বরগুনা সংবাদদাতা : কলেজছাত্র অনিক (১৭) হত্যার এক মাস পেরিয়ে গেলেও তদন্তে কোনো অগ্রগতি হয়নি। হত্যার প্রকৃত কারণ ও আসামির সংখ্যা এখনও জানা যায়নি। সন্তান হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন মা-বাবা। আসামিদের হুমকিতে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন তারা।

অনিকের বাবা সুবল চন্দ্র রায় জানান, অনিক বরগুনা টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণীর ছাত্র ছিল। ১৯ সেপ্টেম্বর বিকেল ৫টার দিকে সে বাজারে যাওয়ার কথা বলে বাসা থেকে বের হয়ে আর ফেরেনি। সব জায়গায় খুঁজেও তাকে আর পাওয়া যায়নি। পরদিন অনিককে অপহরণ করা হয়েছে বলে তার ব্যবহৃত মোবাইলে (০১৭২৮১৯৫৯১৭) অপরিচিত একটি নম্বর (০১৮৫৭৬৫৮৮৫৯) থেকে এক ব্যক্তি ফোন করে তিন লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। দাবিকৃত টাকা নিয়ে বরগুনার পুরাকাটা এলাকায় না এলে অনিককে খুন করার হুমকি দেওয়া হয়। এ ঘটনা উল্লেখ করে ২০ সেপ্টেম্বর বরগুনা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন তিনি।

সুবল রায় আরো জানান, অনিক হত্যার পর থেকেই প্রভাবশালী কিছু ব্যক্তি ঘটনাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে তার পরিবার মারাত্মক মানসিক চাপের মধ্যে রয়েছে। তিনি এখন তার ছোট ছেলে অমিতের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত।

বরগুনা থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) পুলক চন্দ্র রায় জানান, সাধারণ ডায়েরির সূত্র ধরে মোবাইল ট্রাকিংয়ের মাধ্যমে ১ অক্টোবর থানাপাড়ার সোহেল খান ও রুবেলকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে ৪ অক্টোবর অনিকের ব্যবহৃত মোবাইলসহ গৌরীচন্না থেকে গ্রেফতার করা হয় নাজমুল হোসেন নামের আরেকজনকে। একই প্রক্রিয়ায় ৫ অক্টোবর থানাপাড়ার সালাহ উদ্দিনকে গ্রেফতার করা হয়। সে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে অনিককে হত্যা করা হয়েছে বলে জানায়।

সালাহ উদ্দিনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ওই দিন গভীর রাতে জেলা সাবরেজিস্ট্রি অফিসের সেপটিক ট্যাঙ্ক থেকে অনিকের গলিত মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। পরে ৬ অক্টোবর অনিক হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে থানাপাড়ার বাদল কৃষ্ণ রায় ও ডিকেপি সড়কের হৃদয় আহসানকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বরগুনা থানার উপ-পরিদর্শক মো. ইলিয়াস হোসেন জানান, অনিক হত্যার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে এ পর্যন্ত ছয়জনকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতরা সবাই অনিকের পরিচিত। তাদের মধ্যে সালাহ উদ্দিন হত্যার কথা স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।

তিনি বলেন, সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে মামলাটির তদন্ত করা হচ্ছে। খুনের প্রকৃত কারণ ও হত্যাকারীর সংখ্যা জানার জন্য গ্রেফতারকৃতদের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এছাড়া, আইনগত বাধ্যবাধকতার কারণে খুনের প্রকৃত ধরন জানতে কিছু আলামত ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট পাওয়া গেলে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

জানা গেছে, আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে সালাহ উদ্দিন হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছেন।সে ব্যবসা করার জন্য অনিকের প্রতিবেশী বাদল কৃষ্ণ রায়ে কাছে ১০ হাজার টাকা ধার চান। বাদল অনিককে খুন করতে পারলে তাকে এক লাখ টাকা দেওয়ার প্রস্তাব করে। একই প্রস্তাব সালাহ উদ্দিনের কথিত বন্ধু হৃদয় আহসানকেও দেয় বাদল।

টাকার লোভে সালাহ উদ্দিন ও হৃদয় অনিককে হত্যার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৯ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ৮টার দিকে তারা অনিককে নিয়ে জেলা সাবরেজিস্ট্রি অফিসের ভেতরে যায়। সেখানে বসে তারা মদ পান করে। কৌশলে অধিক মদ পান করিয়ে অনিককে দুর্বল করে সালাহ উদ্দিন ও হৃদয় তার গলায় তার পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। পরে মৃতদেহ সাবরেজিস্ট্রি অফিসের সেপটিক ট্যাঙ্কের ভেতরে ফেলে দেয়।

বরগুনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জাহাঙ্গীর আলম এ প্রসঙ্গে বলেন, অনিক হত্যাকাণ্ডের তদন্তে অনেক অগ্রগতি হয়েছে। এখন প্রাপ্ত তথ্য যাচাই-বাছাই করে প্রকৃত বিষয় বের করা হবে।

(দিরিপোর্ট২৪/এফএস/এএস/এমএআর/অক্টোবর ৩০, ২০১৩)