যশোর সংবাদদাতা : থানা থেকে না পারলেও আদম বাহিনীর প্রধান আদম আলীকে আদালত থেকে ছাড়িয়ে নিলেন যশোর-৫ (মণিরামপুর) আসনের সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী খান টিপু সুলতান। সোমবার সকাল থেকেই আদালত অঙ্গনে অবস্থান করছিলেন যশোর-৫ আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী খান টিপু সুলতান।

সোমবার আদমকে যশোরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমিরুল ইসলামের আদালতে হাজির করে মণিরামপুর থানা পুলিশ। মণিরামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর রেজাউল ইসলাম জানান, আদম বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে দায়ের করা দুটি মামলায় জামিনে ছিল না। ওই দুটি মামলার আসামি হিসেবে তাকে আদালতে হাজির করা হয়।

আদালত সূত্র জানায়, আদমের আইনজীবী দাবি করেন, তার আসামি অসুস্থ। সে কারণে তাকে জামিনে মুক্তি দেওয়া প্রয়োজন। পরে আদালত পাঁচ হাজার টাকার মুচলেকায় তাকে সাত দিনের অন্তর্বর্তীকালীন জামিনে মুক্তি দেন।

যশোর জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সিনিয়র আইনজীবী দেবাশীষ দাস বলেন, বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের মামলার নিষ্পত্তি হয় বিশেষ আদালতে। জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটরা এই ধরনের মামলার আসামিদের জামিন দেন না।

তারা জামিনের আবেদন বাতিল করে আসামিকে জেলহাজতে পাঠান। পরে আসামিপক্ষ জজ আদালতের শরণাপন্ন হন। অ্যাডভোকেট দেবাশীষ বলেন, টিপু সুলতান সাহেব তদবির করে আদমের জামিন নিশ্চিত করেছেন বলে মনে হয়।

কোর্ট ইন্সপেক্টর ছয়রুদ্দিন ও আদালতের কর্মচারীরা বলছেন, জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এই ধরনের মামলার কোনো আসামি কখনও জামিন পেয়েছেন বলে তারা দেখেননি।

যশোরের পুলিশ সুপার জয়দেব কুমার ভদ্র বলেন, আদালতের ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করা ঠিক হবে না।
কোতোয়ালি থানার ওসি এমদাদুল হক শেখ আদমের জামিন হয়েছে শুনে বিস্ময় প্রকাশ করেন এবং বলেন, আদমের বিরুদ্ধে হত্যা, অগ্নিসংযোগ, চাঁদাবাজি, বিস্ফোরকসহ বিভিন্ন অভিযোগে মণিরামপুর থানায় ১০ টি মামলা রয়েছে।

রবিবার বেলা ১১টার দিকে মণিরামপুর শহরের পানবাজার এলাকা থেকে আদম আলীকে গ্রেফতার করে যৌথবাহিনী। আদম মণিরামপুর পৌর যুবলীগের আহ্বায়ক। তার বিরুদ্ধে হত্যা, সন্ত্রাস, বোমাবাজি, অস্ত্রবাজি, চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগ ও মামলা রয়েছে।

আদমকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে রবিবার দুপুরে আওয়ামী লীগ দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য এবং দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ওই আসনে নৌকার প্রার্থী অ্যাডভোকেট খান টিপু সুলতান দলবল নিয়ে থানা ঘেরাও করেন। সংসদ সদস্য থানা-অভ্যন্তরে চেয়ার নিয়ে বসে থাকেন আর তার অনুসারীরা থানার গেটের বাইরে আদমের মুক্তির দাবিতে স্লোগান দিতে থাকে। আদমকে না ছাড়া পর্যন্ত তারা থানা চত্বরে অবস্থান ধর্মঘট চালিয়ে যাবেন বলে খান টিপু সুলতান ঘোষণা দিলেও রাত ১১টার দিকে পুলিশি অ্যাকশনের আশঙ্কায় তারা থানা চত্বর ত্যাগ করেন।

এ ব্যাপারে খান টিপু সুলতান বলেন, আদম নিরীহ রাজনৈতিক কর্মী ও জনপ্রতিনিধি। যশোরের পুলিশ সুপার জয়দেব কুমার ভদ্র ১৬ জানুয়ারি স্থগিত কেন্দ্রগুলোতে তার প্রতিদ্বন্দ্বী স্বপন ভট্টাচার্য্যকে সুবিধা পাইয়ে দিতে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছেন।

পুলিশ সুপার জয়দেব ভদ্র বলেন, তার কাছে সব সন্ত্রাসীই সমান। যাদের বিরুদ্ধে মামলা আছে, সন্ত্রাসের অভিযোগ আছে, তাদের সবাইকে গ্রেফতারে অভিযান চলছে। ইতোমধ্যে মণিরামপুর উপজেলা বিএনপি সভাপতি পৌরসভার মেয়রসহ বিএনপি-জামায়াতের তিন শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। জামায়াতের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত এলাকাগুলোতে এখন শান্তিময় পরিবেশ বিরাজ করছে।

পুলিশ সুপার আরো বলেন, ১৬ জানুয়ারি স্থগিত কেন্দ্রগুলোতে যাতে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটগ্রহণ করা যায়, তার জন্য যৌথবাহিনী সব পদক্ষেপ নিচ্ছে। চিহ্নিত সন্ত্রাসী, মামলার আসামিদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। ভোট শান্তিপূর্ণ করতে আদমের মতো সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার জরুরি।

(দ্য রিপোর্ট/জেএম/এপি/জানুয়ারি ১৩, ২০১৪)