মনোয়ার জাহান চৌধুরী ও তমাল ফেরদৌস, সিলেট : বিলের নাম ‘বাইক্কা’। অতিথি পাখির কলরবে এটি এখন মুখরিত। শীতের শুরু থেকে হাজার হাজার মাইল পথ পাড়ি দিয়ে নানা প্রজাতির পাখির আগমন ঘটেছে এই বিলে।

জল, পাড় ও কোলজুড়ে পাতি সরালি, পানকৌড়ি, শামুক ভাঙা ও কালেমসহ ঝাঁকে ঝাঁকে অতিথি পাখির বিচরণ, ওড়াওড়ি, কিচির-মিচির শব্দ বাইক্কা বিলের রূপ-যৌবন বিমুগ্ধ করে তুলেছে। স্থানীয়দের পাশাপাশি দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ ছুটে আসছেন অপরূপ এই সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে।

কনকনে শীতে এ বিলে পাতি সরালী, ধলা বেলেহাঁস, ল্যাঞ্জা হাঁস, মরচে রং, ভূতি হাঁস, দাগী ঘাসপাখিসহ ৫০ প্রজাতির পাখি এখানে অবস্থান নেয়। ইতোমধ্যে নির্মিত পাখির বাসায় ১০টি বালিহাঁসের বাচ্চা ফুটেছে।

শীতের মাঝামাঝি সময় থেকে এ দৃশ্য দেখা যাবে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। পুরো শীত এখানে কাটিয়ে এক সময় অতিথি পাখিরা পাড়ি দেবে নিজ গন্তব্যে।

সাইবেরিয়া, অস্ট্রেলিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে দল বেঁধে এরা আসে। আবার দল বেঁধেই চলে যায় নিজ দেশে।

বিলের অভয়াশ্রম জুড়ে কচুরিপানা, জলজ উদ্ভিদ, শ্যাওলা, পদ্ম, ঘাস, শাপলা। অতিথিদের জন্য যা অফুরন্ত খাবারের উৎস্য। এ ছাড়াও বিলের পাড়জুড়ে রয়েছে বনজ, ঔষধি ও প্রাকৃতিক ফলজ উদ্ভিদ। ভোজন শেষে রোদ পোহাতে এখানে ব্যস্ত সময় কাটে তাদের।

বিলের মাঝামাঝি অংশে নির্মিত হয়েছে দর্শনার্থী টাওয়ার। তিনতলা এ টাওয়ারে উঠে পাখি দেখাসহ ছবি তোলা, ভিডিও রেকর্ডিং করা যাবে।

মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার হাইল হাওরের মাছ, পাখি, জলজ উদ্ভিদ ও অন্যান্য প্রাণীর সংরক্ষণ এবং প্রবৃদ্ধির উদ্দেশে বাইক্কা বিল অভয়াশ্রমটি প্রতিষ্ঠিত হয় ২০০৩ সালে। বর্ষা মৌসুমে এ হাওরের জলায়তন হয় প্রায় ১৪ হাজার হেক্টর এবং শুষ্ক মৌসুমে হয় প্রায় চার হাজার হেক্টর।

বড়গাঙ্গিনা সম্পদ ব্যবস্থাপনা সংগঠন এই অভয়াশ্রম সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে। এ ছাড়া শ্রীমঙ্গল স্থানীয় সরকার কমিটি পরামর্শ প্রদান ও তদারকি করে থাকে।

সেন্টার ফর ন্যাচারাল রিসোর্স স্টাডিজ (সিএনআরএস), ইউএসএডি ও শেভরণের অর্থায়নে বাইক্কা বিল রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আশপাশের গ্রামগুলোতে সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালিত হয়। এ ছাড়া বাইক্কা বিলের প্রবেশ পথে ইউএসএডির অর্থায়নে ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি ইনফরমেশন সেন্টার কাম ভিজিটর সেন্টার নির্মাণ করা হয়েছে।

একটি দর্শনাথী টাওয়ার, পুরুষ ও মহিলা টয়লেট, দর্শনার্থীদের বসার জন্য বেঞ্চ, দুটি ভিজিটর বোর্ড রয়েছে এখানে। তাই অতিথি পাখির মৌসুমী আবাসে ঘুরে আসতে পারেন যে কেউ।

(দ্য রিপোর্ট/এমজে/এমএআর/জানুয়ারি ১৪, ২০১৪)