আল কুরআনে বিশ্বনবী (সা.)-এর প্রশংসা
দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সুন্দর পুথিবী গড়ে, তাতে সুন্দর ও প্রিয় সৃষ্টি মানুষ পাঠিয়েছেন। এই মানবজাতির মধ্য হতেই তিনি মানুষকে সৎ পথে চালানোর জন্য দিক-নির্দেশনায় অতি উত্তম ও সুন্দর চরিত্রের মানুষ হিসেবে পৃথিবীতে প্রেরণ করেছেন। তাদের মধ্যে যিনি সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী, তিনিই হলেন সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ও রাসুল ‘মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ্’ সাল্লাল্লাহু আলইহিওয়া সাল্লাম।
যার প্রশংসায় মহান আল্লাহ তা’আলা তাঁর নাম রেখেছেন আহাম্মদ এবং মুহাম্মদ (সা.)। আহাম্মদ হল সর্বধিক প্রশংসাকারী এবং মুহাম্মদ হল প্রশংসিত।
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁর প্রিয় নবী ও রাসূল (সা.)-এর প্রশংসায় পবিত্র কুরআনকে মহা-উজ্জ্বল করেছেন এবং তিনিও তাঁর প্রেমিক মহান আল্লাহর প্রশংসা করে, জগদ্বাসীকে তাঁর পথে আহ্বান করে মানব মুক্তির সুসংবাদ দিয়ে শাস্তির ভয়ও প্রদর্শন করেছেন। ফলে পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ্ তা’আলা তাঁর প্রিয়তম বন্ধু, মানবজাতির মুক্তির দিশারী, আল্লাহর পথে আহ্বানকারীরূপে ভয় প্রদর্শনকারী এবং সুসংবাদ দানকারী ‘মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রশংসা পবিত্র কুরআনে ব্যাপকভাবে আলোচনা করেছেন।
আবু দাউদ শরীফের একখানা হাদিসে এভাবে এসেছে যে, একবার কিছু লোক হযরত আয়েশা (রাঃ)-এর খেদমতে হুজুর (সা.)-এর ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে কিছু বলার জন্য আরজ করলেন। জওয়াবে মা আয়েশা (রা.) তাদের জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমরা কী কুরআন পড় নাই? রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর চরিত্র ছিল জীবন্ত কুরআন।’
তাই আমি মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রশংসায় আল্লাহ তা’আলা যে সব আয়াত বর্ণনা করেছেন, তা এখানে তুলে ধরতে কিছুটা চেষ্টা করলাম।
এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ তা’আলা বলেন, ‘নিশ্চয়ই আপনি এক মহান চরিত্রের অধিকারী।’ (সূরা ক্বালাম : ৪)
‘হে মুহাম্মদ! আমি তোমাকে সমগ্র জগতের জন্য রহমতস্বরূপ পাঠিয়েছি।’ (আম্বিয়া : ১০৭)
‘আমি তো তোমাকে সমগ্র মানবজাতির প্রতি সুসংবাদদাতা ও সর্তককারীরূপে প্রেরণ করেছি, কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা উপলব্ধি করে না।’ (সূরা সাবা : ২৮)
সূরা আল-ইমরানের একশত ঊনষাটতম আয়াতে বলেন, ‘আল্লাহর দয়ায় তুমি তাদের প্রতি দয়ার্দ্র হয়েছিলে; যদি তুমি কঠোরচিত্ত হতে তবে তারা তোমার আশপাশ হতে সরে পড়ত। সুতরাং তুমি তাদের ক্ষমা করো এবং তাদের জন্য ক্ষমা চাও এবং কাজেকর্মে তাদের সঙ্গে পরামর্শ কর এবং তুমি কোনো সংকল্প গ্রহণ করলে আল্লাহর প্রতি নির্ভর করবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তা’আলা নির্ভরশীলদের ভালোবাসেন।’
এ আয়াতে কারিমায় মহান আল্লাহ তা’আলা তাঁর প্রিয় নবী (সাঃ)-এর প্রশংসা করেছেন এ জন্য যে, ‘ওহুদের’ যুদ্ধে কতিপয় লোকের ত্রুটির কারণে প্রিয় নবী (সা.) যুদ্ধে জয়ী হতে পারেননি এবং তিনি গুরুতরভাবে আহত হয়েছিলেন। কিন্তু তিনি তাদের প্রতি কোনো প্রকার অশোভন-আচরণ করেননি এবং তিনি তাদের প্রতি অসন্তুষ্টও হননি। বরং তিনি তাঁর নিজের শরীরের ক্ষত-বিক্ষতের কথাও আল্লাহর রহমতে ভুলে গিয়েছিলেন এবং যারা ‘ওহুদের’ যুদ্ধে ভুল করেছিলেন, তিনি তাদের ক্ষমাও করেছিলেন। এমনই ছিল মহান আল্লাহর রহমতে মহানবীর গুণাবলী।
প্রিয় নবী (সা.)-এর প্রশংসায় মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে নবী! তোমাকে পাঠিয়েছি সাক্ষীরূপে, সুসংবাদাতা ও সতর্ককারীরূপে এবং আল্লাহর আদেশে তাঁর দিকে আহ্বানকারী এবং উজ্জ্বল প্রদীপরূপে। তুমি বিশ্ববাসীদের সুসংবাদ দাও যে, তাদের জন্য আল্লাহর নিকট মহা অনুগ্রহ রয়েছে। এবং তুমি অবিশ্বাসী ও কপটাচারীদের কথা শুনো না; ওদের নির্যাতন উপেক্ষা কর এবং আল্লাহর ওপর নির্ভর কর; কর্মবিদায়করূপে আল্লাই যথেষ্ট।' (সূরা আহযাব : ৪৫-৪৭)
`হে মুহাম্মদ ঘোষণা করে দাও, ওহে মানবজাতি! আমি তোমাদের সকলের প্রতি মহান আল্লাহর রাসূল।' (সূরা আরাফ : ১৫৮)
`তিনি (আল্লাহ) যিনি তাঁর রাসূলকে পথনির্দেশ ও সত্য ধর্মসহ পাঠিয়েছেন, অপর সমস্ত ধর্মের ওপর একে (ইসলাম ধর্মকে) জয়যুক্ত করার জন্যে।' (সূরা ফাতহ্ : ২৮)
`হে নবী! লোকদের বলে দাও। তোমরা যদি প্রকৃতই আল্লাহকে ভালোবাস, তবে আমাকে অনুসরণ কর, তা হলে আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের গুণাহসমূহ মাফ করে দেবেন। তিনি বড় ক্ষমাশীল ও দয়ালু।' (সূরা আল-ইমরান : ৩১)
মহান রাব্বুল আলামীন, তাঁর নবী ও রাসূল হযরত মুহাম্মদ (সা.) সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে যেভাবে প্রশংসা করেছেন, তেমনিভাবে মহান আল্লাহ তা’আলা তাঁর প্রেমিক এবং তাঁর বান্দা ও রাসূল হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মাধ্যমেও তিনি তাঁর নিজের প্রশংসা গ্রহণ করেছেন, যা সারা কুরআনে বিদ্যমান। এখানে সেইসব প্রশংসার কিছু আয়াত বিবৃত করতে সচেষ্ট হলাম।
পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে- `হে নবী! আপনি বলে দিন, আল্লাহ, তিনি এক। আল্লাহ তিনি কারো মুখাপেক্ষী নন। তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং তিনিও কারও থেকে জন্ম নেননি। এবং তাঁর সমতুল্যও কেউই নেই।' (সূরা ইখলাস)
`তিনি আল্লাহ! তিনি ছাড়া আর কোনো উপাস্য নেই (ইলাহ নেই)। তিনি চিরজীবী চিরস্থায়ী। তাঁকে তন্দ্রা বা নিদ্রা স্পর্শ করে না। আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই তাঁর।' (সূরা বাকারা : ২৫৫)
`আপনি ঘোষণা করে দিন, তিনি এক ও একক ইলাহ।' (সূরা আল-আম : ১৯)
`তিনি আল্লাহ! তিনি ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই (উপাস্য নেই)। তাঁরই জন্যে সমস্ত প্রশংসা দুনিয়াও আখিরাতে। শাসন কতৃল্গত্ব ও সার্বভৌমত্ব কেবলমাত্র তাঁরই। এবং তোমরা তাঁরই কাছে ফিরে যাবে।' (সূরা কাছাছ : ৭০)
`তিনি আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোনো উপাস্য নেই; তিনি দৃশ্য ও অদৃশ্যকে জানেন। তিনি দয়াময়, পরম দয়ালু। তিনিই আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোনো উপাস্য নেই। তিনিই একমাত্র বাদশাহ, তিনিই পবিত্র, তিনিই শান্তিদাতা, নিরাপত্তাদাতা, রক্ষক, পরাক্রান্ত, প্রতাপাম্বিত, মহিমাম্বিত; ওরা (মুশরিকরা) যাকে অংশীদার করে আল্লাহ্ তা হতে পবিত্র।' (সূরা হাশর : ২২-২৩)
মহানবী (সা.)-এর আহমদ ও মুহাম্মদ নামের মধ্যেই তাঁর জীবনের সর্বোত্তম আদর্শ ও গুণাবলী বিদ্যমান। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন, `যেমন আমি তোমাদের প্রতি তোমাদেরই মধ্য হতে একজন রাসূল পাঠিয়েছি, যে তোমাদের আমার আয়াত পড়ে শুনায় এবং তোমাদের জীবন পরিশুদ্ধ করে ও উৎকর্ষিত করে, তোমাদের কিতাব (কুরআন) ও হিকমতের শিক্ষা দেয় এবং যে সব কথা তোমাদের অজ্ঞাত, তা তোমাদের জানিয়ে দেয়।' (সূরা বাকারা : ১৫১)
মহান আল্লাহ বলেন, `আল্লাহর রাসূলের (মুহাম্মদের) মধ্যে তোমাদের জন্য উত্তম আদর্শ রয়েছে।' (সূরা আহ্যাব : ২১)
মহনবী (সা.)-এর গুণাবলীর বর্ণনা একমাত্র আল্লাহর দ্বারাই শেষ হতে পারে, মানুষের দ্বারা সম্ভব নয়।
(দ্য রিপোর্ট/একেএম/সা/জানুয়ারি ১৪, ২০১৪)