ওয়াহিদ সুজন, দ্য রিপোর্ট : জগতে এমন কোনো কথকের সন্ধান কি মেলে- যিনি সকল কাহিনী জানেন। এই মনুষ্য জগতের কেউ। জগতকে আমরা যে প্রশস্তির চোখে দেখি, তা হয়তো সামান্যকরণের বলয়। ভাল-মন্দ, ভেদ-অভেদ, তুমি-আমি, আপন-পর। এই কথককে আপনি জিজ্ঞেস করলেন এগুলোর মানে কী? (ধরে নিলাম তিনি সামান্যকরণের মানুষ নন) না, বিষয়টাকে কল্পনা বলে উড়িয়ে দেয়ার কোন অবকাশ নেই। জগৎ সংসারের যে বিচার, রহস্য যার কাছে এই কথকের সন্ধান বাহুল্য নয়, প্রশান্তি বটে। এই ঘটনা তেমন মনের জন্য প্রযোজ্য নয়, যিনি একে ব্যাখ্যা করতে পারেন না। আর যিনি পারেন অথবা যার মনে প্রশ্নটা জেগেছে?

মানুষ আস্থা রাখে। আস্থা রাখা কোনো ঘটনা নয় বরং ঘটনার ভেতরকার বস্তু। কোন বস্তু কোনো উপলব্ধির ভেতর দিয়ে ঢুকে পড়ে তা রহস্য। একজন মানুষ অনেক দূর পর্যন্ত গেল– তারপর মনে হলো সবকিছু অর্থহীন, ফিরে এলো, আবার যাত্রা শুরু করলো, আবার ফিরে এলো কারণ অর্থহীনতা। সমূহ যা অর্থহীনতা তার অর্থবোধকতাকে আয়ত্ত করার বিবর্ণ (নিরস নয়) উপলব্ধি মানুষকে ঠেলে দেয় সাধনার পথে। সত্য সাধনা মানুষকে নির্মোহ করে কিন্তু নিরাবেগ তো করে না!

বিধাতার গুণ আছে কি নেই তা নিয়ে বিতর্ক বড় গোলমেলে। এর সহজ সমাধান যদি আছে হয়, তবে একটা গুণ ধরে লাখ প্রতিমূর্তি তৈরি করা যায়। যা কথকের বলয়ের মধ্যে ঢুকে পড়ে অভেদের নাশ করল। কারণ যাকে আমি বলি ভালো, তাকে তুমি বললে খারাপ, যাকে আমি বললাম সুবুদ্ধি, তাকে তুমি বললে কুবুদ্ধি। এ যদি অনাচার হয়, তবে মানুষে মানুষে ভেদের যে সন্ধান মেলে– তার পেছনে তাকিয়ে দেখি– দেবতার ভেদ। অথচ একখান দুনিয়া, একখান দেহ, একখান আত্মা। যদি হাজার প্রশ্নের উত্তরে হাজার কথকের সন্ধান মেলে তবে হাজারজন সর্বশক্তিমান। এই দশায় সে মনের কি হবে, যে মনে ভাবে অন্য কোনো ঘটনা আছে। এক কথককে চাই যিনি সব প্রশ্নের উত্তর দেন।

সময়ের এমনই ফাঁদ। সময় মানুষকে বোধের তূরীয় স্থানে নিয়ে যায়। যে সাধনা করে সে সময়কে ধরতে পারে, আর যে করে না (আল্লাহ তার প্রতি করুণা কর)। মুহাম্মদ (সা.) যিনি সাধনা করে জগতকে চিনলেন, চিনালেন আল্লাহকে, চিনালেন ভেদ-বুদ্ধিকে এবং ভাল-মন্দ। নিছক সদর্থক-নঞর্থক কোন দ্বন্দ্বের স্থানে নয়। দ্বন্দ্ব সব সময় চ্যালেঞ্জ জানায়। চ্যালেঞ্জ আনে যুদ্ধ-বিগ্রহ, নানা নাশ। এই কেন্দ্রীভূত নির্লজ্জতা, যা জনপ্রিয় হয়ে উঠে নানা গুণের প্রকাশ ঘটায় নানা প্রতিমূর্তিতে। অথচ সবকিছু ভগ্নাংশ। কিন্তু চিন্তা কর নিরাকার, অনন্তের কি কোন ভঙ্গুরতা সম্ভব। আমরা ক্ষমা প্রার্থনা করি অজ্ঞতার জন্য ও ভ্রম চিন্তার জন্য।

আল্লাহ আছেন, আছেন জগতব্যাপী। এই বিশ্ব চরাচরে যা কিছু, সবেতে তিনি। মুহাম্মদ (সা.) যিনি তার রহমতে উদ্ভাসিত দ্বার। যেখানে মিশেছে সকল বাদ-বিবাদ ও অতীত-বর্তমানের দ্বন্দ্ব। এখানে বেঁচে থাকে সে বিন্দু যা সকল বিন্দুর প্রতিবিম্ব। যেখানে কোন চ্যালেঞ্জ নেই। বরং এই চ্যালেঞ্জ হয়ে যাক তুমি কতটা ভালবাসতে পারো। যে তুমি নিজেরে পাপী বলে অবিরত আরও পাপে নিজেকে ঢেকে রক্ষা পেতে চাও, দেখনা এই মুহাম্মদ (সা.) কিভাবে তোমাকে ফুল বানিয়ে দিলেন।

মুহাম্মদ (সা.) কোন ইতিহাস নয়, বরং সেই ভেতরকার জিনিস, যাকে ধরতে গেলে তুমি নিজেই গলে যাবে। এমন স্থানে যাবে, তুমি আর তো রইবে না সেই তুমি। কোন সেই ইতিহাস। যার মাঝে লেখা সহস্রাব্দের গল্প। বরং গল্পেরা এসে ভর করে বলে, এসো আমায় পবিত্র করে দাও। আল্লাহ তোমায় পাঠিয়েছেন রহমত হিসেবে জগতের জন্য, মানুষের জন্য, কীট-পতঙ্গের জন্য, যারা মানুষ নই অথচ নিজেদের মানুষ বলতে চাই তাদের জন্য। হে মুহাম্মদ (সা.) তুমি কেন মুহাম্মদ (সা.), কারণ তুমি অবতার নও। আমাদের কালিমায় জগতে নেমে এসেছো তুমি। জানিয়েছো জন্মের সঙ্গে পাপের যোগ নেই। তুমি সত্যের সকল আলোতে স্পর্শ দিয়েছ, তাই সত্যে আমার অস্বস্তি নেই।

হে খোদা, তুমি সহায় হও, তুমি-ই পরম। তোমাকে চিনতে আমার কোনো জ্ঞান নেই, বুদ্ধি নেই ও অনুসন্ধান নেই। মুহাম্মদ (সা.) আমাদের বলে দিয়েছেন তোমার কথা– এই কথা তো ঠিক তুমি অনুগ্রহ করেছ, যাতে তোমাকে চিনতে পারি। হায়! আমি চিনলাম কোথায়। আমি তো সাধনায় নেই। আছি ভেদ-বুদ্ধিতে। মুহাম্মদ (সা.)-র সাধনার এই ফজিলত কোটি মানুষ চিনল। চিনলাম কিন্তু ঠিক তেমন নই। আমাদের কাছে সাধনার মূল্য কই!

আল্লাহ তুমি মনের খবর জান। জান বলেই তোমার কাছে প্রার্থনা করি, মুহাম্মদ (সা.)-র জন্য আমাদের শ্রদ্ধাকে প্রাণবান, ফলবান এবং পবিত্র করে দাও।