সোহেল রহমান, দ্য রিপোর্ট : রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে (বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত) সুদ মওকুফের প্রবণতা বেড়েই চলেছে। নানা কারণে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর আর্থিক ভিত্তি দুর্বল ও প্রায় প্রতিটি ব্যাংকেরই মূলধন এবং প্রভিশন ঘাটতি রয়েছে। এর ওপর সুদ মওকুফের কারণে ব্যাংকগুলোর আয় কমে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, মহাজোট সরকারের সাড়ে চার বছরে (জানুয়ারি ২০০৯-জুন ২০১৩) রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলো ৪ হাজার ৮৩৫ কোটি টাকা সুদ মওকুফ করেছে।

বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ও পরবর্তীকালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০১ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলো প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকার ঋণ ও সুদ মওকুফ করেছিল।

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, মহাজোট সরকারের সাড়ে চার বছরে জনতা ব্যাংক ১ হাজার ৯০৬ কোটি ৫৫ লাখ টাকা, সোনালী ব্যাংক ১ হাজার ৭৬১ কোটি ২৩ লাখ টাকা, অগ্রণী ব্যাংক ৫৬৫ কোটি ২০ লাখ টাকা, রূপালী ব্যাংক ৩৩০ কোটি ৫৮ লাখ টাকা, বিডিবিএল ব্যাংক ১৮৩ কোটি ৮৯ লাখ টাকা, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ৫৩ কোটি ২৫ লাখ টাকা, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক ১৯ কোটি ৬৪ লাখ টাকা, বেসিক ব্যাংক ১৪ কোটি ৭৪ লাখ টাকা সুদ মওকুফ করেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ-এর মতে, ‘সুদ মওকুফ করা ব্যাংকিং খাতের জন্য একটি খারাপ দৃষ্টান্ত। এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া উচিত নয়। কারণ এতে করে যারা নিয়মিত ঋণ পরিশোধ করছেন পরবর্তীতে তারাও আর ঋণ পরিশোধে উৎসাহিত হবেন না। খেলাপিতে পরিণত হলে সুদ মওকুফের সুবিধা পাওয়ার আশায় তারা ঋণ পরিশোধ করবেন না।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর ইব্রাহীম খালেদও ‘সুদ মওকুফের সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, ‘এটা জনগণের অর্থ। আর সুদ মওকুফকৃত অর্থ সরকার ব্যাংকগুলোকে ফেরত দেয় না।’

বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, সাধারণত দুটি ক্ষেত্রে সুদ মওকুফ করা হয়ে থাকে। একটি হচ্ছে- দীর্ঘদিন ধরে যে সব ঋণ পরিশোধ করা হয় না, এককালীন পরিশোধের শর্তে ওই সব ঋণের কিছু সুদ মওকুফ করা হয়। তবে এ ক্ষেত্রে ব্যাংক যাতে লোকসানের সম্মুখীন না হয়, অর্থাৎ মূল বিনিয়োগ ও ব্যয় যাতে উঠে আসে সে দিকে খেয়াল রাখা হয়।

অন্যটি হচ্ছে- ঋণ পুনঃতফসিলের সময় কিছু সুদ মওকুফ করা হয়। এর ফলে ব্যাংকের দীর্ঘদিনের খেলাপি ঋণ আদায় হয়।

সূত্রমতে, তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রচলিত এই বিধির অপব্যবহার হয়ে থাকে। প্রকৃতপক্ষে, যাদের সুদ মওকুফ হওয়ার কথা তাদের অধিকাংশই এই সুবিধা পায় না। অন্যদিকে, রাজনৈতিক বিবেচনায় কিংবা প্রভাবশালীরা ব্যাংকের বোর্ডকে চাপ দিয়ে সুদ মওকুফের সুবিধা নিয়ে থাকে। এই প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের কেউ কেউ লাভবান হয়ে থাকেন বলে ব্যাংক পাড়ায় অভিযোগ রয়েছে।

(দ্য রিপোর্ট/এসআর/এসবি/সা/জানুয়ারি ১২, ২০১৪)