নতুন করে নিরপেক্ষ নির্বাচনের চাপ
অভিনন্দন বার্তা নেই বিদেশি বন্ধুদের
দ্য রিপোর্ট কূটনৈতিক প্রতিবেদক : দশম সংসদের সরকার গঠনের পর সোমবার মন্ত্রিসভার সদস্যরা অফিস করেছেন। কিন্তু প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত ছাড়া অন্য কোনো দেশ এখনও নতুন সরকারকে স্বাগত জানায়নি। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বিদেশি বন্ধুদের কাছ থেকে এখনও পর্যন্ত উল্লেখ করার মতো কোনো অভিনন্দন বার্তা পাননি।
কূটনৈতিক শিষ্টাচার অনুযায়ী, ভোটের ফল ঘোষণা এবং মন্ত্রিসভা শপথ নেওয়ার পর পরই নতুন সরকারকে স্বাগত জানিয়ে বিদেশি বন্ধুরা বিভিন্ন মাধ্যমে অভিনন্দন বার্তা পাঠিয়ে থাকেন। নবম ও অষ্টমসহ এর আগের সবগুলো সরকার গঠনের পরই দেখা গেছে, বিদেশি বন্ধুরা নতুন সরকারকে স্বাগত জানিয়ে টেলিফোন, চিঠিসহ বিভিন্ন মাধ্যমে অভিনন্দন জানিয়েছে।
অন্যদিকে, সদ্য সমাপ্ত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও চলমান সহিংসতা নিয়ে এবার হতাশা প্রকাশ করেছে বিদেশি বন্ধু-প্রতিম দেশগুলো এবং উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সহায়তা দেওয়া বিভিন্ন জোট। হাতাশার পাশাপাশি বিদেশি বন্ধুরা নতুন করে স্বচ্ছ, নিরেপক্ষ এবং সবগুলো রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে বস্তুনিষ্ট নির্বাচনের আহ্বান করেছে। এ জন্য বিদেশিরা ৫ জানুয়ারির ভোটের পর পৃথক বিবৃতিতে রাজনৈতিক দলগুলোকে জনগণের প্রত্যাশার প্রতি সাড়া দিয়ে অংশগ্রহণমূলক রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় ফেরার এবং অর্থবহ সংলাপ শুরুর তাগিদ দিয়েছে।
বিদেশি বন্ধুদের অভিনন্দন বার্তা প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম সোমবার বলেন, ‘শপথের দিন বিদেশি কূটনীতিকরা উপস্থিত ছিলেন। তাদের উপস্থিতিই নতুন সরকারকে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়টি প্রমাণ করে।’
শপথ অনুষ্ঠান একটি রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান। এই অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া মানেই এই নয়, বিদেশিরা নতুন সরকারকে স্বীকৃতি দিয়েছে। বিষয়টি মনে করিয়ে দিলে প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘সবাই অভিনন্দন জানাবে এমন কোনো রীতি নেই।’
প্রতিমন্ত্রী জানান, তার সঙ্গে বিদেশি বন্ধুদের আগে থেকেই যোগাযোগ রয়েছে। বিদেশিরা বিভিন্ন সময়ে প্রতিমন্ত্রীর বাসায় আতিথেয়তা নিয়েছেন। বিদেশিরা অনানুষ্ঠানিকভাবে প্রতিমন্ত্রীকে জানিয়েছেন, গণতন্ত্রের স্বার্থে বিদেশিদের সকল সহায়তা অব্যাহত থাকবে।
এদিকে, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে সোমবার ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মজিনা বলেন, ‘এ নির্বাচনে আমরা হতাশ হয়েছি। আলোচনার মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে সমাধানের পথ বের করতে হবে। সরকারকেই এর পরিবেশ তৈরি করতে হবে।’
নতুন মন্ত্রিসভার শপথ অনুষ্ঠান শেষে রবিবার মার্কিন রাষ্ট্রদূত জানান, ৫ জানুয়ারির ভোটে ১৫৩ আসনে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল না। বাকি আসনগুলোতেও উল্লেখ করার মতো কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল না। এতে জনমতের সঠিক প্রতিফলন ঘটেনি।
মার্কিন রাষ্ট্রদূতের কাছে জানতে চাওয়া হয়, শপথ অনুষ্ঠানে তার উপস্থিতি নির্বাচনকে স্বীকার করে কিনা? জবাবে তিনি জানান, এটা নির্বাচন বা সরকারকে স্বীকার করার বিষয় নয়। আমরা বাংলাদেশের জনগণকে স্বীকার করি।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় স্পষ্ট করে বলেছে, তারা এই নির্বাচনের বৈধতা দেখছে না। এ জন্য তারা জয়ী দল ও দলের নেতাকে অভিন্দন জানানোর প্রয়োজন মনে করছে না। বিদেশিরা পরিষ্কারভাবে বলেছে, আলোচনার মাধ্যমে নতুন একটি নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কমনওয়েলথের মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোও তাদের অবস্থান আগেই জানিয়ে দিয়েছে।’
উল্লেখ্য, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও চলমান সহিংসতা নিয়ে জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কমনওয়েলথ, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরব, যুক্তরাজ্য, চীন হতাশা প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছে। সকলেই নতুন করে নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে শিগগিরই সংলাপ শুরুর আহ্বান জানিয়েছে।
ভোটের পর এক বিবৃতিতে ফ্রান্সের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জানান, সহিংস এবং কম ভোটার উপস্থিতির নির্বাচনের পর বাংলাদেশের পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে দেশটি।
জার্মান সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, সকলের স্বার্থে, মতপার্থক্য ভুলে বাংলাদেশে একটি শান্তিপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকার ও বিরোধী দলগুলোর দায়িত্বশীল ভূমিকা দেখতে চায় দেশটি। জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে হতাশা প্রকাশ করে বিবৃতিতে নির্বাচনের আগে-পরে অনেক মানুষ হতাহত হওয়ার ঘটনায় নিন্দা জানানো হয়।
ঢাকায় নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত এর মতে, দশম সংসদ নির্বাচনে প্রধান বিরোধী দলসহ বেশির ভাগ দল অংশ নেয়নি এবং অধিকাংশ ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি। এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সংঘটিত সহিংসতা গণতন্ত্রের পাশাপাশি বাংলাদেশের অর্থনীতিকে যেভাবে ধ্বংস করেছে, তাতে চীন উদ্বিগ্ন।
(দ্য রিপোর্ট/জেআইএল/এসবি/এনআই/জানুয়ারি ১৩, ২০১৪)