নতুন সরকার
‘সুশাসন ও অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখার চ্যালেঞ্জ’
বিরোধী দল বিএনপির অংশগ্রহণ ছাড়াই দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। নির্বাচনের পর থেকে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন মহলে সমালোচনার ঝড় ওঠে। এমনকি বিরোধী দলের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নতুন করে নির্বাচনেরও দাবি জানায় বিভিন্ন মহল। এমন সমালোচনার মধ্যেই গত ১২ জানুয়ারি তৃতীয়বারের মত প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনাসহ ৪৯ মন্ত্রী, ১৭ প্রতিমন্ত্রী ও ২ জন উপমন্ত্রী শপথের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে নতুন সরকারের আনুষ্ঠানিকতা। এই সরকারের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে রয়েছে নানামুখি বক্তব্য। কেউ বলছেন সুশাসন প্রতিষ্ঠা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। আবার কেউ বলছেন বিরোধী দল আন্দোলন অব্যাহত রাখলে সরকার দেশ পরিচালনায় ব্যর্থ হবে।
এই বিষয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. আকবর আলি খান বলেন, সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা ও ধারাবাহিকতার জন্য সরকার গঠিত হয়েছে। যদি রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসন করতে না পারে তবে এই সরকারের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে।
রাজনীতি বিশ্লেষক ড. মিজানুর রহমান শেলী বলেন, এই সরকারের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে সুশাসন প্রতিষ্ঠা। যেহেতু বিরোধী দলবিহীন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং বিরোধী দলের আন্দোলনে অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা ব্যাহত হয়েছে। সেক্ষেত্রে মন্ত্রিসভার দূরদর্শিতা ও বিচক্ষণতার পরিচয় দিতে হবে।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ টিআইবির পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে বলা হচ্ছে-সাংবিধানিকভাবে কোনো ধরনের প্রশ্ন ওঠার সুযোগ নেই। তবে যেহেতু জনগণের ম্যান্ডেট নেই সেদিক থেকে প্রশ্ন থেকেই যাবে। এ ছাড়াও নির্বাচনের আগে ও পরে একাধিকবার দাবি করা হয়েছে- একাদশ নির্বাচনের বিষয়ে আলোচনা করা হবে। তার মানে ধরে নেওয়া যায় এ সরকারকে স্বল্পমেয়াদি হিসেবেই বিবেচনা করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে দুটি বিষয় নিশ্চিত করতে হবে। সবার মধ্যে ফলপ্রসূ আলোচনা এবং তা হতে হবে একটি সুনির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে।
সরকারের চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে তিনি বলেন, সরকারের ভাষ্য অনুযায়ী দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করাই বড় চ্যালেঞ্জ। তবে এই সরকারের ক্ষেত্রে জবাবদিহিতার ঝুঁকি থেকেই যাবে। কারণ সংসদে একটি শক্তিশালী বিরোধী দল নেই। এ ছাড়াও সংসদীয় কমিটিগুলোতে বিরোধী দলের অনুপস্থিতি থাকায় এই জবাবদিহিতার ঝুঁকিটা রয়ে যাবে। ফলে জনগণের আস্থাহীনতা কাটিয়ে ওঠার জন্য সরকারের জন্য সব সময় চাপ থাকবে। তাই এই সকল সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠাই হবে সরকারের বড় চ্যালেঞ্জ।
আন্তর্জাতিক চাপের বিষয়ে তিনি বলেন, বিদেশিদের একটি নির্দিষ্ট সীমারেখা থাকে যা তারা কখনোই অতিক্রম করে না। নির্বাচনের আগেও আমরা তাদের অনেক সরব দেখেছি। কিন্তু তা কোনো প্রভাব ফেলেছে বলে মনে হয় না। তবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নিজস্ব পারফর্মেন্সে সর্বোচ্চ কাজ করে যেতে হবে। সেদিক থেকে জনগণের ম্যান্ডেট এবং আস্থা অর্জন করতে পারলে বিদেশিরাও অনুকূলে থাকবে।
(দ্য রিপোর্ট/এইউএ/এইচএসএম/জানুয়ারি ১৪, ২০১৪)