হাসিব বিন শহিদ, দ্য রিপোর্ট : ইন্টারনেট প্রতারণার মাধ্যমে গ্রাহকদের কোটি টাকা আত্মসাৎ ও তা পাচারের অভিযোগে মেসার্স স্কাইল্যান্সার লিমিটেডের চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট ৫ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করবে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

সম্প্রতি কমিশনের নিয়মিত বৈঠকে এ মামলার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। শিগগির মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২)(৩) ধারায় মামলাটি দায়ের করা হবে বলে দুদক সূত্রে জানা গেছে।

অভিযুক্তরা হলেন- মেসার্স স্কাইল্যান্সার লিমিটেডের চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. সাইফুল ইসলাম, তিন পরিচালক মো. খোরশেদ আলম, মো. মইনউদ্দিন ও সৈয়দ মো. এনামুল হক।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দুদকের উপ-পরিচালক মো. নূর হোসেন খান দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘স্কাইল্যান্সারের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কমিশন মামলার অনুমতি দিলেই মামলা দায়ের করা হবে। এখনও পর্যন্ত অনুমোদনের কপি হাতে পাইনি। অনুমোদনের কপি পেলেই মামলাটি করা হবে।’

দুদক সূত্র জানায়, মেসার্স স্কাইল্যান্সার লিমিটেড ২০১১ সালের ১৪ ডিসেম্বর রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানি অ্যান্ড ফার্মস এ প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি হিসেবে নিবন্ধিত হয়। এ প্রতিষ্ঠানের আয়ের পদ্ধতি ছিল ‘ক্লিক করলেই পরিশোধ’। অর্থাৎ প্রতিদিন প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে দেওয়া ১০০টি বিজ্ঞাপন ক্লিক করে ৭৫ টাকা আয় করা যাবে। এ জন্য সাত হাজার ৫০০ টাকা দিয়ে একজন গ্রাহককে হিসাব খুলতে হবে। এভাবে অভিযুক্তরা প্রতারণার মাধ্যমে বিভিন্ন গ্রাহকদের অর্থ আত্মসাৎ করেন।

সূত্র জানায়, অভিযুক্তরা আত্মসাতের অর্থ বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করে নিজেদের নামে সঞ্চিত রেখেছেন। ব্যাংক এশিয়া লিমিটেড প্রগতি স্মারণী শাখায় প্রতিষ্ঠানটির নামে চলতি হিসাব নং-০৩৯৩৩০০০৩৫৯ প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান মো. খলিলুর রহমান ও এমডি সাইফুল ইসলামের যৌথ স্বাক্ষরে পরিচালিত। প্রতিষ্ঠানটির জমা অর্থের অধিকাংশই নগদে সম্পন্ন করা হয়েছে। ওই হিসাবটির লেনদেন স্বাভাবিক ব্যবসায়ীক লেনদেনের নিয়ামাচার বহির্ভূত। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানের হিসাব এবং প্রতিষ্ঠানের পরিচালকদের হিসাব থেকে বিভিন্ন সময় বড় অঙ্কের অর্থ উত্তোলন করা হয়েছে।

সূত্র আরও জানায়, বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক ওই প্রতিষ্ঠানের ও সংশ্লিষ্টদের ব্যাংক হিসাব বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে ওই নির্দেশের সময়সীমা উত্তীর্ণ হওয়ায় অভিযুক্তরা তাদের ব্যাংক হিসাব থেকে অর্থ উত্তোলন করে বিদেশে চলে যেতে পারেন মর্মে অভিযোগটি সুষ্ঠুভাবে অনুসন্ধানের স্বার্থে আদালত সকল ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করে রেখেছে। অভিযুক্তদের অবরুদ্ধ করা ব্যাংক হিসাবে সর্বমোট এক কোটি তিন লাখ ১৮ হাজার ৮৮৫ টাকা স্থিতি রয়েছে। অভিযুক্তরা সকলেই কলেজ/বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। অথবা পড়ালেখার পাশাপাশি প্রতারণামূলক এ অবৈধ ব্যবসা পরিচালনা করতেন। বর্তমানে তারা সকলেই পলাতক রয়েছেন।

প্রসঙ্গত, ২০১২ সালের ১২ জুন জনৈক রকিবুল হাসান বাদি হয়ে ওই পাঁচ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে রাজধানীর কলাবাগান থানায় মামলা (মামলা নং-১২) দায়ের করেন। পরবর্তী সময়ে ২০১২ সালের ৩০ নভেম্বর কলাবাগান থানা থেকে তদন্ত করে প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান ও এমডি মো. সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট (চার্জশিট নং-১৪৪) দাখিল করে। বিষয়টি মানি লন্ডারিং আইনের আওতায় হওয়ায় পুনরায় অনুসন্ধান করে দুদক।

(দ্য রিপোর্ট/এইচবিএস/এসবি/আরকে/জানুয়ারি ১৩, ২০১৪)