মহানবী (সা.)কে নিয়ে চলচ্চিত্র
দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : প্রিয় নবীজি হযরত মুহাম্মদ (সা.)কে নিয়ে একটি চলচ্চিত্র মুক্তি পেয়েছিল ১৯৭৬ সালে, পরিচালক ছিলেন সিরীয় বংশোদ্ভূত মুস্তাফা আক্কাদ। চলচ্চিত্রটির আরবী ভার্সনের নাম আল রিসালাহ হলেও ইংরেজি টাইটেল ‘দ্য মেসেঞ্জার’নামেই বেশি পরিচিত। মুক্তির আগে থেকেই চলচ্চিত্রটি প্রচণ্ড আলোচনার জন্ম দেয় এবং মুক্তিপরবর্তী সময়ে আলোচনা-সমালোচনাকে পাশকাটিয়ে সবার মন জয় করে নেয়। হযরত মুহাম্মদ (সা.)কে নিয়ে এ পর্যন্ত ৮-১২টি চলচ্চিত্র মুক্তি পেয়েছে এবং ‘দ্য মেসেঞ্জার’ এদের মধ্যে একমাত্র ফিচার ফিল্ম। বাকি চলচ্চিত্রগুলোর প্রায় সবই ডকুমেন্টারি এবং বিভিন্ন টিভি চ্যানেল কর্তৃক নির্মিত, বিবিসি এদের মধ্যে সর্বাগ্রে। এ ছাড়া বিখ্যাত ইরানী চলচ্চিত্র নির্মাতা মজিদ মাজিদি তাঁকে নিয়ে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন। চলচ্চিত্রটি এ বছর মুক্তি পাবে।
‘মুহাম্মদ : দ্যমেসেঞ্জারঅব গড’ মুভিতে নবীজিহযরত মুহাম্মদ (সা.)’র ইসলামপ্রচারের খণ্ড খণ্ড চিত্রবর্ণিত হয়েছে। নবুয়াত লাভেরপর মক্কার প্রতিকূল পরিস্থিতিতেইসলামপ্রচার, অত্যাচারিত হওয়া, পরবর্তীতেমদিনায় হিজরত এবংমক্কা বিজয়- এ সকল বিষয় ফুটে উঠেছে চলচ্চিত্রটিতে। এ ছাড়াও ইসলামের ইতিহাসে বিখ্যাত বদরের যুদ্ধ এবং ওহুদের যুদ্ধ দেখানো হয়েছে মুভিতে। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে- এ মুভিতে হযরত মুহাম্মদ (সা.)কে কীভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, কিংবা কাহিনী কীভাবে বিবৃত হয়েছে। পরিচালক তার মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন এখানেই। চলচ্চিত্রের কাহিনী এগিয়েছে ঐতিহাসিক চরিত্র হযরত হামযা (রা.)কে নিয়ে যিনি নবীজি (সা.)-এর চাচা ছিলেন, মক্কার কুরাইশদের নেতা আবু সুফিয়ান এবং হামযার কলিজা ভক্ষণকারী হিন্দার বর্ণনা অনুসারে। হামজা চরিত্রে অ্যান্থনি কুইন যিনি এর পূর্বে সেরা পার্শ্বচরিত্রে অভিনয়ের জন্য দুবার অস্কার পুরস্কার জিতে নিয়েছেন। এই তিন চরিত্র ছাড়াও ইসলামের প্রথম মুয়াজ্জিন হযরত বিলাল (রা.), হযরত যায়েদ (রা.), খালিদ বিন ওয়ালিদ, চাচা আবু তালিব এবং আবু লাহাবের চরিত্র উঠে এসেছে।
পুরো চলচ্চিত্রেহযরত মুহাম্মদ (সা.) কিংবাখিলাফতে রাশেদার চারখলিফাকে জনগণের সামনে প্রকাশ করা হয়নি। বস্তুত: ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের বিশ্বাসের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই এমনটি করা হয়েছে। তাদের চরিত্র অন্য কোনো মানুষ উপস্থাপন করতে পারেন না, তাদের গুণাবলী সাধারণ মানুষদের পক্ষে তুলে ধরা সম্ভব নয়। তবে তাদের উপেক্ষা করে তো আর কাহিনী এগিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়, তাই বুদ্ধিমত্তার সাথে তুলে ধরা হয়েছে তাদের কার্যাবলী। নবীজি (সা.)’র বাঁকানো লাঠি আর কোথাও কোথাও উটনীর মাধ্যমে তাকে প্রকাশ করা হয়েছে, কখনো ক্যামেরাকেই নবীজি (সা.) হিসেবে প্রকাশ করা হয়েছে তবে তার কণ্ঠ কিংবা শরীরের কোন অংশ প্রকাশ করা হয়নি। বদর কিংবা ওহুদ যুদ্ধে মূল নেতৃত্ব নবীজি (সা.) দিলেও চলচ্চিত্রে তার পালিত পুত্র হযরত যায়েদ (আ.)কে নেতৃত্বের আসনে দেখানো হয়েছে, যিনি নবীজি (সা.)র নির্দেশানুসারে নেতৃত্ব দিয়েছেন। আবার হযরত আলী(রা.)কে প্রকাশ করার জন্য তার দু’মাথার তরবারি যুলফিকারকে দেখানো হয়েছে।
নির্মাণসময়থেকেইনানা ঘটনা এবংআলোচনারজন্ম দিয়েছে এই মুভি।মুহাম্মদ (সা.)’র চরিত্রকে রূপদেয়া হয়েছে- এরূপ আশঙ্কায় আন্দোলন চলে এবং পরিচালক মুস্তাফা আক্কাদ বিভিন্ন ইসলামী চিন্তাবিদের মাধ্যমে পরিস্থিতি সামাল দেন। আবার মুক্তিপূর্ব সময়ে জিম্মির ঘটনাও ঘটেছে। চলচ্চিত্রটি মরক্কো এবং লিবিয়ায় নির্মিত হয়েছিল, সাড়ে চার মাস সময় নিয়ে মক্কা এবং মদিনাকে তৈরি করা হয়েছে এর জন্য। মুক্তির পর মুভিটি সঙ্গীতে অস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছিল।
প্রসঙ্গত, চলচ্চিত্রটি মিসরের বিখ্যাত লেখক তাওফিক আল হাকিমের ‘মুহাম্মদ’ নাটক অবলম্বনে নির্মিত হয়েছে। নাটকটি রচনার পর সে সময় বেশ বিতর্ক তৈরি হয়। তখন মিছিল মিটিংও হয়েছিল বেশ। পরবর্তীকালে লেখক জনসম্মুখে বিষয়টি ব্যাখ্যা করলে সবাই এটা স্বাভাবিকভাবে মেনে নেন। বর্তমানে গ্রন্থটি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আরবী ভাষা ও সাহিত্য বিভাগে পঠিত হচ্ছে। বাংলাতেও এর অনুবাদ প্রকাশিত হয়েছে। তবে সরাসরি আরবী থেকে নয়। উর্দু থেকে এটি অনুবাদ করেছেন বিশিষ্ট লেখিকা খাদিজা আক্তার রেজায়ী।
দ্য মেসেঞ্জার সম্পর্কে সবচেয়ে নতুন তথ্যটি হলো- অস্কার জোভি নামের পরিচালকমুভিটি রিমেক করার পরিকল্পনা করছেন। নতুনভাবে নির্মিত হলে মুভিটি নতুন এক মাত্রা যোগ করবে এমনটি আশা করা যায়!
২০০২ সালে মুক্তি পাওয়াবহুল আলোচিত এবং জনপ্রিয় ডকুমেন্টারি- `মুহাম্মদ : লিগ্যাসি অব এ প্রফেট’ প্রিয় নবীজি হযরত মুহাম্মদ(সা.)’র জীবনকে পুরোটা তুলে আনার চেষ্টা করেছে। দু’ঘণ্টার এই ডকুমেন্টারিতে নবীজি(সা.)এর আগমনের পূর্ব অবস্থা, এবং আগমনপরবর্তী অবস্থার পরিবর্তন গুরুত্বের সাথে তুলে ধরা হয়েছে। ছবিটির পরিচালক উমর আল কাত্তান, ফিলিস্তিনী পরিবারের সন্তান। অবশ্য তিনি জর্দানে কাটিয়েছেন শৈশব এবং লেবাননের গৃহযুদ্ধের সময় লন্ডনে চলে যান এবং সেখানেই বড় হন। পরবর্তীকালে তিনি তার অতীত আরব জাতীয়তার প্রতি অনুরক্ত হন। ফিলিস্তিনীদের দুর্দশাগ্রস্ত জীবন দুনিয়ার কাছে তুলে ধরার জন্য তিনি চলচ্চিত্রকেই বেছে নেন এবং ইসলামের প্রতি তীব্র অনুরাগ তাকে- লিগ্যাসি অব এ প্রফেট’ নির্মাণে আগ্রহী করে তোলে। নিঃসন্দেহে মুভিটি ইসলামপ্রিয় মানুষের কাছে ইসলামের ইতিহাস তুলে ধরতে সার্থক হয়েছে।
‘মুহাম্মদ : দ্যলাস্টপ্রফেট’ নামে একটি এনিমেশনমুভি হলিউড থেকে মুক্তি পেয়েছে ২০০৪ সালে। এমুভিতেওহযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর পূর্বসময়এবংজীবন সম্পর্কে আলোকপাতকরাহয়েছে। মুভিটিরপরিচালক রিচার্ড ।
নবী করিম(স.)কে নিয়ে চলচ্চিত্রবলতে মোটামুটি এসবই রয়েছে। এছাড়াও আরবনিয়ে নির্মিতহিস্ট্রি চ্যানেলকিংবাবিবিসি কিছু ডকুমেন্টারিতৈরি করেছে, যেখানে হযরত মুহাম্মদ (সা.)এর কথাউঠেএসেছে।
চলচ্চিত্র একটি জনপ্রিয় মাধ্যম হিসেবে গৃহীত হয়েছে তাও শত বছর পার হয়েছে। কিন্তু ইসলামের গৌরবময় ইতিহাস সর্বস্তরের মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়ার এই চেষ্টাটুকু বাকি রয়ে গেছে। অবশ্য এ ব্যাপারে আশার সংবাদও রয়েছে। ২০১২ সালের নভেম্বর মাসে আন্তর্জাতিক দৈনিকগুলোতে এ ধরনের একটি খবর পাওয়া যায়। হযরত মুহাম্মদ (সা.)কে নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মিত হতে যাচ্ছে হলিউডে এমন একটি খবরে জানা যায়, ব্যারি ওসবোর্ন নামের হলিউডের অস্কারজয়ী প্রযোজক নবীজি (সা.)কে নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মান করতে যাচ্ছেন। এ প্রযোজকের একটি বিখ্যাত চলচ্চিত্র সিরিজ হলো ‘লর্ড অব দ্য রিং।’ নতুন এ চলচ্চিত্রের বাজেট ধরা হয়েছে ১৫০ মিলিয়ন ডলার। বিগ বাজেটের মুভিটি খুব আকর্ষণীয় হবে আশা করা যায়। হলিউডে নির্মিত হতে যাচ্ছে বলে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। কারণ এতে উপদেষ্টা হিসেবে মুসলিম স্কলার আল্লামা ইউসুফ কারজাভির থাকার কথা।
(দ্য রিপোর্ট/একেএম/জানুয়ারি ১৪, ২০১৪)