেশ অনুসারে টাকা পরিশোধ না করায় বাদী শামীমা ইকবাল ২০১২ সালের ৬ ফেরুয়ারি পারিবারিক ডিক্রিজারি মোকদ্দমা নং ০৫/২০১২ দাখিল করেন। সে পরিপ্রেক্ষিতে আদালত গত বছরের ২৫ মার্চ শেফাক আহমেদকে টাকা পরিশোধের জন্য আদেশ দেন এবং ৩ মাসের কারাদণ্ডসহ গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। একই সঙ্গে শেফাক আহমেদকে গ্রেফতার করে কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠাতে গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন। সে পরিপ্রেক্ষিতে শেফাক আহমেদ উচ্চ আদালতে সিভিল রিভিশন দায়ের করলে আদালত তিন মাসের জন্য রায় ও ডিক্রি স্থগিত করেন এবং অর্থদণ্ডের ৫০ শতাংশ টাকা তিন মাসের মধ্যে পরিশোধের নির্দেশ দেন।

অন্যদিকে, ঢাকার পঞ্চম অতিরিক্ত সহকারী জজ ও পারিবারিক আদালতের বিচারক কামরুল হাসান ৮ সেপ্টেম্বর শেফাক আহমেদকে উচ্চ আদালতের পরবর্তী আদেশ দাখিলের নির্দেশ দেন। উচ্চ আদালতের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে শেফাক আহমেদ দুই কিস্তিতে সর্বমোট ৬ লাখ ৩৫ হাজার ৩৫০ টাকা আদালতে জমা দেন।

এ ছাড়া আইডিআরএ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আরও ১৫টি মামলা করেছেন বীমা সংশ্লিষ্টরা। এর মধ্যে ৪০৪/৪২০/৫০৬ ধারা অনুসারে চট্টগ্রামে ২০১২ সালের ১১ মার্চ বায়জিদ বোস্তামী থানায় মামলা হয়, যার নম্বর ১৪১/১২। বরিশালে ৪০৬/৪২০ ধারায় মুলাদী থানায় মামলা হয়, যার নম্বর ২৮/২০১২। ৪২০/৪০৬ ধারায় ঢাকার যাত্রাবাড়ী থানায় মামলা হয়, যার নম্বর ১১১/২০১২। এ ছাড়াও গুলশান থানায় ২০১২ সালের ১২ মার্চ শেফাক আহমেদের বিরুদ্ধে মামলা, যার নম্বর ৪১৫; নওগাঁর পত্নীতলায় মামলা, যার নম্বর ৮; ভোলায় একটি মামলা, যার নম্বর ১০, জিআর কেস নং ৬৭/২০১২; খুলনায় একটি মামলা হয়, যার নম্বর ১০৫/১২; মতিঝিল থানায় একটি মামলা হয়, যার নম্বর ৫৭৫/১২। এ ছাড়া ঝালকাঠি পুলিশ স্টেশনে মামলা নম্বর ১২, বগুড়ার শাহজাহানপুরে মামলা নম্বর ৯, বরিশাল সদর থানায় মামলা নম্বর ১৩৫/১২, পটুয়াখালীতে দুটি- পুলিশ স্টেশন কেস নম্বর ১৬ ও ১৯ এবং ফরিদপুরের কোতোয়ালি থানায় মামলা নম্বর ১৫৩/১২। এর মধ্যে গুলশান থানায় এম শেফাক আহমেদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি রয়েছে।

এ বিষয়ে এম শেফাক আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তার কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

অবৈধভাবে সিনিয়র কনসালট্যান্ট নিয়োগ

বিধিবদ্ধ সংস্থা ও রাষ্ট্রীয়কৃত প্রতিষ্ঠানে পেশাজীবী কিংবা বিশেষজ্ঞ নন এমন ব্যক্তিকে পরামর্শক বা উপদেষ্টা নিয়োগ দেওয়া অবৈধ। কিন্তু এম শেফাক আহমেদ অবৈধভাবে একেএম ইফতেখার আহমদকে আইডিআরএর সিনিয়র কনসালট্যান্ট পদে মাসিক ১ লাখ টাকা বেতনে নিয়োগ দেন। বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ আইন-২০১০ অনুসারে পরামর্শক নিয়োগের বিধান থাকলেও ‘সিনিয়র কনসালট্যান্ট’ নিয়োগের বিধান নেই। কর্তৃপক্ষের প্রস্তাবিত পরামর্শক বা উপদেষ্টা নিয়োগ প্রবিধানমালা-২০১৩ অনুসারে পরামর্শক বা উপদেষ্টার বয়সসীমা ৬৭ বছর রাখা হয়েছে। কিন্তু একেএম ইফতেখার আহমদের বয়স ৬৭ বছর পার হয়ে গেছে। এ ছাড়া একেএম ইফতেখার আহমদের নিয়োগের বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞা ছিল।

আইডিআরএ সূত্রে জানা গেছে, এক বছর আগে নির্বাহী পরিচালক ও পরিচালক পদে নিয়োগের জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। বিজ্ঞপ্তিটি অর্থ মন্ত্রণালয়ের নজরে আসে। পরবর্তী সময়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে আইডিআরএকে অর্গানোগ্রাম চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত নিয়োগ থেকে বিরত থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়। অর্থাৎ সিনিয়র কনসালট্যান্ট নিয়োগের বৈধতার বিষয়ে এক সদস্য দৃষ্টি আকর্ষণ করলেও চেয়ারম্যান তাতে সাড়া দেননি।

উপরন্তু বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের নিয়মিত কর্মকর্তা না হয়েও ইফতেখার আহমদকে সেন্ট্রাল রেটিং কমিটির (সিআরসি) সাচিবিক দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এতে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের কার্যালয়সহ সরকারি বিভিন্ন মহলে চরম ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। তার নিয়োগ নিয়ে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের সদস্যদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

জানা গেছে, ৫ জুন অনুষ্ঠিত সভায় আইডিআরএর চেয়ারম্যান পরামর্শক নিয়োগের ইচ্ছা পোষণ করেন। যাকে সিআরসি সচিবালয়ের সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালনের জন্য নিয়োজিত করা হবে। এরপর ১ জুলাই ৫৯তম সভায় একেএম ইফতেখার আহমদকে সিনিয়র কনসালট্যান্ট হিসেবে দায়িত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

এখানে উল্লেখ্য, সিআরসি গঠনের সময় কোনো ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা না থাকায় সিআরসির উপ-সচিব রাজিয়া বেগমকে সাময়িকভাবে সচিবের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে আইডিআরএর চেয়ারম্যান এম শেফাক আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।

এ বিষয়ে একেএম ইফতেখার আহমদ বলেন, কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া যাবে। সেটি সিনিয়র কনসালট্যান্ট বা কনসালট্যান্ট হতে পারে। বয়সসীমা সদস্যদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।

অনিয়মের অভিযোগে আইডিআরএ চেয়ারম্যানকে শোকজ

বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) চেয়ারম্যান এম শেফাক আহমেদকে অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। ৩১ ডিসেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের বীমা শাখার সিনিয়র সহকারী সচিব মো. ফিরোজ উদ্দিন খলিফা স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ নোটিশ দেওয়া হয়। এতে অতি জরুরিভিত্তিতে আনীত অভিযোগগুলোর বিষয়ে মন্ত্রণালয়কে ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য চেয়ারম্যানকে অনুরোধ করা হয়। এ সংক্রান্ত একটি চিঠি এ প্রতিবেদকের কাছে রয়েছে।

সূত্র জানায়, এম শেফাক আহমেদের বিরুদ্ধে আইডিআরএর সদস্য মো. ফজলুল করিম ১৯ ডিসেম্বর অনিয়ম আর স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ দাখিল করলে মন্ত্রণালয় থেকে এ চিঠি ইস্যু করা হয়। চিঠিতে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের মধ্যে রয়েছে- কর্তৃপক্ষের ব্যয় নির্বাহের পর উদ্ধৃত অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা না দেওয়া, সভার কার্যবিবরণী সদস্যদের সম্মতি ছাড়া পরিবর্তন করে ভিত্তিহীন তথ্য সংযোজন-বিয়োজন করা, বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ আইন-২০১০ এর ১৩ নম্বর ধারা অনুযায়ী প্রতিমাসে কমপক্ষে একবার সভায় মিলিত হওয়ার বাধ্যবাধকতা আমলে না নেওয়া।

এ ছাড়া ইতঃপূর্বে আইডিআরএ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে নিয়ম বহির্ভূতভাবে বীমা কোম্পানির এমডি নিয়োগ, একাধিক গাড়ি ব্যবহার, বীমা কোম্পানির প্রধান মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ ও অপসারণসংক্রান্ত প্রবিধানে এমডির শিক্ষাগত যোগ্যতার বিষয়টি কাউকে না জানিয়ে গোপনে পরিবর্তন করা।

এ ব্যাপারে আইডিআরএ চেয়ারম্যানের বক্তব্য জানতে তার কার্যালয়ে গেলেও তিনি দেখা করেননি। পরে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তবে আইডিআরএ সদস্য মো. ফজলুল করিম মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানোর বিষয়টি স্বীকার করেছেন।

বীমা কোম্পানির এমডি নিয়োগে জটিলতা

ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগে জটিলতায় পড়েছে বীমা কোম্পানিগুলো। আর এক্ষেত্রে আইডিআরএর গড়িমসি রয়েছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

জানা গেছে, বীমা কোম্পানির নিয়োগ ও অপসারণসংক্রান্ত প্রবিধানের চূড়ান্ত খসড়ায় এমডি নিয়োগের ক্ষেত্রে ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণ করা হয়েছে দুই বছর মেয়াদী স্নাতক বা তার সমমান। আর বিষয়টি চূড়ান্ত করেছিল বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশন (বিআইএ), আইডিআরএ এবং বীমা শিল্প সংশ্লিষ্টরা।

কিন্তু ৩ জানুয়ারি গেজেট আকারে প্রকাশিত বীমা কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ ও অপসারণসংক্রান্ত প্রবিধানমালায় তা বদলে যায়। প্রকাশিত গেজেটে বলা হয়, বীমা কোম্পানির এমডি হতে হলে তাকে কমপক্ষে ৩ বছরের স্নাতক ও ১ বছরের স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অথবা ৪ বছরের স্নাতকসহ (সম্মান) বীমা খাতে ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। এমন শর্তযুক্ত হওয়ার পর তা পরিবর্তনের দাবি তোলেন বীমা শিল্পের মালিকদের সংগঠন বিআইএ। এরই মধ্যে ১১ মাস পার হলেও তা সংশোধন না হওয়ায় এমডি নিয়োগের ক্ষেত্রে বড় ধরনের সমস্যায় পড়েছে বীমা কোম্পানিগুলো।

এ বিষয়ে আইডিআরএ সদস্য মো. ফজলুল করিম বলেন, আগেও এমডিদের শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক বা তার সমমান করে প্রবিধান চূড়ান্ত করা হয়েছিল। পরে চেয়ারম্যানের দফতরে গিয়ে তা বদল হয়ে প্রবিধানটির গেজেট প্রকাশিত হয়। প্রকাশিত গেজেটে এমডির শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে জটিলতা দেখা দিলেও পুনরায় এটি সংশোধন করে চেয়ারম্যানের কাছে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু চেয়ারম্যানের দফতর থেকে সেটা পাঠানো হচ্ছে না। ফলে বীমা কোম্পানিগুলোতে এমডি নিয়োগের ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে।

(দ্য রিপোর্ট/ডব্লিউএন/এসবি/শাহ/সা/জানুয়ারি ১৩, ২০১৪)